সাহিত্য, কবিতা, অন্যান্য

কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ’র প্রয়াণ দিবস আজ

ডেস্ক প্রতিবেদন

ডিবিসি নিউজ

রবিবার ১৯শে মার্চ ২০২৩ ০৭:০১:২৭ অপরাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ। পুরো নাম আবু জাফর মুহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ খান। বিংশ শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকের অন্যতম প্রভাববিস্তারকারী কবি। তার দু’টি দীর্ঘ কবিতা ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ এবং ‘বৃষ্টি ও সাহসী পুরুষের জন্য প্রার্থনা’ আধুনিক বাংলা সাহিত্যের ভাণ্ডারে অভূতপূর্ব সংযোজন।

১৯৩৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জের বাহেরচরের ক্ষুদ্রকাঠি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ। তার পিতা আব্দুল জব্বার খান পাকিস্তানের আইন পরিষদের স্পিকার ছিলেন। ১৯৪৮ সালে ময়মনসিংহ জিলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক, ১৯৫০ সালে ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে মাস্টার্স পাস করেন তিনি।
 
১৯৫৪ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত তিনি বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। ১৯৫৪ সালে তিনি ইংরেজিতে মাস্টার্স করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একই বিভাগে প্রভাষক পদে যোগ দেন। ১৯৫৭ সালে অধ্যাপনা ছেড়ে যোগ দেন পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে। ১৯৮২ সালে সচিব হিসেবে অবসর নেন এবং মন্ত্রীসভায় যোগ দেন। কৃষি ও পানি সম্পদ মন্ত্রী হিসেবে দুই বছর দায়িত্ব পালন করে ১৯৮৪ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হিসেবে যোগ দেন। পরবর্তীতে ১৯৯২ সালে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের অতিরিক্ত মহাপরিচালক হিসেবে যোগ দেন বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থায়। ১৯৯৭ সালে তিনি একই সংস্থা থেকে পরিচালক হিসেবে অবসর নেন।

আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর কবিতায় আবহমান বাংলার অকৃত্রিম ছবি পাওয়া যায়। তার কবিতার সূচনা ভাষা আন্দোলনকে (১৯৫২) কেন্দ্র করে এবং বিকাশ ঘটে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন এবং স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশের সামগ্রিক জনজীবনের আশা-নিরাশা এবং স্বপ্ন-বাস্তবতাকে কেন্দ্র করে।

কাব্যের আঙ্গিক গঠনে এবং শব্দ যোজনার বিশিষ্ট কৌশল তার স্বাতন্ত্র্য চিহ্নিত করে। তিনি লোকজ ঐতিহ্যের ব্যবহার করে ছড়ার আঙ্গিকে কবিতা লিখেছেন। প্রকৃতির রূপ ও রঙের বিচিত্রিত ছবিগুলো তার কবিতাকে মাধুর্যমণ্ডিত করেছে।

আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ তার কাব্যরীতিতে মূলত দুটি প্রবণতাকে অনুসরণ করেছেন: একটি তার প্রথম জীবনের প্রিয় গীতিমুখ্য কাব্যরীতি আর অন্যটি মহাকাব্যিক। পঞ্চাশের দশকে রচিত তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ সাত নরী হার (১৯৫৫) এবং পরবর্তীকালের কখনো রং কখনো সুর (১৯৭০) ও কমলের চোখ (১৯৭৪) এ ধরনের গীতিমুখ্য সুললিত কবিতার সংকলন।

আশির দশক থেকে আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ মহাকাব্যিক কাব্যরীতিতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠেন। এ পর্যায়ে তার কবিতার বিষয় হিসেবে উঠে আসে মা-মাটি ও সংগ্রামী মানুষের চিত্র, পরিচিত দেশ-কালের সীমানা অতিক্রম করে স্পর্শ করে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডল। এ মহাকাব্যিক কাব্যভঙ্গিতেই তিনি রচনা করেন তার সর্বাধিক জননন্দিত কাব্যগ্রন্থ আমি কিংবদন্তীর কথা বলছি (১৯৮১)। এ ছাড়া সহিষ্ণু প্রতীক্ষা (১৯৮২), বৃষ্টি ও সাহসী পুরুষের জন্য প্রার্থনা (১৯৮৩) কাব্যগ্রন্থ দু’টিতেও মহাকাব্যিক ব্যঞ্জনা লক্ষ্য করা যায়।

আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ রচিত অন্যান্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে আমার সময় (১৯৮৭), নির্বাচিত কবিতা (১৯৯১), আমার সকল কথা (১৯৯৩), খাঁচার ভিতর অচিন পাখি এবং জীবিত অবস্থার সর্বশেষ কাব্যগ্রন্থ মসৃণ কৃষ্ণগোলাপ (২০০২)। এ ছাড়া তিনি বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণাধর্মী গ্রন্থ রচনা করেছেন। সেগুলির মধ্যে রয়েছে চীনের কমিউন সম্পর্কে Yellow Sands' Hills: China through Chinese Eyes; বাংলাদেশের গ্রামীণ উন্নয়ন সম্পর্কে Rural Development: Problems and Prospects; (Tom Hexner-এর সঙ্গে যৌথভাবে); Creative Development; Food and Faith।

কাব্য রচনার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি একুশে পদক ও বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৭৯) লাভ করেন। তিনি ‘পদাবলি’ নামে কবিদের একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ ২০০১ সালের ১৯ মার্চ ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।

আরও পড়ুন