আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে "সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ" ঘোষণার জন্য স্পেন এবং আয়ারল্যান্ডসহ ২০টিরও বেশি দেশ কলম্বিয়ার রাজধানী বোগোটায় একটি জরুরি সম্মেলনে একত্রিত হচ্ছে। চলতি সপ্তাহে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে বলে কূটনীতিকরা মিডল ইস্ট আইকে জানিয়েছেন।
"দ্য হেগ গ্রুপ" নামে পরিচিত একটি জোটের সহ-সভাপতি হিসেবে কলম্বিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার যৌথভাবে ১৫-১৬ই জুলাই এই "জরুরি শীর্ষ সম্মেলনের" আয়োজন করছে। ইসরায়েল এবং তার শক্তিশালী মিত্রদের দ্বারা তৈরি "দায়মুক্তির পরিবেশ" মোকাবিলায় কূটনৈতিক ও আইনি পদক্ষেপ সমন্বয় করাই এই সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য।
দ্য হেগ গ্রুপ মূলত আটটি দেশের একটি জোট। এর প্রধান লক্ষ্য হলো আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে ইসরায়েলকে জবাবদিহি করা।
দক্ষিণ আফ্রিকার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও সহযোগিতা মন্ত্রী রোল্যান্ড লামোলা মিডল ইস্ট আইকে বলেন, "দ্য হেগ গ্রুপের গঠন আন্তর্জাতিক আইনের অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত ছিল। বোগোটা সম্মেলনেও একই চেতনা প্রতিফলিত হবে, যেখানে একত্রিত রাষ্ট্রগুলো একটি স্পষ্ট বার্তা দেবে, কোনো দেশই আইনের ঊর্ধ্বে নয় এবং কোনো অপরাধেরই বিচার ছাড়া পার পাওয়া যাবে না।"
তিনি আরও যোগ করেন, "আমরা একত্রিত হয়ে এমন সুনির্দিষ্ট আইনি, কূটনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য কাজ করব যা ফিলিস্তিনিদের উপর ইসরায়েলের চালানো ধ্বংসযজ্ঞ জরুরিভাবে বন্ধ করতে পারে।"
গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ, যাকে অনেক বিশেষজ্ঞ এবং সরকার গণহত্যা হিসেবে নিন্দা করেছে, তাতে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ৫৭,০০০-এরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে এবং প্রায় সমগ্র জনসংখ্যা বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এই আক্রমণে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডটি প্রায় বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে এবং ২০ লক্ষ মানুষ অনাহারের শিকার।
কলম্বিয়ার বহুপাক্ষিক বিষয়ক উপমন্ত্রী মাউরিসিও জারামিলো জাসির বলেন, "ফিলিস্তিনি গণহত্যা আমাদের পুরো বহুপাক্ষিক ব্যবস্থাকে হুমকির মুখে ফেলেছে। বর্ণবাদ এবং জাতিগত নির্মূলের মুখে কলম্বিয়া উদাসীন থাকতে পারে না।"
তিনি যোগ করেন, "বোগোটায় সমবেত রাষ্ট্রগুলো কেবল গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিরোধের আমাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করবে না, বরং কথার পর্যায় থেকে সম্মিলিত পদক্ষেপে যাওয়ার জন্য একাধিক সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।"
দ্য হেগ গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের মধ্যে বলিভিয়া, কলম্বিয়া, কিউবা, হন্ডুরাস, মালয়েশিয়া, নামিবিয়া, সেনেগাল এবং দক্ষিণ আফ্রিকা অন্তর্ভুক্ত ছিল।
বোগোটার এই শীর্ষ সম্মেলনে আলজেরিয়া, বাংলাদেশ, বলিভিয়া, ব্রাজিল, চিলি, চীন, কিউবা, জিবুতি, হন্ডুরাস, ইন্দোনেশিয়া, আয়ারল্যান্ড, লেবানন, মালয়েশিয়া, নামিবিয়া, নিকারাগুয়া, ওমান, পর্তুগাল, স্পেন, কাতার, তুরস্ক, সেন্ট ভিনসেন্ট অ্যান্ড দ্য গ্রেনাডিন্স, উরুগুয়ে এবং ফিলিস্তিন অংশ নেবে বলে জানা গেছে।
সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন ফিলিস্তিনের জন্য জাতিসংঘের বিশেষ র্যাপোর্টিয়ার ফ্রান্সেসকা আলবানিজ, ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থার প্রধান ফিলিপ লাজারিনি এবং জাতিসংঘের স্বাস্থ্য অধিকার বিষয়ক বিশেষ র্যাপোর্টিয়ার ত্লালেং মোফোকেনংসহ আরও অনেকে।
তথ্যসূত্র মিডল ইস্ট আই।
ডিবিসি/এমইউএ