বিজ্ঞানীদের দৃষ্টিতে আমাদের সৌরজগতের ৮টি গ্রহের পরে সবচেয়ে বড় কিংবা বৃহত্তম অবজেক্ট হচ্ছে গ্যানিমেড (Ganymede)। যা আমাদের সোলার সিস্টেমের গ্রহরাজ জুপিটারের একটি বৃহত্তম উপগ্রহ। আসলে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট এই উপগ্রহটি ১৬১০ সালে গ্যালিলিও গ্যালিলাই তার নিজের তৈরি টেলিস্কোপের সাহায্যে সর্বপ্রথম খুঁজে পান এবং এটি আকারে বুধ গ্রহ থেকেও কিন্তু ৮% বড়।
গ্যানিমেড উপগ্রহের ব্যাস ৫,২৬৮ কিলোমিটার এবং এটি গড়ে ১.০৭ মিলিয়ন কিলোমিটার দূর থেকে বৃহস্পতি গ্রহকে প্রতি ৭ দিন ৩ ঘণ্টায় একবার প্রদক্ষিণ করে। গ্যানিমেড একটি উপগ্রহ হওয়া সত্ত্বেও এর কিন্তু নিজস্ব একটি স্থায়ী চৌম্বকক্ষেত্র রয়েছে। যা আমাদের সোলার সিস্টেমে থাকা মোট প্রায় ১৬৬টি উপগ্রহের মধ্যে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। এই উপগ্রহের বয়স হতে পারে প্রায় ৪.৫০৩ বিলিয়ন বছর।
এই উপগ্রহ প্রায় সমান অনুপাতে সিলিকেট শিলা এবং জলের সমন্বয়ে গঠিত হলেও এর কিন্তু নিজস্ব কোন শক্তিশালী বায়ুমণ্ডল নেই। এই উপগ্রহের একটি পাতলা অক্সিজেনের বায়ুমণ্ডল রয়েছে।
তবে বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এই উপগ্রহে হয়ত অতি জটিল কিংবা অন্য কোন রূপে এলিয়েনের অস্তিত্ব থাকতে পারে। তবে এ নিয়ে বিজ্ঞানীরা কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোন বাস্তব প্রমাণ খুঁজে পাননি।
নাসার বিজ্ঞানীরা এর আগে হাবল স্পেস টেলিস্কোপের সাহায্যে গ্যানিমেড উপগ্রহের ভূগর্ভস্থ নোনা জলের মহাসাগরের অস্তিত্ব খুঁজে পান। যা প্রায় ১০০ কিলোমিটার পুরু বরফ আচ্ছাদিত চাদরের নিচে লুকিয়ে রয়েছে। এই উপগ্রহের ভূপৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা হতে পারে প্রায় মাইনাস - ১৭১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর পৃথিবী থেকে এই উপগ্রহের গড় দূরত্ব হচ্ছে ৬২৮.৩ মিলিয়ন কিলোমিটার।
তাছাড়া গ্যানিমিড উপগ্রহে আসলেই কোন এলিয়েন লাইফের অস্তিত্ব রয়েছে কিনা তা নিয়ে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করার লক্ষ্যে ইউরোপীয়ান স্পেস এজেন্সি গত ২০২৩ সালের ১৪ই এপ্রিল লঞ্চ করে জুপিটার আইসি মুনস এক্সপ্লোরার (জেইউআইসিই) স্পেস মিশন। এই স্পেস-প্রোব বৃহস্পতি গ্রহের পাশাপাশি সেখানে অবস্থান করা তিনটি বরফ আচ্ছাদিত উপগ্রহ ইউরোপা, গ্যানিমিড এবং ক্যালিস্টো উপগ্রহকে একেবারে কাছ থেকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবে।
ইউরোপীয়ান স্পেস এজেন্সি তাদের পরিকল্পনা মাফিক ‘জুস’ স্পেস মিশনের একেবারে শেষের দিকে বরফের চাদরে আচ্ছাদিত বৃহস্পতির সবচেয়ে বড় উপগ্রহ গ্যানিমেডকে পর্যবেক্ষণ করবে। বিশেষ করে আগামী ২০৩১ সালের দিকে এর বরফের চাদরের নিচে লুকিয়ে থাকা সুবিশাল মহাসাগরের বুকে প্রাণের কোন অস্তিত্ব আছে কিনা তা নিয়ে শেষ পর্যন্ত নিবিড় গবেষণা/ পর্যবেক্ষণ করে যাবে তাদের পাঠানো স্পেস-প্রোব।
তথ্যসূত্র: নাসা, উইকিপিডিয়া, ইএসএ।
ডিবিসি/এসএসএস