বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে ১৬ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার নিষিদ্ধ করে তৈরি ঐতিহাসিক আইন কার্যকর করেছে অস্ট্রেলিয়া। বুধবার (১০ই ডিসেম্বর) মধ্যরাত থেকে (স্থানীয় সময়) এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়। নতুন এই আইনের ফলে ফেসবুক, টিকটক ও ইনস্টাগ্রামসহ বিশ্বের প্রধান ১০টি প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতে পারবে না দেশটির শিশুরা।
আইনে বলা হয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানিগুলো যদি অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থানরত ১৬ বছরের কম বয়সী ব্যবহারকারীদের অ্যাকাউন্ট শনাক্ত ও বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়, তবে তাদের ৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার (প্রায় ৩৯৬ কোটি টাকা) পর্যন্ত জরিমানা গুণতে হবে।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ বলেছেন, শিশুদের ‘প্রিডাটরি অ্যালগরিদম’ বা ক্ষতিকর অ্যালগরিদম থেকে রক্ষা করতেই এই নজিরবিহীন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, "সোশ্যাল মিডিয়া প্রায়ই বুলিংয়ের হাতিয়ার, মানসিক উদ্বেগের চালক এবং স্ক্যামার ও অনলাইন অপরাধীদের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তাই শিশুদের রক্ষায় এই পদক্ষেপ জরুরি ছিল।"
নতুন এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা প্ল্যাটফর্মগুলোর মধ্যে রয়েছে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব, টিকটক, স্ন্যাপচ্যাট, রেডডিট, এক্স (সাবেক টুইটার), থ্রেডস এবং স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম কিক ও টুইচ। তবে রোবলক্স, পিনটারেস্ট এবং হোয়াটসঅ্যাপের মতো অ্যাপগুলো আপাতত এই নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকছে। সরকার জানিয়েছে, এই তালিকা নিয়মিত পর্যালোচনা করা হবে।
ব্যবহারকারীর বয়স ১৬ বছরের বেশি কি না, তা নিশ্চিত করার সম্পূর্ণ দায়ভার সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানিগুলোর ওপর বর্তাবে। এজন্য ফেসিয়াল রিকগনিশন, সরকারি আইডি আপলোড বা এআই প্রযুক্তির মাধ্যমে বয়স যাচাই করা হবে।
মেটা, ইউটিউব এবং রেডডিটের মতো প্রযুক্তি জায়ান্টরা এই আইনের সমালোচনা করেছে। ইউটিউব জানিয়েছে, তড়িঘড়ি করে করা এই আইন শিশুদের ইন্টারনেটের আরও অন্ধকার ও বিপজ্জনক অংশে ঠেলে দিতে পারে। রেডডিট জানিয়েছে, তারা এই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে যেতে পারে। তবে অভিভাবক ও শিশু অধিকার কর্মীরা সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন।
অস্ট্রেলিয়ার এই নতুন আইনটি বিশ্বজুড়ে গভীর মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। মালয়েশিয়া জানিয়েছে, তারা আগামী বছর একই ধরনের নিষেধাজ্ঞা চালুর পরিকল্পনা করছে। এছাড়া ডেনমার্ক, ফ্রান্স এবং যুক্তরাষ্ট্রের কিছু অঙ্গরাজ্যও অনুরূপ ব্যবস্থা গ্রহণের কথা ভাবছে।
সূত্র: আল জাজিরা
ডিবিসি/পিআরএএন