সৌদি আরবের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা বহুদিন ধরেই করে আসছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। দেশ দুটির মধ্যে চুক্তি প্রায় চূড়ান্তই করে ফেলেছিল মার্কিন সরকার। তবে গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যার কারণে সব ভেস্তে যায়। কিন্তু এই চুক্তি নিয়ে এখনো আশা ছেড়ে দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। চেষ্টা করছে বাইডেন হোয়াইট হাউস ছাড়ার আগেই যেন চুক্তিটি হয়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে এই চুক্তি আলোচনা নিয়ে নতুন এক তথ্য দিলো বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
রয়টার্সের খবর অনুযায়ী, ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিনিময়ে ওয়াশিংটনের সঙ্গে একটি উচ্চাভিলাষী সামরিক চুক্তির পরিকল্পনা বাদ দিয়েছে সৌদি আরব। এখন এই চুক্তির বিনিময়ে একটি সীমিত সামরিক সহযোগিতা চুক্তির জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে চাপ দিচ্ছে রিয়াদ। সৌদি ও পশ্চিমা কর্মকর্তারা রয়টার্সকে বিষয়টি জানিয়েছেন।
চলতি বছরের শুরুতেও ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে একটি বড় সামরিক চুক্তির দাবি করেছিল সৌদি আরব। তবে এখন তারা তাদের অবস্থান নরম করেছে। রিয়াদ ওয়াশিংটনকে জানিয়েছে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতি ইসরায়েলের প্রকাশ্য প্রতিশ্রুতিই দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য যথেষ্ট।
দুটি সৌদি ও তিনটি পশ্চিমা সূত্র জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলের সামরিক পদক্ষেপের কারণে সৌদি আরব ও মধ্যপ্রাচ্যের জনগণের মধ্যে তীব্র ক্রোধ বিরাজ করছে। তাই ইসরায়েলকে স্বীকৃতির বিষয়টি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সঙ্গে যুক্ত করেছেন ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান।
অন্যদিকে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এখননো সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়টি একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক এবং আরব বিশ্বের কাছ থেকে বৃহত্তর গ্রহণযোগ্যতার লক্ষণ হিসাবে দেখছেন। এমনটাই বলছেন পশ্চিমা কূটনীতিকরা। তবে হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলার পর ফিলিস্তিনিদের প্রতি যেকোনো ছাড় দেয়ার বিষয়ে নিজ দেশে প্রচণ্ড বিরোধিতার মুখোমুখি হচ্ছেন তিনি। এমনকি তিনি এ-ও জানেন, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার যেকোনো ইঙ্গিত দিলে তার ক্ষমতাসীন জোট সরকার ভেঙে যাবে।
রিয়াদ ও ওয়াশিংটন আশা করছে, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন হোয়াইট হাউস ছাড়ার আগে জানুয়ারির মধ্যে একটি সীমিত প্রতিরক্ষা চুক্তি সই হতে পারে। তবে সম্পূর্ণ যুক্তরাষ্ট্র-সৌদি চুক্তি মার্কিন সিনেটে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে হবে। তবে রিয়াদ ইসরায়েলকে স্বীকৃতি না দিলে শুরুতেই এই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে।
এদিকে বর্তমানে আলোচনায় থাকা চুক্তিতে যৌথ সামরিক মহড়া ও প্রশিক্ষণ বাড়ানোর মাধ্যমে আঞ্চলিক হুমকি, বিশেষ করে ইরানের মোকাবিলা অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এতে মার্কিন এবং সৌদি প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অংশীদারিত্ব তৈরি করা হবে এবং চীনের সঙ্গে সহযোগিতা প্রতিরোধে সুরক্ষার ব্যবস্থা থাকবে বলে সূত্র জানিয়েছে।
চুক্তিটি উন্নত প্রযুক্তি, বিশেষত ড্রোন প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সৌদি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করবে। যুক্তরাষ্ট্র প্রশিক্ষণ, লজিস্টিকস ও সাইবার নিরাপত্তা সহায়তার মাধ্যমে রিয়াদে নিজের উপস্থিতি বাড়াবে এবং মিসাইল প্রতিরক্ষা ও সমন্বিত প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে একটি প্যাট্রিয়ট মিসাইল ব্যাটালিয়ন মোতায়েন করতে পারে।
তবে এটি এমন একটি বাধ্যতামূলক পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি হবে না যা বিদেশি আক্রমণের ক্ষেত্রে বিশ্বের বৃহত্তম তেল রপ্তানিকারক দেশকে সুরক্ষার জন্য মার্কিন বাহিনীকে বাধ্য করবে।
সৌদি আরবের থিংক-ট্যাংক প্রতিষ্ঠান গালফ রিসার্চ ইনস্টিটিউট-এর প্রধান আবদেল আজিজ আল-সাঘির বলেন, সৌদি আরব একটি নিরাপত্তা চুক্তি পাবে। এর ফলে দেশটি আরও মার্কিন সামরিক সহযোগিতা ও অস্ত্র কেনার সুযোগ পাবে। তবে প্রথমে সৌদি জাপান বা দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যে চুক্তি সেই ধরনের চুক্তির দাবি করলেও তা পাবে না।
ডিবিসি/ এসকেবি