জীবনানন্দ দাশের মতো জীবনের অসামান্য কোনো সাফল্যেও নিস্পৃহ ও শীতল থাকেন কেউ কেউ। খুব তুচ্ছ বিষয় নিয়ে মুগ্ধ হওয়ার ক্ষমতা নিয়ে জন্মান অনেকে। যান্ত্রিক জীবনের চাপ থেকে মুক্ত থাকতে কিছুটা উদাসীনতা মাঝে মাঝে দরকার।
পথের ধারে অযত্নে বেড়ে ওঠা নাম–না জানা ফুল কিংবা নদীতীরের ঢেউখেলানো কাশফুল কিংবা শুক্লপক্ষের পূর্ণিমার চাঁদ, দেখে বিষ্ময়ে চোখ জ্বলজ্বল করে ওঠে অনেকের। আবার কেউ কেউ আছেন, কিছুতেই যাঁদের কিছু যায় আসে না। দুই ধরনের উদাস মানুষই আছেন চারপাশে।
জগতের সব মূর্ত-বিমূর্ত বিষয়ের প্রতি অনেকের অপার উদাসীনতা। তাজমহলের মতো বিপুল সৌন্দর্যের সামনে দাঁড়িয়েও নির্বিকার গলায় বলে ওঠেন - হৈ হৈ করার মত এ আর এমন কী! আবার অনেকে একটা মাটির পুরোনো ঘর দেখলেও অপার বিস্ময়ে চেয়ে থাকেন।
জানালা ভেদ করে আসা সূর্যর প্রথম কিরণে মুগ্ধ হন কেউ আবার কেউ বলেন প্রকৃতির স্বাভাবিক প্রক্রিয়া এটি। খুব স্বাভাবিকভাবে বলে দিতে পারেন - ‘জীবনের বিবিধ অত্যাশ্চর্য সফলতার উত্তেজনা/ অন্য সবাই বহন করে করুক; আমি প্রয়োজন বোধ করি না’।
চূড়ান্ত ব্যর্থতা, আকাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের মৃত্যু বা সমূহ ধ্বংসের কিনারে দাঁড়িয়েও তুড়ি মেরে তারা বলে উঠতে পারেন, ব্যাপার না! তাঁদের কেউ কেউ হয়তো বৈশিষ্ট্যগতভাবে উদাসীনতা নিয়ে জন্মান। আবার কেউ যাপিত জীবনের চক্করে পড়ে এমন হয়ে ওঠেন।
জীবন-জগতের প্রতি এই চরম ঔদাসীন্য ভালো নাকি ভালো নয়, তা হয়তো তর্কসাপেক্ষ। কিন্তু মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের এই দিককে তো অস্বীকারের উপায় নেই। ভালো-মন্দের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে উদাসীন মানুষটিকে বাতিল করে দেওয়ার উপায়ও নেই।
আপনি খুব সিরিয়াস হোন কিংবা উদাসীন হোন; আজকের দিনটা একটু বিশেষ উদাসীনতার সঙ্গে কাটাতেই পারেন। কেননা, আজকের দিনটা যে উদাসীনতার। আজ ২৫ নভেম্বর, উদাস দিবস। টমাস ও রুথ রয় নামের এক মার্কিন দম্পতির হাত ধরে দিবসটির চল হয়। উদাসীনতাকে উদ্যাপনের জন্যই মূলত এমন দিনের প্রবর্তন করেন তাঁরা।
জীবনানন্দের কথা ধার করে বলতে পারেন - আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ/হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
/নক্ষত্রের নিচে।