তথ্যপ্রযুক্তির উৎকর্ষতার এই যুগের আগে মানুষের ভেতর এতটা আত্মীয়-বিচ্ছিন্নতা ছিল না। বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানে বছরজুড়েই চলত আত্মীয়-স্বজনের যাওয়া-আসা। গ্রীষ্মের আম-কাঁঠালের ছুটিতে নানা-দাদাবাড়ি যাওয়া, শীতে পিঠাপুলির আয়োজন। জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে, ঈদ, পূজা–পার্বণে আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে দেখা-সাক্ষাতের ক্ষেত্রে উপলক্ষ্যে শেষ ছিল না। সেই দিনগুলো হঠাৎ কোথায় যেন হারিয়ে গেল।
মানুষের ভেতর একটা প্রচণ্ড মনোজাগতিক পরিবর্তন ঘটে গেল। আত্মীয়দের সঙ্গে আত্মিক যোগাযোগ কমে গেল। পাল্লা দিয়ে বেড়ে গেল একটা অদৃশ্য বায়বীয় যোগাযোগ।
যেখানে একটা চিঠির জন্য মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হতো, কোনো স্বজনের একটুখানি খোঁজ-খবর পেতে কেটে যেত বহুদিন, সেখানে সেকেন্ডের পরিমাপে নেমে এল সব। জন্ম-মৃত্যুর খবর, কে কী করছে না করছে—মুহূর্তেই পাওয়া যায় আত্মীয়–পরিজনের যাবতীয় সমাচার। এ জন্য অবশ্য তথ্যপ্রযুক্তির কাছে শর্তহীন কৃতজ্ঞতা। এই তুমুল ব্যস্ততার যুগে যেভাবে হোক অন্তত সবাইকে ধরে-বেঁধে রেখেছে।
মহাকালের নিয়ম শুধু সামনে এগিয়ে যাওয়া। তবে আজ অনায়াসে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে যেতে পারেন। কারণ, আজ ১৮ মে, ভিজিট ইয়োর রিলেটিভস ডে।
আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া বাঙালি সমাজের বিশেষ সংস্কৃতি। বিশেষ করে সারা বছর যাদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ হয় না, ঈদের সময় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয় এবং তারা পরস্পরের বাড়িতে বেড়াতে আসে। এছাড়াও গ্রীষ্মের বন্ধে সন্তানদের নিয়েও যাওয়া হয় নানাজনের বাড়িতে। এর মাধ্যমে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা পায় এবং একে অন্যের দুঃখের অংশীদার হয়।
হলিডে ক্যালেন্ডারের তথ্যানুযায়ী, ১৯৬০-এর দশকে আমেরিকায় দিনটির প্রচলন শুরু হয়। তবে করোনা মহামারির সময় এটি দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। এই মহামারিকাল মানুষকে আত্মীয়-স্বজনের কাছাকাছি থাকার প্রয়োজনীয়তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।
পারিবারিকভাবে দিনটি পালন করতে পারেন। পরিবারের সবাই মিলে আজ একসঙ্গে কোনো আত্মীয়বাড়ি যান। যারা দূরে থাকেন, তারা ফিরতে পারেন নিজের বাড়িতে। যাদের পক্ষে সরাসরি দেখা-সাক্ষাৎ নেহাতই সম্ভব নয়, তারা নিদেনপক্ষে মুঠোফোন, খুদে বার্তা বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হলেও যোগাযোগ করুন।
তবে যতই কাছের মানুষ হোক না কেন, বিনা নিমন্ত্রণে ও না জানিয়ে অন্যের বাড়িতে হাজির হওয়া ভালো দেখায় না। তাই রওনা দেওয়ার আগে জানিয়ে যাওয়া ভালো। তা না হলে অপ্রস্তুত অবস্থায় পড়তে পারেন। সঙ্গে অন্য বন্ধু, পোষা প্রাণী, শিশু নিয়ে গেলে সেটিও জানান।
আতিথ্য গ্রহণের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার অন্যতম উপায় হলো উপহার। সেটা সবসময় দামি হতে হবে এমন কোনো কথা নেই। মনে রাখতে হবে বেড়াতে গেলে নিজের স্বাচ্ছন্দ্যের চেয়ে ওই বাড়ির সদস্যদের পছন্দ-অপছন্দকে প্রাধান্য দিতে হবে।
সূত্র: ডেইজ অব দ্য ইয়ার
ডিবিসি/আরপিকে