বাংলাদেশ, জেলার সংবাদ

'এক নারী'কে দায়ী করে সুইসাইড নোট লিখে হোটেলরুমে পর্যটকের আত্মহত্যা

কক্সবাজার প্রতিনিধি

ডিবিসি নিউজ

বুধবার ৩রা আগস্ট ২০২২ ০৩:৩৩:৪১ অপরাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

কক্সবাজার শহরে আবাসিক হোটেল কক্ষ থেকে এক 'পর্যটকের' মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ সময় মৃতের নিজ হাতে লেখাএকটি সুইসাইড নোট পাওয়া গেছে। এতে আত্মহত্যার জন্য 'এক নারীকে' দায়ী করার পাশাপাশি তার সুইসাইড নোটটি সংশ্লিষ্ট থানায় 'অভিযোগ' হিসেবে নথিভূক্ত করে ব্যবস্থা নিতে উল্লেখ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টায় কক্সবাজার শহরের হোটেল-মোটেল জোন এলাকার 'দ্যা আলম গেস্ট হাউজ' থেকে মৃতদেহটি উদ্ধার করা হয়। আত্মহত্যাকারী মো. কাওছার আলম (৪১) জয়পুরহাট জেলার সদর উপজেলার হানাইল ইউনিয়নের দিঘী পাড়ার মো. মোফাজ্জল হোসেনের ছেলে।

 

আর মৃত্যুর জন্য দায়ী করা 'নারী' নওগাঁ জেলার ধামুইরহাট উপজেলার শাহাপুর এলাকার বাসিন্দা। তবে, সুইসাইড নোটে ওই নারীর বয়স কত এবং ওই নারীর সঙ্গে কি সম্পর্ক তা উল্লেখ নেই।

 

হোটেল কর্তৃপক্ষের বরাতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজাউল বলেন, 'সোমবার বেলা ১২ টায় মো. কাওছার আলম কক্সবাজার পৌঁছে দ্যা আলম গেস্ট হাউজের ৪০৬ নম্বর কক্ষে একা উঠেন। মঙ্গলবার সকালে হোটেলের পরিচ্ছন্ন কর্মিরা কক্ষটিতে গিয়ে তার কোনও ধরনের সাড়া পায়নি। পরে ফিরে এসে তারা (পরিচ্ছন্ন কর্মি) বিষয়টি হোটেলের সংশ্লিষ্টদের অবহিত করেন।

 

"এরপর সন্ধ্যার দিকেও হোটেলের কক্ষটি পরিষ্কার করতে যান পরিচ্ছন্ন কর্মি। কিন্তু, এবারও তারা কোনও ধরনের সাড়া না পেয়ে সংশ্লিষ্টদের অবহিত করলে হোটেল কর্তৃপক্ষের সন্দেহ জাগে। এরপর হোটেল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করে।"

 

ট্যুরিস্ট পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, "খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে কক্ষটির দরজা ভিতর থেকে বন্ধ পায়। পরে দরজা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে পুলিশ সদস্যরা। এ সময় কাওছার আলমকে খাটের উপর শোয়া অবস্থায় পাওয়া যায়। এ সময় মৃতদেহের পাশ থেকে উদ্ধার করা হয়- একটি সুইসাইড নোট।"

 

"কাওছারের মুখ থেকে বিষ জাতীয় কোন কিছুর গন্ধ পাওয়া গেছে। পুলিশ ধারণা করচ্ছে, বিষক্রিয়ায় তার মৃত্যু হয়েছে।"

 

রেজাউল বলেন, 'সুইসাইড নোটে মো. কাওছার আলম নামের এই ব্যক্তি মৃত্যুর জন্য 'নওগাঁ জেলার শাহাপুর এলাকার এক নারীকে' দায়ী করেছেন। এতে ওই নারীকে 'বাজে মেয়ে' বলে মন্তব্য করলেও কেন তাকে আত্মহননের পথ বেছে নিতে হয়েছে তা উল্লেখ নেই। নারীটির সঙ্গে কাওছার এর কি সম্পর্ক তাও উল্লেখ নেই নোটটিতে। এছাড়া আত্মহত্যার কারণ উল্লেখ করেননি।

 

প্রতিবেদকের হাতে আসা সুইসাইড নোটে মো. কাওছার আলম  লিখেছেন- "এসপি/মহোদয়, কক্সবাজার প্রসাসন (প্রশাসন) মহোদয়ের আমার আকুল আবেদন। আমার মৃতদেহটা জেনো (যেন) আমার বাড়ি পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেন। আর আমার ফোনের লক হচ্ছে- ৩৩-৭৭- দুটোতেই মেমোরি কার্ড আছে। তাতে ওই মেয়ের সাথে অনেক ছবি ও কল রেকর্ডিং আছে। তা (মেমোরি কার্ড) দেখে শুনে আইন আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় তা আপনারা, আমার জয়পুরহাট থানাতে পাঠাবেন। এটা আমার অনুরোধ।

 

আমার মৃত্যুর জন্য মোছাঃ মেরিনা দায়ী থাকিল। আমি তাকে আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী করে গেলাম। আপনার তার (অভিযোগের) সু-ব্যবস্থা করিবেন। এইটা (এটা) আমার জিডি বা অভিযোগ যেটাই করা যায়, দয়া করিয়া তাহায় করিবেন।

 

আমি রহমানকে হুমকি দেই নাই, বরং সে আমাকে হুমকি দিয়েছে; ১০ মিনিটেই আমাকে গুম করতে পারে।"

 

সুইসাইড নোটের ডান পাশে নিজের নাম ও পরিচয় উল্লেখ করার পাশাপাশি বাম পাশে রয়েছে অভিযুক্ত নারীর পরিচয়ও। নোটের শেষাংশে অভিযুক্ত নারীকে বাজে মেয়ে বলে মন্তব্য করে কাওছার লিখেছেন, আত্মহত্যার ঘটনার জন্য কারণের সত্যতা প্রমাণের জন্য নাম ও ঠিকানা উল্লেখ করে ৫ জন স্বাক্ষী রেখেছেন।

 

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজাউল করিম জানান, নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। এছাড়া ঘটনার ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।

আরও পড়ুন