টানা এক যুগেরও বেশি সময় ধরে প্রতিদিন ভোরে ঘুম ভেঙে বেরিয়ে পড়েন লাকী আক্তার (৪৫)। তার গন্তব্য মানিকগঞ্জ শহরের খালপাড় এলাকা। কারও সাথে কোনো কথা নয়, হাতে একটি লাঠি, পরনে পুলিশের পোশাকের রঙে তৈরি সালোয়ার-কামিজ। নীরবে দাঁড়িয়ে যানজট নিরসনে ‘ডিউটি’ করেন তিনি, একা।
লাকী আক্তারের বাড়ি মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার কুস্তা গ্রামে। তার বাবা একসময় পুলিশের চাকরি করতেন। ১৯৯৭ সালে বিয়ের পর বছরখানেকের মাথায় সড়ক দুর্ঘটনায় স্বামীকে হারান লাকী। সেই ক্ষত আর কখনো পূরণ হয়নি। ধীরে ধীরে হয়ে পড়েন মানসিক ভারসাম্যহীন।
যে সড়ক কেড়ে নিয়েছে স্বামীর প্রাণ, সে সড়কেই এসে দাঁড়ালেন তিনি। মাথার ছাতি, আর হাতে একটি লাঠি। এই নিয়েই প্রতিদিন খালপাড়ে দাঁড়িয়ে যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। কখনো একা, কখনো ট্রাফিক পুলিশের পাশে। রোদ-বৃষ্টি কিংবা ঝড়, কোনো কিছুই তাকে দমাতে পারে না।
স্থানীয়রা জানান, লাকী আক্তারের ইশারায় অনেক চালকই যানবাহন থামান কিংবা চালান। এতে কিছুটা হলেও যানজট কমে। কেউ কিছু দিলেও তিনি তা নেন না। কারো সঙ্গে ব্যক্তিগত কথাবার্তাও বলেন না।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘লাকী আক্তারের বাবা পুলিশে ছিলেন। হয়তো সেখান থেকেই পুলিশের প্রতি একধরনের টান থেকে গেছে। মানসিক ভারসাম্যহীন হলেও পুলিশের পরিবেশ তাকে নিরাপদ মনে করায়। তাকে একাধিকবার পুনর্বাসনের চেষ্টা করা হলেও সফল হওয়া যায়নি। তিনি প্রতিদিন খালপাড় এলাকায় যানজট নিরসনে কাজ করেন।’
ডিবিসি/এফএইচআর