নদী ভাঙ্গণে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের চর ইউনিয়ন কাপাসিয়ার নয়টি ওয়ার্ডই লন্ডভন্ড। ভাঙ্গনে ভিটেমাটি জমি জমা হারানো মানুষগুলো তিস্তার ছোবল থেকে বাঁচতে ক্রমাগত সরতে সরতে এখন কোনঠাসা। খুশির ঈদ যতই এগিয়ে আসছে ততই অভাবী মানুষগুলোর কপালের ভাঁজ চওড়া হচ্ছে।
গ্রামের নাম পুঁটিমারী আর ভাটি কাপাসিয়া। নাম আলাদা হলেও ভাঙ্গণে এই দুই গ্রামের দূরত্ব কমেছে। বেশির ভাগ মানুষই দিন আনা দিন খাওয়া। এই দুই গ্রামের মাঝখানে অন্যের জায়গায় ঘর তুলে থাকেন শাহ জামাল-মাজেদা দম্পতি আর তাদের ৯ ছেলে মেয়ে । সবমিলিয়ে ১১টি মুখ।
অন্ন সংস্থান করতে ঢাকায় একটি ইঁটখোলায় কাজ করতে গেছেন শাহ জামাল। প্রতিবন্ধী মেয়ে শাহেনা আর অন্য ছেলে মেয়েদের নিয়ে মাজেদা মহা সংকটে । স্বামী কখনও সামান্য টাকা পাঠান, কখনও পাঠাতে পারেন না। এ বছর তার আসা হবে কিনা তাও অনিশ্চিত । ঈদের কথা শুনে তার বুক ভেঙ্গে আসা দীর্ঘশ্বাস স্পষ্ট টের পাওয়া যায়। বাচ্চারাও তাকিয়ে আছে বাবার আসার পথের দিকে।
ভাল নেই ওই গ্রামের বাকি তিন’শ পরিবারের বেশির ভাগ। হতদরিদ্র এ সব পরিবারের পুরুষরা ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় রিক্সা টানেন, ইঁট ভাঙ্গেন, কৃষি শ্রমিকের কাজ করেন। এলাকায় যারা থাকেন তারা কৃষিক্ষেত্র ছাড়াও দিনমজুরী করে সংসার চালান। নারীরাও আশেপাশের এলাকায় কাজকর্ম করেন। কিন্তু প্রতিদিন যা আয় করেন তা দিয়ে প্রতিদিনের খরচই চালানো মুশকিল। ঈদের কথায় তাদের কন্ঠে কখনও দু:খের সুর, কখনও ক্ষুব্ধতা।
কাপাসিয়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মঞ্জু মিয়া জানান, কাপাসিয়া ইউনিয়নের ৯০ ভাগ মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে। ঈদের জন্য ২৯০০ ভিজিএফ কার্ড বিলি করা হবে। তবে চাহিদার তুলনায় তা অনেক কম।
কাপাসিয়া ইউনিয়নের এই সব হতদরিদ্র মানুষ এক সময় ফসলী জমি, নিজের বসতভিটায় স্বচ্ছল দিন কাটাতেন। সময়ের সাথে সাথে আগ্রাসী তিস্তার ভয়াবহ ভাঙ্গণে তারা এখন পথের মানুষ। এই ইউনিয়নে প্রায় ১২ হাজার মানুষ বাস করেন। শুধু কাপাসিয়া নয়, ওই উপজেলার বেলকা, তারাপুর , রামজীবন, শ্রীপুর, হরিপুর ইউনিয়ের চর গ্রামের মানুষের একই অবস্থা।