বাংলাদেশ, অপরাধ

আবেদনময়ী ছবি-ভিডিও দেখিয়ে ১০ বিয়ে, কোটি টাকা হাতানাের অভিযোগ মাহির বিরুদ্ধে

ডেস্ক প্রতিবেদন

ডিবিসি নিউজ

শুক্রবার ২০শে জানুয়ারী ২০২৩ ০৬:৪৭:১০ পূর্বাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

আবেদনময়ী ছবি-ভিডিও দেখিয়ে ১০ বিয়ে, কোটি টাকা হাতানাের অভিযোগ উঠেছে মাহি নামের এক নারীর বিরুদ্ধে।

তানজিনা আক্তার ইভা ওরফে মেরি ওরফে মাহি। অষ্টম শ্রেণি পাস। বয়স ইতিমধ্যে ৩৪ পেরিয়েছে। দেখতে সুন্দরী, স্মার্ট ও আবেদনময়ী। পোশাকও পরেন পশ্চিমা সংস্কৃতির আদলে। চোখের ইশারায় পাগল করেন যুবক-তরুণদের। বাদ যায় না মধ্যবয়সীরাও। টিকটকে পারদর্শী, ফলোয়ার সংখ্যাও বেশ।

নিজের ছবি ও ভিডিও দিয়ে আকৃষ্ট করতেন অন্যদের। মাহি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেকে পরিচয় দিতেন ও লেভেল এবং এ লেভেল পাস করে যুক্তরাজ্যের একটি আইটি ফার্মে কর্মরত হিসেবে। টিকটক, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিয়মিত পোস্ট দিতেন নিজের আবেদনময়ী, অর্ধনগ্ন ছবি ও ভিডিও। পরে টার্গেট করা ব্যক্তিকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে ফেলতেন প্রেমের জালে।


তবে প্রেমেই সীমাবদ্ধ থাকত না সম্পর্ক। ধনাঢ্য ব্যক্তি হলে করে ফেলতেন বিয়ে। পরে ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ভিডিও, অডিও ও ভিডিওতে হওয়া কথোপকথন রেকর্ড করে ব্লাকমেইল করে হাতিয়ে নিতেন মোটা অঙ্কের টাকা। এখন পর্যন্ত ১০ জনকে টাকার জন্য করেছেন বিয়ে। আর শতাধিক পুরুষের সঙ্গে প্রেম করে রাত্রিযাপন করেছেন। প্রতারণা করে তাদের কাছ থেকে আদায় করেছেন কোটি কোটি টাকা। তার এ কাজে সহযোগিতা করতেন আরেক প্রতারক। অবশ্য রেহাই মেলেনি তারও।

ভুক্তভোগীরা একসময় তার প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পারেন। অভিযোগ যায় থানাতে। তদন্ত করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ (উত্তর)। পরে অভিযান চালিয়ে তানজিনা আক্তার ইভা ওরফে মেরি ওরফে মাহি (৩৪) ও মাসুম বিল্লাহ ফারদিন ওরফে রাজুকে গ্রেফতার করা হয়। তদন্ত সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দারা জানান, গ্রেপ্তার ইভা ফেসবুক, টিকটকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অ্যাকাউন্ট খুলতেন। এসব অ্যাকাউন্টে তার অর্ধনগ্ন ছবি পোস্ট করে বিভিন্ন ধনাঢ্য ব্যক্তিদের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাতেন। তারপর কথা আদান-প্রদান হতো।

পরবর্তীতে কথা-বার্তার এক পর্যায়ে তাদের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর বিনিময় হতো। নিজেকে কুমারি বলে পরিচয় দিয়ে গুলশানের বিভিন্ন অভিজাত হোটেলে লাঞ্চ ও ডিনারের জন্য তাদের দাওয়াত দিত। দেখা করার পর ঘনিষ্ঠতা বাড়াত। টার্গেট ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের যে প্ল্যাটফর্মই ব্যবহার করুক না কেন অধিকতর নিরাপত্তার কথা বলে তাদের দিয়ে স্ন্যাপচ্যাটে অ্যাকাউন্ট খুলিয়ে নিতেন তিনি। যার স্ন্যাপচ্যাটে অ্যাকাউন্ট রয়েছে তাকে স্ন্যাপচ্যাটের ম্যাসেঞ্জারে নিজের অর্ধনগ্ন ও নগ্ন ছবি পাঠিয়ে অন্তরঙ্গ কথা বলতে উদ্বুদ্ধ করতেন তিনি।

এছাড়া যাদের সঙ্গে অন্তরঙ্গ কথা বলতেন, তাদের কথোপকথনের রেকর্ড সংরক্ষণ করে রাখতেন তিনি। সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করার জন্য টার্গেট ব্যক্তিদের সঙ্গে হোটেলে রাত্রিযাপন করতেন তিনি। সম্পর্কের ফাঁদে ফেলে মোটা অঙ্কের টাকা সুকৌশলে হাতিয়ে নিতেন। টার্গেট ব্যক্তিদের বিভিন্ন নাইট পার্টি, স্পা সেন্টার ও বারে নিয়ে যেতেন। সেখানে নিয়ে তাদের বিভিন্ন অনৈতিক কাজে আকৃষ্ট করে নিজের স্বার্থ হাসিল করতেন। তার মোহনীয় মায়ায় আকৃষ্ট করে প্রতারণার ফাঁদে ফেলতেন। তার ফাঁদ থেকে বাদ যায়নি সমাজের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, নেতা, উচ্চ পদস্থ চাকরিজীবীরা। এ রকম ১০ জনকে সাময়িক সময়ের জন্য বিয়ে করে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি।

ডিবি সূত্রে জানা যায়, যাদের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে টাকা হাতিয়েছে মাহির ব্লাকমেইলের শিকার এমন শতাধিক ব্যক্তির সন্ধান পাওয়া গেছে। যাদের সঙ্গে ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে নিজেকে মোহনীয় রুপে উপস্থাপন করে আকৃষ্ট করার মাধ্যমে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করতেন তিনি। মাহির পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় ২০০৩ সালে এক প্রতিষ্ঠিত বেসরকারি চাকরিজীবীর সঙ্গে। তার প্রথম স্বামীর সঙ্গে ডিভোর্স হয় ২০১০ সালে। তারপর লাগামহীন জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি। প্রথম স্বামীর ঘরে তার তিন সন্তান থাকলেও তাদের নিজের সন্তান বলে পরিচয় দেন না তিনি।

আরও পড়ুন