জাতীয়

একুশের যা কিছু প্রথম

মুজাহিদ অভিমন্যু

ডিবিসি নিউজ

সোমবার ২১শে ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৬:৩০:২৯ অপরাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

কৃষ্ণচূড়ার লাল আপনাকে কতটা বিমোহিত করে? কতটা আনমনা হন পলাশের রূপ দেখে! পিচঢালা কাল পথ যখন রক্ত লাল কৃষ্ণচূড়ায় ঢেকে যায়, পথ চলতে গিয়ে একবারও কি মনে হয়, এই পথেই মিশে আছে সালাম, বরকতের রক্ত?

ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি, এই মাস এলেই আমাদের ভাষাপ্রেমে জোয়ার আসে, মাস ফুরলেই ভাটা। ১৯৫২ সালের ২১ যদি না হতো, যদি ভাষার দাবিতে রাজপথ রক্ত-পিচ্ছিল না হতো, তবে এই যে আপনি চাইলেই গলা ছেড়ে গান গাইতে পারছেন, উচ্চারণ করতে পারছেন আত্মমগ্ন কবিতা, কিংবা মিছিলে বজ্রমুষ্ঠি উঁচিয়ে স্লোগানে প্রকম্পিত করছেন রাজপথ, তা আর হতো না। আপনাকে মনের ভাব প্রকাশ করতে হতো পাকিস্তানিদের চাপিয়ে দেয়া ভাষায়।

২১ আমাদের অজস্র সৃষ্টির কেন্দ্রবিন্দু্। ২১শে ফেব্রুয়ারিকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয়েছে সহস্র গান, কবিতা, গল্প, উপন্যাস। আমরা কী জানি কোনগুলো ২১ কেন্দ্রিক প্রথম রচনা? আমরা কতটা জানি ২১'র ইতিহাস? অথচ ২১ না এলে ৭১ হতো না। বিভাগ উত্তর পাকিস্তান রাষ্ট্রের আধিপত্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে বাঙালির প্রথম হুঙ্কার ৫২’র ২১শে ফেব্রুয়ারি। নিজেদের অধিকারবোধ, স্বাধীকার চিন্তার বীজ এই আন্দোলনের মাধ্যমেই রোপিত হয়েছে বাঙালির মনে। অথচ আমরা জানিই না ২১’র ইতিহাস। জানি না ২১’র প্রথম সৃষ্টিগুলো সম্পর্কে।

২১’র প্রথম সৃষ্টিগুলো:

একুশের প্রথম শহীদ

ভাষা আন্দোলনের প্রথম শহীদ মানিকগঞ্জ দেবেন্দ্র কলেজের আইকম দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র রফিক উদ্দিন আহমেদ। ২৬ বছর বয়সী রফিক ছিলেন বাদামতলী কমার্শিয়াল প্রেসের মালিক আবদুল লতিফ ও রাফিজা খাতুন দম্পতির বড় সন্তান। সিংগাইর উপজেলার পারিল বলধারা গ্রামের রফিক ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের সম্মুখের রাস্তায় ১৪৪ ধারা ভেঙে ছাত্র-জনতার মিছিলে অংশ নেন। বিকেল সোয়া ৩টায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হোস্টেল প্রাঙ্গণে পুলিশ গুলি চালালে রফিকের মাথায় গুলি লাগে। এতে মাথার খুলি উড়ে গেলে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। রাত ৩টায় সামরিক বাহিনীর প্রহরায় প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট ওবায়দুল্লাহর উপস্থিতিতে আজিমপুর মসজিদের ইমাম হাফেজ আবদুর গফুর তাঁর জানাজা পড়ান। আত্মীয়স্বজনের অজ্ঞাতে আজিমপুর কবরস্থানের অসংরক্ষিত এলাকায় দাফন করা হয় শহীদ রফিককে।

প্রথম ইশতেহার

একুশে ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলিবর্ষণের পর ওই দিনই পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টির পূর্ববঙ্গ কমিটি ‘অত্যাচারী নূরুল আমীন সরকারের বর্বর হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে সারা পূর্ববঙ্গব্যাপী তুমুল ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়িয়া তুলুন’ শীর্ষক একটি ইশতেহার প্রচার করে। সাইক্লোস্টাইলের ওই ইশতেহারই একুশের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে প্রথম ইশতেহার।

প্রথম প্রকাশ্য জনসভা

একুশের শহীদদের স্মরণে ২২শে ফেব্রুয়ারি গায়েবানা জানাজার পর একটি সংক্ষিপ্ত সভা হয়। একুশের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে প্রথম প্রকাশ্য জনসভা এটি। এতে সভাপতিত্ব করেন যুবলীগের তৎকালীন যুগ্ম সম্পাদক মহম্মদ এমাদুল্লাহ। সভাপতির ভাষণে তিনি দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান। সভাপতির ভাষণের আগে অলি আহাদই বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘নূরুল আমীন সরকারের হত্যার জবাব দিব ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মারফত, মাতৃভাষা বাংলাকে পূর্ণ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠার দ্বারা।’

প্রথম নাটক

ভাষা আন্দোলনে জড়িত থাকার অভিযোগে রণেশ দাশগুপ্ত, মুনীর চৌধুরীসহ অনেক লেখক-সাংবাদিকই তখন জেলে। শহীদ দিবসে রাজবন্দিদের অভিনয় উপযোগী করে ভাষা আন্দোলনের ওপর একটি নাটক লিখে দেওয়ার অনুরোধ করে মুনীর চৌধুরীকে একটি চিরকুট পাঠান রণেশ দাশগুপ্ত। মুনীর চৌধুরী ৫৩ সালের ১৭ই জানুয়ারি নাটকটি লিখে শেষ করেন। ওই বছরের ২১শে ফেব্রুয়ারি, রাত ১০টায় জেলকক্ষগুলোর বাতি নিভিয়ে দেওয়ার পর হ্যারিকেনের আলো-আঁধারিতে মঞ্চস্থ হয় কবর। অভিনয়ে অংশ নেন বন্দি নলিনী দাস, অজয় রায় প্রমুখ। এটিই ভাষা আন্দোলনের প্রথম নাটক।

প্রথম সিনেমা

'জীবন থেকে নেয়া' একুশের চেতনানির্ভর প্রথম সিনেমা। ১৯৭০ সালের এই সিনেমাটি পরিচালনা করেন জহির রায়হান। সিনেমাটি সে সময় ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। স্বাধীনতা আন্দোলনে অনবদ্য ভূমিকা রাখে সিনেমাটি।

প্রথম উপন্যাস

জহির রায়হান রচিত 'আরেক ফাল্গুন' একুশের প্রথম উপন্যাস। উপন্যাসটি প্রথমে পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। পুস্তক হিসেবে প্রকাশিত হয় ১৯৬৯ সালে।

প্রথম কবিতা সংকলন

একুশের প্রথম কবিতার সংকলন ‘ওরা প্রাণ দিল’ ১৯৫২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কলকাতা থেকে প্রথম প্রকাশিত হয়। বিশ পৃষ্ঠার এ সংকলনটির প্রকাশক ছিলেন শিবব্রত সেন। প্রচ্ছদে কাঠের খোদাই করা উডকাট চিত্রে লেখা ছিল, ‘বাংলা ভাষার কণ্ঠরোধ করা চলবে না।’ প্রচ্ছদ এঁকেছিলেন ভারতের খ্যাতিমান চিত্রশিল্পী সোমনাথ হুড়। বিমল চন্দ্র ঘোষ, সৈয়দ আবুল হুদা, হেমাঙ্গ বিশ্বাস, মুর্তজা বশীর, নিত্য বসু, তানিয়া বেগম ও প্রমথ নন্দী এই ৭ জনের কবিতা স্থান পেয়েছিল সংকলনে।

প্রথম ক্রোড়পত্র ও স্কেচ

১৯৫২ সালের ২২শে ফেব্রুয়ারি একুশের প্রথম ক্রোড়পত্র এবং প্রথম স্কেচ প্রকাশিত হয়। তৎকালীন দিলরুবা পত্রিকার প্রকাশক ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেন। স্কেচ আঁকেন শিল্পী আমিনুল ইসলাম। লেখেন ফয়েজ আহমদ এবং আবদুল্লাহ আল মুতী শরফুদ্দীন। বিকেল পাঁচটার মধ্যে কাগজ ছাপা হয়ে যায় এবং পত্রিকার কর্মীরাই রাজপথে কাগজগুলো বিলি করেন। সন্ধ্যা ৬টা থেকে কারফিউ থাকায় ৬টার আগেই হাতে হাতে কাগজ বিলি করা হয়ে যায়।

একুশের প্রথম ছাপচিত্র

৫২’র প্রথম ছাপচিত্র আঁকেন মুর্তজা বশীর। ছাপচিত্রটির শিরোনাম ছিল 'রক্তাক্ত একুশে'। মুর্তজা বশীর ২১শে ফেব্রুয়ারির ছাত্রহত্যার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে তাঁর এই ছাপচিত্রটিতে তিনি এঁকেছেন একুশের ঘটনা। ছাপচিত্রটিতে দেখা যায়, একজন ছাত্রনেতা মিছিলে গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে যান, পড়ে যায় তার স্লোগান সংবলিত প্ল্যাকার্ডটি। হাতে থাকা বইটিও মাটিতে পড়ে রক্তাক্ত হয়ে যায়।

পূর্ববঙ্গ পরিষদে প্রথম বক্তব্য

‘জনাব স্পিকার সাহেব, প্রশ্নোত্তরের পূর্বে আমি আপনার কাছে একটা নিবেদন করতে চাই। যখন দেশের ছাত্ররা, যারা আমাদের ভাবী আশা-ভরসাস্থল, পুলিশের গুলির আঘাতে জীবনলীলা সাঙ্গ করছে, সেই সময় আমরা এখানে বসে সভা করতে চাই না। প্রথমে ইনকোয়ারি, তারপর হাউজ চলবে।’ আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ এর এই বক্তব্যই একুশে ফেব্রুয়ারি ছাত্রহত্যার প্রতিবাদে আইন পরিষদে প্রথম বক্তব্য।

আইন পরিষদ থেকে পদত্যাগকারী প্রথম সদস্য

একুশের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ২২শে ফেব্রুয়ারি পূর্ববঙ্গ পরিষদের সদস্যপদ থেকে প্রথম পদত্যাগ করেন দৈনিক আজাদ সম্পাদক আবুল কালাম শামসুদ্দীন। গভর্নর ও পরিষদের স্পিকারকে লেখা একটি চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, ‘বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা দাবি করায় ছাত্রদের ওপর পুলিশ যে বর্বরতার পরিচয় দিয়াছে, তাহার প্রতিবাদে আমি পরিষদে আমার সদস্যপদ হইতে পদত্যাগ করিতেছি। যে নূরুল আমীন সরকারের আমিও একজন সমর্থক, এ ব্যাপারে তাহাদের ভূমিকা এত দূর লজ্জাজনক যে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত এই দলের সহিত সংযুক্ত থাকিতে এবং পরিষদের সদস্য হিসাবে বহাল থাকিতে আমি লজ্জাবোধ করিতেছি।’

প্রথম নিয়ন্ত্রণকক্ষ

একুশে ফেব্রুয়ারি ছাত্রদের ওপর গুলিবর্ষণের পর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র-জনতার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হোস্টেলের ২০ নম্বর ব্যারাকের ১ নম্বর কক্ষে স্থাপন করা হয় নিয়ন্ত্রণকক্ষ বা কন্ট্রোল রুম। ওখান থেকেই পরিচালিত হতে থাকে আন্দোলন। ওই কক্ষ থেকেই মাইকে জ্বালাময়ী বক্তৃতা, উদ্দীপনামূলক গান এবং আন্দোলনের নানাবিধ কর্মসূচি ঘোষণা করা হতো। মাইকটি লাগানো হয়েছিল ব্যারাকের উত্তর-পশ্চিম কোণায় অবস্থিত আমবাগানের ডালে, একেবারে পরিষদ ভবনের নাকের ডগায়।

প্রথম লিফলেট

একুশে ফেব্রুয়ারির ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ওই দিনই সন্ধ্যায় আলাউদ্দিন আল আজাদ, মুস্তফা নূরউল ইসলাম, ফজলে লোহানী, হাসান হাফিজুর রহমান পাটুয়াটুলির সওগাত অফিসের বিপরীত গলিতে অবস্থিত পাইওনিয়ার প্রেসে গিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে একটি বুলেটিন তৈরি করেন। ‘বিপ্লবের কোদাল দিয়ে আমরা অত্যাচারী, শাসকগোষ্ঠীর কবর রচনা করব’ এই শিরোনামে বুলেটিনটি লিখেছিলেন আলাউদ্দিন আল আজাদ। এটি ছাপানোর দায়িত্ব পালন করেন হাসান হাফিজুর রহমান। প্রায় দুই-তিন হাজার লিফলেট ছাপানো হয়েছিল। উৎসাহী ছাত্ররাই এ লিফলেটগুলো চারদিকে ছড়িয়ে দেয়।

প্রথম মিছিল

২২শে ফেব্রুয়ারি গায়েবানা জানাজা শেষে সমবেত হাজার হাজার মানুষ মিছিল নিয়ে হাইকোর্টের পথ ধরে নবাবপুর রোডের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’, ‘খুনি নূরুল আমীনের বিচার চাই’, ‘খুনের বদলে খুন চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দিয়ে মিছিলটি হাইকোর্টের গেটের সামনে উপস্থিত হয়। এটি ভাষা আন্দোলনের পর প্রথম প্রকাশ্য মিছিল।

প্রথম শহীদ মিনার

১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রনেতা গোলাম মওলা ও তাঁর সহযোগীদের উদ্যোগে ভাষা শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে প্রথম একটি মিনার তৈরি করা হয়। স্তম্ভটি গড়ার কজে সহায়তা করেন প্রায় ৩০০ মানুষ। এদের বেশির ভাগই ছিলেন মেডিক্যালের ছাত্র। ২৩শে ফেব্রুয়ারি নির্মাণ কাজ শেষ হয়। এই স্তম্ভের মূল নকশা করেছিলেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র বদরুল আলম। নকশা থেকে শুরু করে নির্মাণ পর্যন্ত প্রায় প্রতিটি স্তরের সঙ্গে জড়িত ছিলেন মেডিক্যালের আরেক ছাত্র সাঈদ হায়দার। তৈরির তিন দিন পর ২৬শে ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানি বাহিনী মিনারটি ভেঙে ফেলে। নিয়ে যায় শহীদ মিনারের ধ্বংসাবশেষও।

শহীদ মিনার ধ্বংসের প্রতিবাদে প্রথম কবিতা

‘স্মৃতির মিনার ভেঙেছে তোমার? ভয় কি বন্ধু আমরা এখনো চার কোটি পরিবার খাড়া রয়েছি তো। যে-ভিৎ কখনো কোনো রাজন্য পারেনি ভাঙতে।’ প্রথম শহীদ মিনার ধ্বংসের প্রতিক্রিয়ায় কবি আলাউদ্দিন আল আজাদ রচনা করেন ’স্মৃতিস্তম্ভ’ নামের এই কবিতাটি। শহীদ মিনার ভাঙার প্রত্যক্ষ সাক্ষী আলাউদ্দিন আল আজাদ ইকবাল হলে বসে এই কবিতাটি রচনা করেন।

একুশের প্রথম গান

ভাষা সৈনিক আ ন ম গাজিউল হক 'ভুলব না, ভুলব না, একুশে ফেব্রুয়ারি ভুলব না' এই শিরোনামে ভাষা আন্দোলনভিত্তিক প্রথম গান রচনা করেন। গানটি প্রথম গাওয়া হয় ১৯৫৩ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ঢাকার আর্মানিটোলা ময়দানের জনসভায়।

প্রভাত ফেরির প্রথম গান

১৯৫৩ সালের ২০শে ফেব্রুয়ারি রাতে প্রকৌশলী মোশাররফ উদ্দীন আহমদ প্রথম প্রভাত ফেরিতে গাওয়ার জন্য 'মৃত্যুকে যারা তুচ্ছ করিল ভাষা বাঁচাবার তরে, আজকে স্মরিও তারে’ গানটি রচনা করেন। গানের সুর করেন আলতাফ মাহমুদ। প্রথম কণ্ঠ মেলান শিল্পী সংসদের নিজামুল হক, মোমিনুল হক, ছাত্রনেতা গাজীউল হক।

একুশের প্রথম কবিতা

'কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি', এই কবিতাটি ২১শে ফেব্রুয়ারি নিয়ে রচিত প্রথম কবিতা। মাহবুবুল আলম চৌধুরী ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৭টায় কবিতাটি রচনা করেন। ২২শে ফেব্রুয়ারি হারুনুর রশিদ চৌধুরী কবিতাটি চট্টগ্রামের লালদিঘী ময়দানে পাঠ করেন। ১৭ পৃষ্ঠা দীর্ঘ এ কবিতাটি ছাপা হয় আন্দরকিলার কোহিনুর প্রেস থেকে। এর দাম রাখা হয়েছিলো দুই আনা।

প্রথম বই

একুশে ফেব্রুয়ারির রক্তাক্ত ঘটনার তিন মাস পর ভাষা আন্দোলন ও একুশের ইতিহাস নিয়ে প্রথমবারের মতো লেখা হয় ‘ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস’। বইটির সম্পাদক অধ্যাপক আবুল কাসেম। ৫২ সালের জুন মাসে ‘আমাদের প্রেস’থেকে মুদ্রিত এবং তমদ্দুন লাইব্রেরি থেকে প্রকাশিত হয় বইটি।

ভাষা আন্দোলনের প্রথম গল্প

ভাষাসৈনিক ও কথাশিল্পী শাহেদ আলীর ‘মন ও ময়দান‘ গল্পটি ভাষা আন্দোলন স্মরণে লিখিত প্রথম গল্প। সাপ্তাহিক সৈনিকের ‘ঈদ ও আজাদী দিবস’ সংখ্যায় গল্পটি প্রথম প্রকাশ হয়।

একুশের প্রথম গল্প

কথাশিল্পী শওকত ওসমানের ‘মৌন নয়ন’ একুশের প্রথম গল্প। ১৯৫৩ সালে প্রকাশিত একুশের প্রথম সংকলন ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ প্রন্থে গল্পটি প্রথম প্রকাশিত হয়।

একুশের প্রথম স্মরণিকা

একুশের প্রথম স্মরণিকা ১৯৫৩ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি প্রকাশ হয় ঢাকা কলেজ ছাত্রাবাসের পক্ষ থেকে। চার পৃষ্ঠার পুস্তিকাটিতে ছাপা হয় আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর লেখা ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গান, ‘আমাদের কথা’ ও ‘ভুলি নাই রক্তরাঙা একুশের কথা’ শিরোনামের নিবন্ধ। স্মরণিকাটি উৎসর্গ করা হয় মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার সংগ্রামে প্রাণ দেয়া বীর শহীদদের স্মরণে। আবেদনও ছিলঃ ‘নিজে পড়িয়া অপরকে পড়িতে দিন’ এমন আবেদন ছিল পুস্তিকাটিতে।

একুশের প্রথম সংকলন

হাসান হাফিজুর রহমানের সম্পাদনায় একুশের প্রথম সংকলন ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ প্রকাশিত হয়। ১৯৫৩ সালে পুঁথিপত্র থেকে এটি প্রকাশ করেন বিশিষ্ট রাজনৈতিককর্মী মোহাম্মদ সুলতান। এই সংকলনের অলংকরণ করেন মুর্তজা বশীর। হাসান হাফিজুর রহমানের অনুরোধে নিজ হাতে উৎসর্গপত্র লিখে দেন আনিসুজ্জামান। ক্রাউন সাইজের ১৮৩ পৃষ্ঠার এ সংখ্যাটির দাম রাখা হয়েছিল দুই টাকা আট আনা। মায়ের গয়না বিক্রি করে সংকলনটি প্রকাশের টাকা জোগাড় করেছিলেন হাসান হাফিজুর রহমান।

প্রথম আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস

২০০০ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি প্রথম আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করা হয়। জাতিসংঘের ১৮৮টি দেশ একসঙ্গে প্রথম ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করে। এর আগে ১৯৯৯ সালের ১েই নভেম্বর জাতিসংঘের সংস্থা ইউনেস্কো আনুষ্ঠানিকভাবে দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা দেয়।

আরও পড়ুন