কুষ্টিয়ায় অতিরিক্ত ভাড়া চাওয়ার প্রতিবাদ করায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) এক ছাত্রীকে মারধর ও হেনস্তার অভিযোগ উঠেছে জনি পরিবহনের এক বাস হেলপারের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার দুপুরে কুষ্টিয়া থেকে ক্যাম্পাসে ফেরার পথে এ ঘটনা ঘটে। এই খবর ছড়িয়ে পড়লে ভুক্তভোগী ছাত্রীর সহপাঠীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে রুপসা পরিবহনের চারটি ও জনি পরিবহনের একটি বাস আটকে রেখে বিক্ষোভ করেন।
ভুক্তভোগী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর পর্বের একজন শিক্ষার্থী। তিনি জানান, বগুড়া থেকে ক্যাম্পাসে ফেরার পথে কুষ্টিয়ার চৌড়হাস বাসস্ট্যান্ড থেকে ক্যাম্পাসের বাস ধরার জন্য তিনি রূপসা পরিবহনের কাউন্টারে যান। সেখান থেকে তাকে জনি পরিবহনের একটি বাসে তুলে দেওয়া হয়। বাসে ওঠার আগে তিনি হেলপারকে বলেন যে তিনি নির্ধারিত ২৫ টাকা ভাড়া দেবেন।
কিন্তু বাসে ওঠার পর হেলপার তার কাছ থেকে ৪০ টাকা রেখে দেন। ওই ছাত্রী এর প্রতিবাদ করলে হেলপার তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি শুরু করেন। ভুক্তভোগীর ভাষ্যমতে, হেলপার তাকে বলেন, "কোথাকার অশিক্ষিত মেয়ে তুমি? আমি শেখপাড়ায় থাকি, ভাড়া কত আমরা জানি না? নাটক শুরু করছো?"
তিনি আরও অভিযোগ করেন, যখন তিনি তার স্বামীকে ফোন করতে যান, তখন হেলপার তার ফোন কেড়ে নেয়, মুখে ঘুষি মারে এবং বাপ-মা তুলে গালিগালাজ করে। একপর্যায়ে তার ভিডিও ধারণ করে জোরপূর্বক বাস থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়।
ঘটনার সময় বাসে উপস্থিত একজন প্রত্যক্ষদর্শী মহিলা বলেন, "আমি ঘটনার সময় বাসেই ছিলাম। বাস হেলপার ওই ছাত্রীর সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করেছে এবং তাকে অনেক মেরেছে। এটা এক ধরনের ইভটিজিং। পরে তারা মেয়েটিকে জোর করে বাস থেকে নামিয়ে দেয়।"
ভুক্তভোগী ছাত্রী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, "শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত ভাড়া ২০ টাকা, তবুও আমি ২৫ টাকা দিতে চেয়েছিলাম। এরপরও আমাকে মারধর ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়েছে। আমি এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।"
এদিকে, ঘটনার পর শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকে জড়ো হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান এবং সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. ফকরুল ইসলাম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। শিক্ষার্থীরা সাফ জানিয়ে দেন, সহপাঠীর ওপর এই অন্যায়ের বিচার না হওয়া পর্যন্ত তারা আটকে রাখা বাস ছাড়বেন না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন প্রশাসক অধ্যাপক ড. আব্দুর রউফ বলেন, "আমরা ঘটনাটি সম্পর্কে অবগত। শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে কয়েকটি বাস আটক করেছে। বাসগুলো ক্যাম্পাসে নিরাপদে রাখা হয়েছে। আমরা বাস মালিক পক্ষের সাথে কথা বলে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করব।"
এ বিষয়ে জনি পরিবহনের মালিক আনিস মিয়া বলেন, "বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের মাধ্যমে বিষয়টি জেনেছি। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। আমি বাস মালিক সমিতিকে জানিয়েছি। তারা প্রতিনিধি পাঠিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন।"
প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান জানান, বাস মালিক ও মালিক সমিতির সাথে কথা হয়েছে। তারা ক্যাম্পাসে প্রতিনিধি পাঠাবেন এবং সকলের উপস্থিতিতে আলোচনার মাধ্যমে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ডিবিসি/জেআরওয়াই