আন্তর্জাতিক, ইউরোপ, স্বাস্থ্য

৬ ঘণ্টা হৃদপিণ্ড বন্ধ থাকার পরেও বেঁচে উঠেছেন তিনি

কাজী শাহরিন হক

ডিবিসি নিউজ

শনিবার ৭ই ডিসেম্বর ২০১৯ ০৩:০৫:১৩ অপরাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

ছয় ঘন্টা ধরে হৃদযন্ত্রের স্পন্দন বন্ধ হয়ে থাকার পরেও কেউ আবার বেঁচে উঠেছে এমন ঘটনা খুবই বিরল ও বিস্ময়কর ঘটনা বলে অ্যাখ্যায়িত করেছেন ডাক্তাররা।

ঘটনাটি ঘটে স্পেনের বার্সেলোনায়। বার্সেলোনাবাসী অড্রে স্কুম্যান স্পেনের পাইরেনিস পার্বত্য এলাকায় এলাকায় বেড়াতে গিয়েছেলেন তার স্বামীর সঙ্গে। সেখানে তারা তুষার ঝড়ের কবলে পড়েন।

অড্রে স্কুম্যান এরপর মারাত্মক হাইপোথারমিয়ায় আক্রান্ত হন। তার হাঁটতে-চলতে অসুবিধা হচ্ছিল। তিনি অচেতন হয়ে পড়ে যান এবং তার হৃদযন্ত্র একদম বন্ধ হয়ে যায়। তার কোন হৃদস্পন্দনই পাওয়া যাচ্ছিল না।

অড্রে স্কুম্যানের স্বামী রোহানের ধারণা ছিল তার স্ত্রী মারা গেছেন।  ইমার্জেন্সি সার্ভিসের জন্য যখন অপেক্ষা করছিলেন, তখন তার স্ত্রীর পালস পাচ্ছিলেন না তিনি।  তার স্ত্রী শ্বাস নিচ্ছেন বলেও মনে হচ্ছিল না, হৃদস্পন্দনও বন্ধ ছিল।

দু’ঘন্টা পর যখন উদ্ধারকর্মীরা এসে পৌঁছায়, মিসেস স্কুম্যানের শরীরের তাপমাত্রা নেমে গেছে ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। উদ্ধার কর্মীরা তাকে বার্সেলোনার এক হাসপাতালে নিয়ে যান।  বেঁচে থাকার কোনো লক্ষণই পাওয়া যাচ্ছিলো না অড্রের শরীরে।

হাসপাতালের ডাক্তার এডুয়ার্ড আরগুডো এক বিবৃতিতে বলেন, হাসপাতালে আনার পর তাকে দেখে মনে হচ্ছিল তিনি মারা গেছেন।

"তবে তিনি যেহেতু হাইপোথার্মিয়ায় আক্রান্ত ছিলেন, আমাদের মনে হচ্ছিল অড্রের বেঁচে ওঠার একটা সম্ভাবনা আছে।"

ড. আরগুডো বলেন, অড্রে স্কুম্যান যখন অচেতন হয়ে পড়েছিলেন তখন হাইপোথার্মিয়াই তার শরীর এবং মস্তিস্ককে রক্ষা করেছিল।  যদিও এই হাইপোথার্মিয়াই তাকে প্রায় মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তেও নিয়ে গিয়েছিল।

"যদি স্বাভাবিক তাপমাত্রায় এত দীর্ঘ সময় তার হৃদযন্ত্র বন্ধ থাকতো, তাহলে কিন্তু তিনি মারা যেতেন।"

অড্রে স্কুম্যানকে হাসপাতালে আনার পর ডাক্তাররা একটি বিশেষ মেশিন ব্যবহার করে তার শরীরের রক্ত বের করে এনে তাতে অক্সিজেন সঞ্চালন করেন।  এরপর সেই রক্ত আবার তার শরীরে ফিরিয়ে দেয়া হয়।

তার শরীরের তাপমাত্রা যখন ৩০ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছায় তখন ডাক্তাররা একটি 'ডিফিব্রিলেটর' ব্যবহার করে হৃদপিণ্ড চালু করতে সক্ষম হন।  তবে ততক্ষণে প্রায় ছয় ঘন্টা সময় পেরিয়ে গেছে।

মিসেস স্কুম্যানকে ১২ দিন পর হাসপাতাল থেকে ছাড়া হয়।  তিনি এখন সুস্থ, তবে হাইপোথার্মিয়ার কারণে তার চলাফেরায় হাতের অনুভূতিতে কিছু সমস্যা রয়ে গেছে।

ডাক্তার আরগুডো বলেন, মিসেস স্কুম্যানের কিছু স্নায়বিক ক্ষতি হয়ে যায় কি না সেটা নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন ছিলেন। তবে যেভাবে অড্রে সুস্থ হয়ে উঠলেন, সেটাকে অস্বাভাবিক ঘটনা বলে বর্ণনা করছেন তিনি।

"কারও হদযন্ত্র এতো দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকার পর আবার চালু হওয়ার এরকম ঘটনা আর নেই।"

মিসেস স্কুম্যান সুস্থ হয়ে উঠার পর জানান, যে ছয় ঘন্টা তার হৃদযন্ত্র কাজ করেনি, সে সময়ের কোনো স্মৃতি তার নেই।

"হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে যখন আমি জেগে উঠি, তখন আমি জানতাম না আগের এক বা দুদিন ধরে কী হচ্ছিল।''

মিসেস স্কুম্যান এখন হাইপোথারমিয়ার ব্যাপারে পড়াশোনা করে বুঝতে পারছেন, তার বেঁচে উঠার ঘটনাটা কীরকম অবিশ্বাস্য।

তিনি হাসপাতালের ডাক্তারদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেছেন, "এটা একটা দৈব ঘটনা, তবে ডাক্তারদের কারণেই আমি বেঁচে গেছি।"

সূত্র: বিবিসি

 

আরও পড়ুন