জাতীয়

ইতিহাসে রক্তের অক্ষরে নাম লিখে যান বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর

শামীম আহমেদ

ডিবিসি নিউজ

শুক্রবার ৪ঠা ডিসেম্বর ২০২০ ০৪:৩৭:৩৮ অপরাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। ৯ মাস যুদ্ধ করে ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল বীরযোদ্ধারা। তাদের মধ্যে আত্মত্যাগের সর্বোচ্চ দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী সাতজনকে দেয়া হয় বীরশ্রেষ্ঠ উপাধি। 'বীরশ্রেষ্ঠদের কথা'য় আজ থাকছে বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের বীরগাঁথা।

বিজয় তখন নিশ্চিত। তাই চাইলেই অপেক্ষা করতে পারতেন মিত্রবাহিনীর সহযোগীতার। কিন্তু বুকে তার মুক্ত ভূখন্ডের তীব্র আকাঙ্খা। শত্রুর শেষ ঘাঁটি ধুলিস্যাৎ করার দায়িত্ব তাই তুলে নেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর। বিজয় দেখে যেতে পারেননি মাত্র দু'দিনের জন্য। তবু তার সাহসের স্বীকৃতি হিসেবে রাষ্ট্র তাকে দিয়েছে শ্রেষ্ঠ বীরের মর্যাদা।

৭১ এর ২৫ মার্চ। দেশ যখন পাকিস্তানি হানাদারদের থাবায়, তখন ১৭৩ নম্বর ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যাটালিয়নে মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর। দেশকে মুক্ত করার প্রতিজ্ঞায় ৩ জুলাই তিন সহকর্মী নিয়ে পালিয়ে ভারত হয়ে পৌঁছান বাংলাদেশে।

মুক্তিযুদ্ধে ৭নং সেক্টরের সাব কমান্ডার হিসেবে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট, আরগরারহাট, শাহপুরসহ বেশ কয়েকটি লড়াইয়ে অসাধারণ কৃতিত্ব দেখান মহিউদ্দিন। পরের টার্গেট: নওয়াবগঞ্জ পাক বাহিনীর ঘাঁটি দখল।

৭১ এর ১০ ডিসেম্বর। ৫০ জন যোদ্ধাসহ বারঘরিয়ায় অবস্থান নেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর। লক্ষ্য, মহানন্দা তীরে ৩ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পাক বাহিনীর বাঙ্কার ধ্বংস। কথা ছিল, প্রথমে মিত্র বাহিনী গোলার আঘাত করবে। কিন্তু বিধিবাম। যোগাযোগ বিছিন্ন। ২ দিন অপেক্ষা করেও যখন হলো না, তখন ১৪ ডিসেম্বর ভোরে নৌকায় মাত্র ২০ জন সহযোদ্ধাকে নিয়ে আক্রমণ, হানাদার বাংকারে-ক্যাম্পে। হামলায় ধ্বংস মহানন্দা নদী তীরের শত্রুপক্ষের বেশ কয়েকটি বাঙ্কার। পিছু হটলেও পাল্টা আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধাদের অগ্রযাত্রা ঠেকিয়ে রাখে পাকিস্তান। তখন যুদ্ধজয় করতে, শত্রুর মেশিনগান ধ্বংসে, বা হাতে এসএমজি, ডান হাতে গ্রেনেড তুলে নেন মহিউদ্দিন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের বীর মুক্তিযোদ্ধা তরিকুল ইসলাম স্মৃতিচারণ করে বলেন, 'শত্রুপক্ষের বাঙ্কারগুলো একের পর এক গ্রেনেড মেরে ধ্বংস করতে থাকেন। ঠিক বেলা ১২টার দিকে আকস্মিকভাবে একটা বুলেট এসে তার কপাল ভেদ করে বিদ্ধ হয়। তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।'

২২ বছরের মহিউদ্দীনের বীরোচিত আত্মত্যাগের অনুপ্রেরণা, তীব্র দেশপ্রেম আর দেশ-বিদেশের সংগ্রামীদের রাজনৈতিক দর্শন। ৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালে পাকিস্তান সামরিক একাডেমিতে যোগ দিয়ে দ্রুতই নিজেকে গড়ে তোলেন চৌকস সেনাকর্মকর্তা হিসেবে। তাইতো যুদ্ধ চলাকালে কর্মস্থল থেকে পালিয়ে আসায় তাকে হন্যে হয়ে খোঁজে পাকিস্তান সেনাবাহিনী।

বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের ছোট বোন খালিদা রেবা বলেন, 'তার সাথের লোকদের বলতেন দেশ স্বাধীন করে আমরা পায়ে হেঁটে ঢাকা চলে যাবো জয়ধ্বনি করতে করতে। কিন্তু সে আশা তার পূরণ হলো না।'

বিজয়ের আগের দিন, ১৫ ডিসেম্বর চাঁপাইনবাগঞ্জের সোনা মসজিদ প্রাঙ্গণে সমাহিত করা হয় বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরকে। এমন আত্মত্যাগই বাঙালির অনুপ্রেরণা। যাতে ভর করে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ।

আরও পড়ুন