ধর্ম, ইসলাম

আজ পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)

ডেস্ক নিউজ

ডিবিসি নিউজ

শনিবার ৬ই সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৭:০৫:৫৪ পূর্বাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

আজ শনিবার, ১২ রবিউল আউয়াল। মানবজাতির মুক্তির দিশারী ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্ম ও ওফাত দিবস। ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও উত্সাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে সারা বিশ্বের মুসলিমদের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)। এটি মুসলিম উম্মাহর জন্য এক আনন্দময় দিন। এই দিনে বিভিন্ন ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে।

আজ থেকে প্রায় সাড়ে ১৪০০ বছর আগে, ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের সুবহে সাদেকের সময়, আইয়্যামে জাহেলিয়তের ঘোর অন্ধকারে নিমজ্জিত জাজিরাতুল আরবের মক্কা নগরীতে সম্ভ্রান্ত কুরাইশ বংশে মা আমেনার কোল আলোকিত করে জন্মগ্রহণ করেন 'ত্রিভুবনের প্রিয় মোহাম্মদ'। জন্মের আগেই পিতাকে হারানো এবং অল্প বয়সে মাতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত এই মহামানব চাচা আবু তালিবের আশ্রয়ে অনেক প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে বড় হয়ে ওঠেন। ৪০ বছর বয়সে তিনি মহান আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে নবুওয়তের দায়িত্ব লাভ করেন এবং অসভ্য, বর্বর ও পথহারা মানবজাতিকে তাওহিদের (একত্ববাদ) বাণী শোনান।

 

নবীজির দাওয়াত শুরুতে অসভ্য আরবরা গ্রহণ করেনি, বরং তাঁর ওপর নিপীড়ন শুরু করে। একের পর এক ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও মহান আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে তিনি বিশ্বজুড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যান। ধীরে ধীরে সত্য-সন্ধানী মানুষ তাঁর অনুসারী হতে থাকে। কাফেরদের ষড়যন্ত্র প্রবল আকার ধারণ করলে তিনি আল্লাহর নির্দেশে জন্মভূমি মক্কা ছেড়ে মদিনায় হিজরত করেন। সেখানে তিনি ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন এবং 'মদিনা সনদ' নামে বিশ্বের প্রথম লিখিত সংবিধান প্রণয়ন করেন। এই সংবিধানে ইহুদি, খ্রিস্টান, মুসলমানসহ সকল ধর্মাবলম্বীর অধিকার সমানভাবে নিশ্চিত করা হয়। দীর্ঘ ২৩ বছরের অক্লান্ত শ্রম আর অসীম সাধনায় নবীজি ইসলাম প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বিজয় অর্জন করেন, যা মক্কা বিজয়ের মাধ্যমে পূর্ণতা লাভ করে।

 

বিদায় হজের ভাষণে তিনি মানবজাতিকে আল্লাহর বাণী শোনান: 'আজ থেকে তোমাদের জন্য তোমাদের দিন তথা জীবনব্যবস্থাকে পরিপূর্ণ করে দেওয়া হলো। তোমাদের জন্য জীবনব্যবস্থা হিসেবে একমাত্র ইসলামকে মনোনীত করা হয়েছে।' হযরত মুহাম্মদ (সা.) শুধু মুসলিমদের কাছেই নয়, অন্য ধর্মাবলম্বীদের কাছেও এক অতুলনীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে স্বীকৃত। বিখ্যাত খ্রিস্টান পণ্ডিত মাইকেল এইচ. হার্ট তাঁর 'দ্য হান্ড্রেড' গ্রন্থে তাঁকে 'সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ' হিসেবে স্থান দিয়েছেন। ব্রিটিশ সাহিত্যিক জর্জ বার্নার্ড শ বলেছেন, এই অশান্ত পৃথিবীতে তাঁর মতো একজন মানুষের প্রয়োজন। তিনি বেঁচে থাকলে পৃথিবীজুড়ে সুখের সুবাতাস বইত।

 

যদিও নবীজি (সা.)-এর জন্ম ও ওফাত একই দিনে বলে কথিত আছে, তবে তারিখ ও সময় নিয়ে বিভিন্ন মতভেদ রয়েছে। অধিকাংশ হাদিস বিশেষজ্ঞ ও জীবনীকার একমত যে তাঁর জন্ম রবিউল আউয়াল মাসের কোনো এক সোমবার হয়েছে। কেউ কেউ ২, ৮, ১০ অথবা ১২ রবিউল আউয়ালের কথা বলেছেন। ইবনে ইসহাক ১২ রবিউল আউয়ালের কথা উল্লেখ করেছেন, যা প্রসিদ্ধ মত। অন্যদিকে, আধুনিক যুগে রচিত 'আর-রহিকুল মাকতুম' গ্রন্থে ৯ রবিউল আউয়াল সোমবার সকালে তাঁর জন্ম হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে মতভেদ থাকলেও বিশ্ব মুসলিম প্রতি বছর ১২ রবিউল আউয়ালকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন হিসেবে পালন করে।

 

'ঈদ' শব্দের অর্থ আনন্দ, আর 'মিলাদ' শব্দের অর্থ জন্ম। এই দিনে আনন্দঘন পরিবেশে নবীজি (সা.)-এর জন্মদিন উপলক্ষে বিভিন্ন ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করে। এর মধ্যে সিরাতুন্নবী (সা.)-এর ওপর আলোচনা, সেমিনার, মিলাদ মাহফিল, দরুদ পাঠ, এবং দান-সদকা অন্যতম। এই দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনসহ বিভিন্ন টিভি চ্যানেল বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করছে এবং জাতীয় দৈনিকগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। আজ সরকারি ছুটির দিন, যার কারণে সংবাদপত্রসমূহ ছুটি পালন করছে এবং আগামীকাল প্রকাশিত হবে না। পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন।

 

ডিবিসি/এমইউএ

আরও পড়ুন