সেমিকন্ডাক্টর বা চিপ আমদানির ওপর প্রায় ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন মার্কিন প্রসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যা বিশ্বের প্রযুক্তি সাপ্লাই চেইনকে আমূল বদলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।
বৃহস্পতিবার (৭ই আগস্ট) সান ডিয়েগো-ভিত্তিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) চিপ উদ্ভাবক প্রতিষ্ঠান 'নেরন' (Kneron)-এর প্রতিষ্ঠাতা অ্যালবার্ট লিউ এই বিষয়ে তাদের উদ্বেগের কথা জানান।
তাইপেইতে রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই ঘোষণার পর খরচ কমাতে তার সংস্থা এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক সরবরাহকারীদের কাছ থেকে চিপ কেনার পরিকল্পনা করছে।
নেরন এতদিন পর্যন্ত বিশ্বের বৃহত্তম চুক্তিভিত্তিক চিপ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি (TSMC)-এর তাইওয়ানের কারখানা থেকে চিপ সরবরাহ নিত। কিন্তু ট্রাম্পের ঘোষণার পর এই কৌশলে পরিবর্তন আনতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।
লিউ নিশ্চিত করেছেন যে, তার অর্ডারের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ তিনি এখন TSMC-এর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনায় অবস্থিত কারখানায় স্থানান্তর করবেন।
ট্রাম্প বুধবার (৬ই আগস্ট) এই শুল্কের কথা ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, সেমিকন্ডাক্টর আমদানির ওপর প্রায় ১০০% শুল্ক আরোপ করা হবে। তবে এর সাথে একটি বড় ছাড়ের কথাও তিনি উল্লেখ করেছেন– যে সমস্ত সংস্থা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চিপ তৈরি করছে বা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে এই শুল্ক প্রযোজ্য হবে না।
এই পদক্ষেপটি মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন শিল্পকে ফিরিয়ে আনার জন্য ট্রাম্পের বৃহত্তর প্রচেষ্টারই একটি অংশ। একই দিনে অ্যাপল তার দেশের মাটিতে অতিরিক্ত ১০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিলে ট্রাম্পের এই বক্তব্যটি আরও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠে।
এই পরিস্থিতিতে তাইওয়ানের চিপ জায়ান্ট TSMC তুলনামূলকভাবে সুরক্ষিত থাকবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ তাদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিজস্ব কারখানা রয়েছে। এর ফলে এনভিডিয়া (Nvidia)-এর মতো তাদের বড় গ্রাহকদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি চিপের জন্য বাড়তি শুল্কের বোঝা বহন করতে হবে না।
তবে, নেরনের প্রতিষ্ঠাতা অ্যালবার্ট লিউ কিছু বাস্তব সমস্যার কথাও তুলে ধরেছেন। তিনি সতর্ক করে বলেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এখনও তাইওয়ানের মতো একটি পরিপক্ক এবং সুসংহত সেমিকন্ডাক্টর সাপ্লাই চেইন গড়ে ওঠেনি। এছাড়া, পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট এই শুল্ক নীতি অব্যাহত রাখবেন কিনা, সেই রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার বিষয়টিও পর্যবেক্ষণ করতে হবে বলে তিনি জোর দেন।
লিউ বিশ্বাস করেন যে, তার কোম্পানির তৈরি এনপিইউ (নিউরাল প্রসেসিং ইউনিট) এই শুল্ক নীতির কারণে কিছুটা লাভবানও হতে পারে। কারণ ক্রেতারা তাদের উন্নত এআই পণ্য চালানোর জন্য তুলনামূলক সস্তা বিকল্প খুঁজতে পারে। তা সত্ত্বেও, তিনি গ্রাহক ভিত্তিকে আরও বিস্তৃত করাকেই একটি নিরাপদ বিকল্প বলে মনে করছেন। তিনি জানান, নেরনের গ্রাহকদের মধ্যে অন্তত ২৫ শতাংশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের।
ট্রাম্পের এই ১০০% শুল্কের প্রস্তাবটি এমন এক সময়ে এসেছে যখন বৃহস্পতিবার থেকেই যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশের বহু পণ্যের ওপর ১০% থেকে ৫০% শুল্ক কার্যকর করতে শুরু করেছে। সেমিকন্ডাক্টর এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি পণ্যের ওপর শুল্কের বিষয়টি একটি মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা তদন্তের অধীনে রয়েছে, যার ফলাফল আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে ঘোষণা করার কথা।
ডিবিসি/এইচএপি