হামাসের বিদেশ বিষয়ক প্রধান খালেদ মেশাল জানিয়েছেন, অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলে ভবিষ্যতে হামলা কমানোর জন্য তার দল প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। তবে তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন, অস্ত্র সমর্পণ করা হামাসের জন্য ‘শরীর থেকে আত্মা বের করে ফেলার’ শামিল।
আল জাজিরা অ্যারাবিক এর ‘মাওয়াজিন’ অনুষ্ঠানে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মেশাল এসব কথা বলেন। যুদ্ধবিরতি আলোচনার গতি কমে আসা এবং চুক্তির প্রথম ধাপের সমাপ্তি নিয়ে উদ্বেগের মধ্যেই তিনি হামাসের এই অবস্থান তুলে ধরেন।
হামাস মঙ্গলবার (৯ই ডিসেম্বর) জানিয়েছে, ইসরায়েল যদি চুক্তির লঙ্ঘন অব্যাহত রাখে, তবে যুদ্ধবিরতি এগিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়।
কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, গত ১০ই অক্টোবর যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পর থেকে অন্তত ৭৩৮ বার চুক্তি লঙ্ঘন করেছে ইসরায়েল। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হওয়া এই যুদ্ধবিরতি অনেকাংশেই টিকে থাকলেও ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৩৭৭ জন নিহত হয়েছেন। দোহা ফোরামে মধ্যস্থতাকারীরা সতর্ক করেছেন যে, চুক্তির বর্তমান গতিপথ ঝুঁকির মুখে রয়েছে।
খালেদ মেশাল জানান, হামাস গাজায় কোনো অ-ফিলিস্তিনি শাসন মেনে নেবে না। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রস্তাবিত তথাকথিত ‘পিস বোর্ড’ বা শান্তি পর্ষদ নিয়ে জল্পনা-কল্পনার মধ্যেই তিনি এ মন্তব্য করেন।
এদিকে, দ্য ফিনান্সিয়াল টাইমস জানিয়েছে, ট্রাম্পের প্রস্তাবিত এই বোর্ডে যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের অন্তর্ভুক্তির সম্ভাবনা বাতিল করা হয়েছে। ইরাক যুদ্ধে তার বিতর্কিত ভূমিকা এবং আরব ও মুসলিম দেশগুলোর বিরোধিতার কারণে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। হামাসও এর আগে ব্লেয়ারকে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যক্তি’ হিসেবে অভিহিত করেছিল।
২০২৩ সালের অক্টোবরে দক্ষিণ ইসরায়েলে হামলার সময় আটক করা ইসরায়েলি জিম্মিদের একজন ছাড়া বাকি সবাইকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিনিময়ে ইসরায়েলি কারাগার থেকে শত শত ফিলিস্তিনি বন্দীকে গাজায় ফেরত পাঠানো হয়েছে। তবে মুক্তি পাওয়া অনেক ফিলিস্তিনির শরীরে নির্যাতন, অঙ্গহানি এবং আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু দাবি করেছেন, চুক্তির প্রথম ধাপ প্রায় শেষ এবং দ্বিতীয় ধাপ এগিয়ে নিতে তিনি চলতি মাসের শেষে ওয়াশিংটনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
অন্যদিকে মেশাল বলেছেন, দ্বিতীয় ধাপ শুরুর জন্য গাজায় ত্রাণ সহায়তা বাড়ানো অপরিহার্য। হামাসের মূল লক্ষ্য হলো গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের পূর্ণাঙ্গ প্রত্যাহার। বর্তমানে ‘ইয়েলো লাইন’ বা হলুদ রেখার মাধ্যমে গাজার অর্ধেকেরও বেশি এলাকা ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, যা হামাস মেনে নিতে নারাজ।
নিরস্ত্রীকরণ বর্তমানে একটি প্রধান ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইসরায়েল হামাসের নিরস্ত্রীকরণ দাবি করলেও হামাস নেতারা তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান গাজায় আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী গঠনের ইঙ্গিত দিয়েছেন এবং বলেছেন নিরস্ত্রীকরণ প্রথম ধাপে সম্ভব নয়। মিশরও ইসরায়েলি লঙ্ঘন তদারকির জন্য দ্রুত গাজায় পর্যবেক্ষক পাঠানোর ওপর জোর দিয়েছে।
ডিবিসি/এনএসএফ