ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানের লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে অনুষ্ঠিত বহুল আলোচিত বৈঠকটি কোনো চূড়ান্ত চুক্তি ছাড়াই শেষ হয়েছে। প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী এই বৈঠকে যুদ্ধবিরতির কোনো সুনির্দিষ্ট সমাধানে পৌঁছাতে না পারলেও, উভয় নেতাই আলোচনাকে ‘ফলপ্রসূ’ এবং ‘অগ্রগতি’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। বৈঠক শেষে ট্রাম্প জানিয়েছেন, দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতার আগে কোনো চুক্তি হবে না, তবে আলোচনার দরজা খোলা রয়েছে। অন্যদিকে, পুতিন জোর দিয়ে বলেছেন, একটি স্থায়ী শান্তির জন্য এই সংঘাতের ‘মূল কারণগুলো’ অবশ্যই নিরসন করতে হবে।
স্থানীয় সময় শুক্রবার (১৫ই আগস্ট, ২০২৫) আলাস্কার অ্যাঙ্কোরেজের একটি সামরিক ঘাঁটিতে এই উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার সামরিক অভিযান শুরুর পর এই প্রথম দুই নেতার মধ্যে এমন বিশদ আলোচনা অনুষ্ঠিত হলো।
বৈঠক শেষে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, "আমাদের মধ্যে অত্যন্ত ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে এবং অনেক বিষয়েই আমরা একমত হয়েছি। যদিও আমরা এখনো চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারিনি, তবে এটি একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি।" তিনি আরও জানান, পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট এবং ন্যাটো মিত্রদের সঙ্গে আলোচনা করবেন। ট্রাম্পের মতে, চূড়ান্ত যেকোনো চুক্তিতে অবশ্যই ইউক্রেন এবং তার মিত্রদের সম্মতি থাকতে হবে।
অন্যদিকে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আলোচনার ইতিবাচক সুরের জন্য ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, "আমি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে তার শুভ কামনার জন্য ধন্যবাদ জানাতে চাই।" তবে তিনি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন যে, কেবল শুভেচ্ছাই যথেষ্ট নয়, উভয় পক্ষকেই નક્কারজনক ফলাফলের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। পুতিন বলেন, "একটি স্থায়ী ও দীর্ঘমেয়াদী সমাধান চাইলে আমাদের এই সংঘাতের শিকড় উপড়ে ফেলতে হবে।" বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ‘মূল কারণ’ বলতে পুতিন সম্ভবত ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগদান এবং রাশিয়ার নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগগুলোর দিকেই ইঙ্গিত করেছেন।
রুশ প্রেসিডেন্ট আরও যোগ করেন, "ট্রাম্প তার দেশের সমৃদ্ধির বিষয়ে মনোযোগী, এটা স্পষ্ট। তবে তিনি এটাও বোঝেন যে রাশিয়ারও নিজস্ব জাতীয় স্বার্থ রয়েছে এবং সেগুলোকে সম্মান করতে হবে।"
যদিও এই বৈঠক থেকে তাৎক্ষণিক কোনো যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসেনি, যা অনেকেরই প্রত্যাশা ছিল, তবুও কূটনীতিকরা এটিকে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবেই দেখছেন। দীর্ঘদিনের অচলাবস্থার পর দুই প্রধান শক্তির শীর্ষ নেতাদের মধ্যে সরাসরি আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়াটাই একটি বড় বিষয়। তবে, ইউক্রেনের পক্ষ থেকে এই বৈঠকের বিষয়ে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। কিয়েভ বরাবরই বলে আসছে যে, তাদের সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতার ওপর কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না।
আপাতত, আলাস্কার এই বৈঠক কোনো চূড়ান্ত সমাধান না দিলেও, আলোচনার একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এখন দেখার বিষয়, ট্রাম্পের প্রতিশ্রুত পরবর্তী আলোচনাগুলো এই সংকটকে শান্তির পথে কতটা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।
ডিবিসি/এনএসএফ