সুদ শোষণের হাতিয়ার । যে কারণে ইসলামে সুদ পরিপূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। আল কোরআনে আল্লাহতায়ালা একমাত্র সুদখোর ছাড়া আর কারও বিরুদ্ধে স্বয়ং যুদ্ধের ঘোষণা দেননি।
সুদের প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘হে ইমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো আর সুদের যা কিছু অবশিষ্ট আছে তা পরিত্যাগ করো, যদি তোমরা ইমানদার হয়ে থাকো। আর যদি তোমরা তা না করো, তাহলে তোমরা আল্লাহ ও তার রসুলের পক্ষ থেকে যুদ্ধের ঘোষণা শোনো।’ সুরা বাকারা।
সুদ খাওয়া যে আল্লাহর কাছে কত বড় অন্যায়, তা উপলব্ধি করার জন্য উল্লিখিত আয়াত দু’টিই যথেষ্ট। এই সুদ ব্যবস্থা সমাজে দরিদ্রতা, ঋণ পরিশোধে অক্ষমতা, অর্থনৈতিক স্থবিরতা বা সমস্যা, বেকারত্ব, বহু কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানের দেউলিয়াত্ব ইত্যাদির মতো কত যে জঘন্য ক্ষতি ও ধ্বংসের দিকে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রকে ঠেলে দিচ্ছে, তা একমাত্র এ বিষয়ে গবেষণাকারীরাই যথাযথভাবে উপলব্ধি করতে সক্ষম।
একজন দিনমজুর সারা দিন হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে শরীরের ঘাম ঝরিয়ে যা উপার্জন করে, তা ব্যাংকে বা বিভিন্ন খাতে সুদ পরিশোধ করতেই শেষ হয়ে যায়। সুদের ফলে সমাজে লুটেরা শ্রেণির মানুষের উদ্ভব ঘটে। কিছুসংখ্যক ব্যক্তির হাতে অধিকাংশ অর্থসম্পদ পুঞ্জীভূত হয়ে পড়ে। অন্যদিকে, সমাজের বা দেশের গরিব-দুঃখী মানুষেরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। সম্ভবত এজন্যই আল্লাহতায়ালা সুদ কারবারিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা করেছেন।
সুদ কারবারের সঙ্গে জড়িত, মধ্যস্থতাকারী ও সহযোগিতাকারী- সবাইকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভিশাপ বা বদদোয়া করেছেন। জাবির (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুদগ্রহীতা, সুদদাতা, সুদের লেখক আর সুদের সাক্ষীকে অভিশাপ বা বদদোয়া দিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, তারা সবাই সমান অপরাধী। আর এ কারণেই সুদের হিসাব-নিকাশ লেখা, কাউকে সুদ দেওয়া বা নেওয়ার ব্যাপারে সহযোগিতা করা, সুদের দ্রব্য গচ্ছিত বা আমানত রাখা আর সুদি মালপত্রের পাহারা দেওয়া সবই নাজায়েজ। মোট কথা সুদের কাজে অংশগ্রহণ আর যেকোনোভাবে সুদের সাহায্য-সহযোগিতা করা সবই হারাম।
সুদের কঠিন ভয়াবহতা সম্পর্কে আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘সুদের ৭৩টি দরজা বা স্তর রয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে সহজ স্তরটি হলো- আপন মায়ের সঙ্গে জেনা করার সমতুল্য। আর সবচেয়ে কঠিন স্তরটি হলো- কোনো মুসলিম ব্যক্তিকে অপমান-অপদস্থ করা।’