মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দুই বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং মেক্সিকোর বিরুদ্ধে ৩০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
শনিবার (১২ই জুলাই) তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অ্যাকাউন্টে পোস্ট করা চিঠিতে এই আকস্মিক ঘোষণা দেন তিনি। নিজের চিঠিতে ট্রাম্প উল্লেখ করেন, যদিও মেক্সিকো যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসী এবং ফেন্টানিলের প্রবাহ রোধে সহায়তা করেছে, কিন্তু উত্তর আমেরিকাকে "মাদক পাচারের খেলার মাঠ" হওয়া থেকে থামাতে দেশটি যথেষ্ট পদক্ষেপ নেয়নি। ট্রাম্প যোগ করেন, "মেক্সিকো আমাকে সীমান্ত সুরক্ষিত করতে সাহায্য করছে, কিন্তু তারা যা করেছে, তা যথেষ্ট নয়।"
ইউরোপীয় ইউনিয়নের উদ্দেশ্যে লেখা চিঠিতে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতিকে একটি জাতীয় নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি লেখেন, "ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে আমাদের বাণিজ্য সম্পর্ক নিয়ে আলোচনার জন্য আমাদের হাতে বহু বছর ছিল, এবং আমরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে আপনাদের শুল্ক, অশুল্ক নীতি এবং বাণিজ্য বাধার কারণে সৃষ্ট এই দীর্ঘমেয়াদী, বিশাল এবং ক্রমাগত বাণিজ্য ঘাটতি থেকে আমাদের সরে আসতে হবে।" তিনি আরও বলেন, "আমাদের সম্পর্কটি দুর্ভাগ্যবশত, পারস্পরিক লাভজনক ছিল না।"
এই ঘোষণাটি ট্রাম্পের মিত্র ও প্রতিপক্ষ উভয়ের বিরুদ্ধেই নতুন শুল্ক আরোপের একটি ধারাবাহিক পদক্ষেপের অংশ। এটি তার ২০২৪ সালের নির্বাচনী প্রচারণার একটি মূল ভিত্তি ছিল, যেখানে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে দশকের পর দশক ধরে অন্যান্য দেশ দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত মার্কিন অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করবেন।
এই পারস্পরিক শুল্ক আরোপের মাধ্যমে ট্রাম্প বিশ্ব বাণিজ্যের প্রতিষ্ঠিত নিয়মাবলীকে কার্যত ভেঙে দিচ্ছেন। কয়েক দশক ধরে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং বেশিরভাগ দেশ উরুগুয়ে রাউন্ড নামক এক জটিল আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারিত শুল্ক হার মেনে চলত। এই নিয়মানুসারে, দেশগুলো নিজেদের শুল্ক নির্ধারণ করতে পারলেও "মোস্ট ফেভারড নেশন" নীতির অধীনে কোনো একটি দেশের ওপর অন্য দেশের চেয়ে বেশি শুল্ক আরোপ করতে পারত না। শনিবারের চিঠির মাধ্যমে ট্রাম্প এখন ২৪টি দেশ এবং ২৭-সদস্যের ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপর শুল্ক শর্ত আরোপ করলেন।
এর আগে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান বাণিজ্য আলোচক মারোস শেফচোভিচ চলতি সপ্তাহে বলেছিলেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইউরোপীয় পণ্য আমদানির ওপর উচ্চ শুল্ক এড়াতে একটি বাণিজ্য চুক্তি "আগামী দিনগুলিতেও" হতে পারে। তবে ট্রাম্পের এই নতুন ঘোষণায় সেই সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে এল।
ব্লক হিসেবে ইইউ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি পণ্য বিক্রি করে। মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির কার্যালয়ের মতে, ২০২২ সালে ইইউ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য আমদানি ৫৫৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছিল।
সেন্টার-রাইট আমেরিকান অ্যাকশন ফোরামের প্রেসিডেন্ট এবং কংগ্রেসনাল বাজেট অফিসের প্রাক্তন পরিচালক ডগলাস হোল্টজ-ইকিন বলেছেন, এই চিঠিগুলো প্রমাণ করে যে গত তিন মাসে কোনো গুরুতর বাণিজ্য আলোচনা হয়নি। তিনি জোর দিয়ে বলেন, দেশগুলো নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছিল কীভাবে মার্কিন অর্থনীতি এবং ট্রাম্পের প্রভাব থেকে নিজেদের রক্ষা করা যায়।
তিনি আরও বলেন যে ট্রাম্প মনোযোগ আকর্ষণের জন্য এই চিঠিগুলো ব্যবহার করছেন, কিন্তু "শেষ পর্যন্ত, এই চিঠিগুলো অন্য দেশগুলোর কাছে পাঠানো হলেও এর মাধ্যমে তিনি নিজের দেশের নাগরিকদের ওপরই কর আরোপ করছেন।"
ডিবিসি/আরএসএল