আজ ২২ ডিসেম্বর। পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধে আজ দিনের দৈর্ঘ্য হবে সবচেয়ে ছোট। অর্থাৎ বাংলাদেশও আজ বছরের সবচেয়ে ছোট দিনটা দেখছে। কিন্তু, দক্ষিণ গোলার্ধে আজ দীর্ঘতম দিন।
এদিকে বছরের দীর্ঘতম রাত কাটিয়ে আপনি এখন ক্ষুদ্রতম দিন অতিবাহিত করছেন। রাজধানী ঢাকায় আজ সূর্যোদয় হয়েছে সকাল ৬টা ৩৭ মিনিটে এবং অস্ত যাবে বিকেল ৫টা ১৭ মিনিটে।
২১ ডিসেম্বর সূর্য মকরক্রান্তি রেখার ওপর অবস্থান করায় এবং উত্তর মেরু সূর্য থেকে কিছুটা দূরে হেলে থাকায় উত্তর গোলার্ধে দীর্ঘতম রাত্রি ও ক্ষুদ্রতম দিন হয়ে থাকে।
কারণ হলো, সূর্য আজ বিষুবরেখার সাড়ে তেইশ ডিগ্রি দক্ষিণে মকরক্রান্তি রেখার (Tropic of Capricorn) ওপর সরাসরি অবস্থান করছে। বার্ষিক সৌর পরিক্রমায় সূর্যের দক্ষিণমুখী যাত্রা এখানেই এসে আজ শেষ হবে।
তারপর শুরু হবে সূর্যের উত্তরমুখী যাত্রা। উত্তর গোলার্ধে দিনের দৈর্ঘ্য এরপর ধীরে ধীরে বড় হবে।
কিন্তু দক্ষিণ গোলার্ধে দিনের দৈর্ঘ্য ছোট হতে থাকবে। বিষুব রেখার সাড়ে তেইশ ডিগ্রি উত্তরে কর্কটক্রান্তি রেখায় (Tropic of Cancer) এসে সূর্যের উত্তরমুখী যাত্রা শেষ হবে আগামী বছরের ২১ জুন। এই দিন সূর্য কর্কটক্রান্তির উপর সরাসরি অবস্থান করবে। এই দিন হবে উত্তর গোলার্ধের সবচেয়ে বড় দিন, কিন্তু দক্ষিণ গোলার্ধের সবচেয়ে ছোট দিন।
তারপর আবার শুরু হবে সূর্যের দক্ষিণমুখী যাত্রা। পৃথিবীর আকাশে সূর্যের উত্তর এবং দক্ষিণমুখী যাত্রা অনাদিকাল থেকেই এভাবেই চলে আসছে।
বিষুব রেখার সাড়ে তেইশ ডিগ্রি উত্তরে এবং দক্ষিণে সূর্যের দূরতম অবস্থানকে বলে অয়ন। এর ইংরেজি নাম হলো Solstice। বছরে দু’বার অয়ন ঘটে। উত্তর গোলার্ধে ডিসেম্বর মাসের ২১ অথবা ২২ তারিখে হয় দক্ষিণায়ন (winter solstice) এবং জুন মাসের ২০ অথবা ২১ তারিখে হয় উত্তরায়ন (summer solstice)।
মজার ব্যাপার হলো, দক্ষিণ গোলার্ধে ঠিক এর উল্টোটাই ঘটে। দক্ষিণ গোলার্ধে দক্ষিণায়নকে ঘিরে গ্রীষ্মকাল এবং উত্তরায়নকে ঘিরে শীতকাল আবর্তিত হয়।
দক্ষিণ গোলার্ধে অস্ট্রেলিয়ায় ডিসেম্বর মাসে এখন গ্রীষ্মকাল। কিন্তু উত্তর গোলার্ধে বাংলাদেশে ডিসেম্বর মাসে এখন শীতকাল চলছে।
মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির কেন্দ্রকে ঘিরে সূর্যের নিজস্ব গতি রয়েছে। কিন্তু সেটা ঋতু পরিবর্তনে প্রভাব ফেলে না। সৌরজগতের কেন্দ্রে সূর্য স্থিরই থাকে। সূর্যের কক্ষপথে পৃথিবী প্রায় সাড়ে তেইশ ডিগ্রি কোণে হেলে থাকায় বর্ষ পরিক্রমায় পৃথিবীর উভয় গোলার্ধ থেকে সূর্যের আপাত অবস্থানের এই তারতম্য হয়। এটাই পৃথিবীতে ঋতু পরিবর্তনের কারণ। সূর্যকে প্রদক্ষিণ করার সময় পৃথিবী তার নিজস্ব কক্ষপথে হেলে না থাকলে, ঋতু পরিবর্তন হতো না। এজন্যই ভূগোলে কর্কটক্রান্তি এবং মকরক্রান্তি রেখার গুরুত্ব খুবই বেশি।
পৃথিবীর অনেক দেশেই জনবহুল স্থানের উপর দিয়ে কর্কটক্রান্তি অথবা মকরক্রান্তি রেখা অতিক্রম করেছে। এসব দেশে জনস্বার্থে এ দুটো ভৌগলিক রেখাকে মার্কার দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে। ঋতু পরিবর্তনে এদের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করা হয়েছে। উত্তর গোলার্ধে ভারতসহ বিভিন্ন দেশে কর্কটক্রান্তি রেখার মার্কার রয়েছে। দক্ষিণ গোলার্ধে অস্ট্রেলিয়ায় কুইন্সল্যান্ডে মকরক্রান্তি রেখার মার্কার রয়েছে।