ছাত্র-জনতার লাগাতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের চূড়ান্ত পতনের ঠিক একদিন আগে, ৪ঠা আগস্ট ২০২৪, দেশজুড়ে অসহযোগ আন্দোলন এবং সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ব্যাপক সংঘর্ষে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশ কার্যত রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
এদিন দেশব্যাপী শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে সর্বাত্মক অসহযোগ কর্মসূচি শুরু হয়। সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর কারফিউ জারি করলেও ছাত্র-জনতা তা উপেক্ষা করে রাস্তায় নেমে আসে।
সকাল থেকেই রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, রামপুরা, উত্তরা, বাড্ডা, প্রগতি সরণি, কারওয়ান বাজার, সায়েন্স ল্যাব, শাহবাগ, বাংলামোটর ও ধানমন্ডি এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। ইস্ট ওয়েস্ট ও ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং সাধারণ জনতা রামপুরায় মিছিলে নামলে তাদের ওপর গুলি চালানো হয় বলে অভিযোগ ওঠে। নিরস্ত্র আন্দোলনকারীরা সশস্ত্র হামলা প্রতিহত করার চেষ্টা করলে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে।
দিনভর সংঘর্ষে শত শত মানুষ গুলিবিদ্ধ ও আহত হয়। ঢাকার হাসপাতালগুলোতে আহতদের চাপ সামলাতে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের হিমশিম খেতে হয়। শুধুমাত্র ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ৬৭ জন গুলিবিদ্ধ রোগী ভর্তি হন এবং প্রায় আড়াই শতাধিক মানুষ চিকিৎসা নেন।
এর মাঝে মিরপুরে একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা ঘটে, যেখানে সেনাসদস্যদের একটি দল সরকার সমর্থিত বাহিনীর বিপরীতে আন্দোলনকারীদের পক্ষে অবস্থান নেয় এবং ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এই ঘটনা আন্দোলনকারীদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করে।
অন্যদিকে, ক্ষমতা ধরে রাখার শেষ চেষ্টা হিসেবে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার মন্ত্রিসভার সদস্য এবং সশস্ত্র বাহিনীর প্রধানদের নিয়ে এক জরুরি বৈঠকে বসেন। বৈঠকে তিনি আন্দোলন দমনে সেনাবাহিনীকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য চাপ দেন বলে জানা যায়।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আন্দোলনকারীরা তাদের চূড়ান্ত কর্মসূচি ‘মার্চ টু ঢাকা’ একদিন এগিয়ে এনে ৫ই আগস্ট পালনের ঘোষণা দেয়। আন্দোলনকারীদের সমন্বয়করা জানান, মূলত একটি কৌশলগত ফাঁদ হিসেবেই প্রথমে ৬ তারিখের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল।
এই ঘোষণার পর দেশজুড়ে উত্তেজনা চরমে পৌঁছায় এবং শেখ হাসিনা সরকারের প্রায় দেড় দশকের শাসনের অবসানের মঞ্চ প্রস্তুত হয়।
ডিবিসি/এমইউএ