আন্তর্জাতিক, এশিয়া

অস্ট্রেলিয়া কোনো সংঘাতে আগাম সেনা মোতায়েনের প্রতিশ্রুতি দেবে না

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ডিবিসি নিউজ

রবিবার ১৩ই জুলাই ২০২৫ ০৩:১৪:০৭ অপরাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

যেকোনো ভবিষ্যৎ সংঘাতে অস্ট্রেলিয়া আগাম সৈন্য মোতায়েনের প্রতিশ্রুতি দেবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন দেশটির প্রতিরক্ষা শিল্পমন্ত্রী প্যাট কনরয়। সম্প্রতি ফিনান্সিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয় যে, তাইওয়ান নিয়ে চীনের সঙ্গে আমেরিকার সম্ভাব্য যুদ্ধে অস্ট্রেলিয়ার ভূমিকা কী হবে, তা স্পষ্ট করার জন্য পেন্টাগন তার মিত্র দেশটিকে ক্রমাগত চাপ দিয়ে আসছে। এই প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় রবিবার অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কনরয় এই অবস্থান স্পষ্ট করেন।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, অস্ট্রেলিয়া তার সার্বভৌমত্বকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয় এবং "আমরা আনুমানিক বা কাল্পনিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করি না।" তিনি আরও বলেন, "যেকোনো সংঘাতে অস্ট্রেলিয়ান সৈন্য পাঠানোর সিদ্ধান্ত বর্তমান সরকার নেবে, কোনো আগাম প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে নয়, বরং সেই সময়ের পরিস্থিতি বিবেচনা করে সরকারই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।"

 

ফিনান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের পলিসি আন্ডার সেক্রেটারি এলব্রিজ কোলবি, তাইওয়ান সংঘাতে অস্ট্রেলিয়া ও জাপানের ভূমিকা কী হবে তা জানতে দেশ দুটির কর্মকর্তাদের উপর চাপ প্রয়োগ করছেন। যদিও আমেরিকা নিজেও তাইওয়ানকে রক্ষা করার জন্য কোনো নিঃশর্ত নিশ্চয়তা দেয় না। কোলবি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম 'এক্স'-এ পোস্ট করে জানান যে, প্রতিরক্ষা দপ্তর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের "আমেরিকা ফার্স্ট" এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে, যার মধ্যে মিত্রদের প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধি এবং সম্মিলিত প্রতিরক্ষায় আরও জোরালো ভূমিকা রাখার জন্য উৎসাহিত করাও অন্তর্ভুক্ত।

 

গণতান্ত্রিকভাবে শাসিত তাইওয়ানকে চীন তার নিজের অংশ বলে দাবি করে এবং প্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগ করে দ্বীপটিকে নিয়ন্ত্রণে আনার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়নি। অন্যদিকে, তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং তে চীনের সার্বভৌমত্বের দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, শুধুমাত্র তাইওয়ানের জনগণই তাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে পারে।

 

এই উত্তেজনার মধ্যেই অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ বর্তমানে ছয় দিনের সফরে চীনে রয়েছেন। সাংহাইতে তিনি বলেন, ক্যানবেরা তাইওয়ানের বর্তমান স্থিতাবস্থার কোনো পরিবর্তন চায় না। তার এই সফরে নিরাপত্তা ও বাণিজ্য প্রাধান্য পাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

প্রতিরক্ষা শিল্পমন্ত্রী কনরয় চীনের পারমাণবিক ও প্রচলিত অস্ত্রের ব্যাপক সামরিকায়ন নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার উদ্বেগের কথা জানান। তিনি বলেন, অস্ট্রেলিয়া একটি ভারসাম্যপূর্ণ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল চায়, যেখানে কোনো একটি দেশ একক আধিপত্য বিস্তার করবে না। তিনি আরও উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন যে, চীন প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে একটি সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের চেষ্টা করছে, যা অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী।

 

রবিবার সিডনি হারবারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার বৃহত্তম যুদ্ধাভ্যাস 'তালিসমান সেবার' (Talisman Sabre) শুরু হয়েছে। এতে অস্ট্রেলিয়া ও আমেরিকা ছাড়াও জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং কানাডাসহ মোট ১৯টি দেশের প্রায় ৪০,০০০ সৈন্য অংশ নিচ্ছে।

 

প্রাক্তন পাইলট এবং বাকিংহামশায়ার নিউ ইউনিভার্সিটির সিনিয়র লেকচারার মার্কো চ্যান মনে করেন, এই মহড়াটি যেকোনো সংঘাতের জন্য প্রস্তুতির চেয়েও বড় একটি বার্তা বহন করে।

 

কনরয় বলেন, অতীতের মতোই এবারও চীনের নৌবাহিনী তথ্য সংগ্রহের জন্য এই মহড়ার ওপর নজর রাখতে পারে। অস্ট্রেলিয়ান ডিফেন্স ফোর্সের জয়েন্ট অপারেশন্সের প্রধান ভাইস অ্যাডমিরাল জাস্টিন জোন্স জানিয়েছেন, এই দুই সপ্তাহব্যাপী মহড়াটি অস্ট্রেলিয়ার ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চল ক্রিসমাস আইল্যান্ড থেকে পূর্ব উপকূলের কোরাল সাগর পর্যন্ত হাজার হাজার কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত থাকবে, যা যৌথ যুদ্ধ পরিচালনার একটি মহড়া।

 

মার্কিন সেনাবাহিনীর প্যাসিফিকের ডেপুটি কমান্ডিং জেনারেল লেফটেন্যান্ট জেনারেল জোয়েল ভাওয়েল বলেন, "তালিসমান সেবার আমাদের সামরিক বাহিনীকে একসঙ্গে যেকোনো প্রতিক্রিয়ার জন্য প্রস্তুত করে তুলবে এবং এটি একটি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা, কারণ আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য যুদ্ধ এড়ানো।"

 

আমেরিকা অস্ট্রেলিয়ার প্রধান নিরাপত্তা সহযোগী। যদিও অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে কোনো স্থায়ী বিদেশী সামরিক ঘাঁটি নেই, তবে মার্কিন সামরিক বাহিনী অস্ট্রেলিয়ার ঘাঁটিগুলিতে তাদের ঘূর্ণায়মান উপস্থিতি এবং জ্বালানি ভান্ডার সম্প্রসারিত করছে। ২০২৭ সাল থেকে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার ঘাঁটিতে মার্কিন ভার্জিনিয়া-শ্রেণীর সাবমেরিন নোঙর করবে, যা বিশ্লেষকদের মতে, তাইওয়ান নিয়ে যেকোনো সংঘাতে মার্কিন বাহিনীকে সমর্থন করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তথ্যসূত্র: রয়টার্স

 

ডিবিসি/জেআরওয়াই
 

আরও পড়ুন