পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)-এর প্রতিষ্ঠাতা ইমরান খানের সঙ্গে তার পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাতে ফের বাধা দিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার (৯ই ডিসেম্বর) আদিয়ালা কারাগারের কাছে পৌঁছালে পুলিশ তাদের আটকে দেয়। এর প্রতিবাদে কারাগারের অদূরেই অবস্থান ধর্মঘট শুরু করেন ইমরান খানের বোনেরা।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার ইমরান খানের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য তার বোন নওরীন খান, আলীমা খান, উজমা খান এবং পিটিআই চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার গোহর আলী খান কারাগারে পৌঁছান। কিন্তু আনুষ্ঠানিক সাক্ষাতের সময়সীমা শেষ হয়ে গেছে এই অজুহাতে পুলিশ তাদের ফ্যাক্টরি চেকপয়েন্টেই থামিয়ে দেয় এবং কারাগারে প্রবেশ করতে বাধা দেয়।
পুলিশের বাধার মুখে চেকপয়েন্টের কাছেই অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন ইমরান খানের বোনেরা। এ সময় আলেমা খান উপস্থিত পিটিআই কর্মীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, পুলিশ আমাদের শত্রু নয়, তারা নিজেরাই প্রচণ্ড চাপের মধ্যে রয়েছে। ঘটনাস্থলে নারীরা উপস্থিত থাকায় তিনি দলীয় সমর্থকদের পেছনে থাকার নির্দেশ দেন।
আলেমা খান অভিযোগ করেন যে, গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই পরিবারের সদস্যদের ইমরান খানের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না। তিনি জোর দিয়ে বলেন, আগের সাক্ষাতে তার বোন কোনো রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেননি। তিনি প্রশ্ন তোলেন, কার নির্দেশে ইমরান খানকে এভাবে ‘নির্জন কারাবাস’ বা সলিটারি কনফাইন্সমেন্টে রাখা হচ্ছে? পরিবারটি গত এক মাস ধরে কেবল তার সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করছে।
চেকপয়েন্টে বাধার পর ইমরান খানের বোনদের এই অবস্থান কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে যোগ দেন এমএনএ জুনায়েদ আকবর, শহীদ খাট্টাক এবং খাইবার পাখতুনখোয়া মন্ত্রিসভার সদস্য মীনা খান ও শফি জান।
এদিকে, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আদিয়ালা কারাগার এলাকায় ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। কারাগারের মূল সড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং চেকপয়েন্টে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কারাগারের আশেপাশে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে এবং নিরাপত্তার স্বার্থে ১,২০০-এরও বেশি পুলিশ অফিসারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া গোরক্ষপুর থেকে দহগল পর্যন্ত সমস্ত বাণিজ্যিক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পিটিআই নেতা আসাদ কায়সার ইমরান খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ প্রত্যাখ্যানের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন এবং একে ‘বেআইনি’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, বিরোধীদলীয় নেতা নিয়োগে ব্যর্থতা সম্পূর্ণ ‘অসাংবিধানিক’।
তিনি ইমরান খানের মুক্তি এবং যোগ্যতা-ভিত্তিক আইনি প্রক্রিয়ার দাবি পুনর্ব্যক্ত করেন। আসাদ কায়সার হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ইমরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে দলটিকে শেষ করা যাবে না, অতীতেও কোনো রাজনৈতিক শক্তিকে এভাবে দমিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি।
উল্লেখ্য, গত সপ্তাহে ইমরান খানের বোন উজমাকে সাক্ষাতের অনুমতি দেওয়া হলেও, সম্প্রতি পিটিআই প্রতিষ্ঠাতার সঙ্গে দেখা করা নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। গত মাসে খাইবার পাখতুনখোয়ার মুখ্যমন্ত্রী সোহেল আফ্রিদিও কারাগারের বাইরে ১৬ ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছিলেন। এর আগে ইমরান খানের তিন বোন বিক্ষোভ করতে গিয়ে স্বল্প সময়ের জন্য আটকও হয়েছিলেন।
সম্প্রতি পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার নিশ্চিত করেছেন যে, সরকার কারাবন্দী এই নেতার সাক্ষাতের ওপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী পিটিআই প্রতিষ্ঠাতাকে ‘মানসিকভাবে অসুস্থ’ এবং ‘জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি’ হিসেবে অভিহিত করার কয়েক ঘণ্টা পরেই এই কঠোর নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা আসে।
তথ্যসূত্র: জিও নিউজ
ডিবিসি/এএমটি