আত্রাই নদীর ভারতীয় অংশে বাঁধ ভেঙে পড়া নিয়ে নাম না করে বাংলাদেশকে নিশানা করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।
বুধবার (২০শে মে) রাজ্যটির জলপাইগুড়ি জেলার উত্তরকন্যা প্রেক্ষাগৃহে প্রশাসনিক সভায় উপস্থিত হয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, আমাদের কাজটায় একটা সমস্যা হয়েছে তার কারণ আমাদের একটি সীমান্তবর্তী দেশ রয়েছে, তার নাম বলছি না। তারা দুটো দেশ (বাংলাদেশ- চিন) মিলে একটা বাঁধ তৈরি করেছিল।
মমতা বলেন, আমরা সেই বাঁধ তৈরির বিষয়ে বারবার ভারত সরকারকে জানিয়েছি। ফলে দক্ষিণ দিনাজপুর, বালুরঘাটের সাধারণ মানুষ আত্রাই নদীর পানি পায় না। ফলে আমরা যেটুকু কাজ করতে যাচ্ছি তা খুবই লিমিটেড। তা সত্ত্বেও যেটা ভেঙেছে তার জন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং কাজটা অবিলম্বে করার কথা বলা হয়েছে। যখন আত্রাই নদীর পানিকে পুরোপুরি আটকে দেয়া হলো, তখন তো (কেন্দ্র) কিছু বলল না।
পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বালুরঘাটে আত্রেয়ী নদীর ওপর মাত্র চার মাস আগে নির্মিত একটি বাঁধ ভেঙে পড়ে। মঙ্গলবার ভোর রাতে নদীর প্রবল স্রোতে প্রায় ৩০ কোটি রুপি ব্যয়ে নির্মিত এই বাঁধের একটি বড় অংশ ধসে পড়ে।
আত্রাই নদী বাংলাদেশ হয়ে ভারতের দক্ষিণ দিনাজপুর দিয়ে আবার বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। বাংলাদেশ চীনের সহযোগিতায় আত্রাই নদীর উপর র্যাবার ড্যাম বানালে নদীর পানি প্রবাহ কমে যাবে এমন আশঙ্কায় বারবার ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নদীর পানি ধরে রাখতে ও তীব্র ভাঙন ও বন্যার কবল থেকে এলাকাবাসীকে রক্ষায় ২০২২ সালে বালুরঘাটের চকভৃগুতে বাঁধ নির্মাণ শুরু করে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। ২০২৪ সালে তার কাজ শেষ হয়ে যায়।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতেই প্রথমবারের মতো সেই বাঁধের গার্ডওয়াল ভেঙে পড়ে। এরপর দ্রুততার সঙ্গে বালির বস্তা ফেলে সেটি মেরামতের কাজ চলছিল। কিন্তু এর চার মাসের মধ্যে মঙ্গলবার ভোররাতে পানির তোড়ে বাঁধের প্রায় ৪০ ফুট অংশ ধসে পড়ে, যা নিয়ে চাঞ্চল্য ছড়ায়। বাঁধ ভাঙার পরেই শুরু হয় রাজনৈতিক তরজা। কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ও বালুরঘাটের বিজেপি সাংসদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে রাজ্য সরকারকে নিশানা করেন। এর একদিনের মধ্যেই নির্ধারিত প্রশাসনিক সভায় বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা।
এদিকে, এদিন আত্রাই নদী প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিস্তা প্রসঙ্গও টেনে এনে প্রতিবেশী রাজ্য সিকিমকে হুশিয়ারি দেন মমতা। প্রতিবেশী রাজ্য সিকিমকে নিশানা করে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সিকিমে ১৪টা হাইড্রেল পাওয়ার করা হয়েছে। ফলে ওখান (তিস্তা) দিয়ে পানি প্রবাহিত হতে পারছে না। আর তার ফলে সব পানি এসে পড়ছে বাংলার বুকে। যে যার নিজের নিয়ে আছে। তারা একবার তো ভাববে। ওদের আমরা ভালোবাসি। আমাদের কত পর্যটক ওখানে যায়। আপনারা এতগুলো বিদ্যুৎ প্রকল্প করলেন সেখানে কেন্দ্রীয় সরকার কেন অনুমতি দিল?
এসময় মমতা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, কেউ যদি মনে করে যে অপরের উপরে নিঃশ্বাস ফেলবে, বাংলার বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে, তবে মনে রাখতে হবে তারা যেন নিজের রাজ্যকে সামলায়। নিঃশ্বাস আমরাও ফেলতে পারি। আমরা মনে করি প্রত্যেকটা জিনিসের সীমাবদ্ধতা আছে, কারোরই লক্ষণ রেখা অতিক্রম করা উচিত নয়।'
ডিবিসি/এএনটি