টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে বিশেষ অবদান রাখার জন্য দেশের ৬০টি উদ্যোগকে সম্মাননা জানানো হয়েছে।
শনিবার (১২ই জুলাই) রাজধানীর র্যাডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেন হোটেলে অনুষ্ঠিত ‘এসডিজি ব্র্যান্ড চ্যাম্পিয়ন অ্যাওয়ার্ডস ২০২৫’-এর তৃতীয় সংস্করণে এই সম্মাননা প্রদান করা হয়।
আর্কিভেশন গ্রুপের পরিবেশনায় এবং এসএমসি এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের সঞ্চালনায় আয়োজিত এই জমকালো অনুষ্ঠানে ৩৫টি বিজয়ী, ২৪টি অনারেবল মেনশন ব্র্যান্ড এবং একজন একক বিজয়ীকে মোট ২২টি ভিন্ন ভিন্ন ক্যাটাগরিতে পুরস্কৃত করা হয়। বাংলাদেশ ইনোভেশন কনক্লেভের এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হলো টেকসই উন্নয়নের জন্য কর্মরত প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বীকৃতি দেওয়া এবং তাদের উৎসাহিত করা।
এবারের আয়োজনে অভূতপূর্ব সাড়া পাওয়া যায়, যেখানে ৫০০ জনেরও বেশি অতিথি উপস্থিত ছিলেন। ২৬ মে থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশন চলাকালে ২২টি ক্যাটাগরিতে মোট ৪৫৭টি মনোনয়ন জমা পড়ে। আটটি গ্র্যান্ড জুরি প্যানেলের ২৭ জন বিশেষজ্ঞের একটি স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিজয়ীদের নির্বাচন করা হয়।
এ বছরের উল্লেখযোগ্য বিজয়ীদের মধ্যে ‘এসডিজি ৮ – ডিসেন্ট ওয়ার্ক অ্যান্ড ইকোনমিক গ্রোথ’ ক্যাটাগরিতে বিজয়ী হয়েছে গ্রামীণ ড্যানোন ফুডস লিমিটেড। তাদের উদ্ভাবনী ‘শক্তি দই কাপ রিসাইক্লিং প্রকল্প’-এর জন্য এই স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। বগুড়াভিত্তিক এই প্রকল্পের মাধ্যমে ব্যবহৃত শক্তি দই-এর কাপ এবং অন্যান্য প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করে বছরে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ পুনর্ব্যবহারযোগ্য ফুড-গ্রেড চামচ তৈরি করা হয়, যা প্রতিটি শক্তি দই-এর সাথে সারাদেশে বিতরণ করা হয়। এই প্রকল্পের প্রায় ৭০% কর্মী গ্রামীণ দরিদ্র পরিবারের নারী, যাদের নিরাপদ পরিবেশে কাজের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এর মাধ্যমে গ্রামীণ নারীরা নিয়মিত আয়ের পাশাপাশি পরিবার ও সমাজে নিজেদের একটি সম্মানজনক স্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী বক্তব্যে বাংলাদেশ ইনোভেশন কনক্লেভের প্রতিষ্ঠাতা এবং বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরিফুল ইসলাম বলেন, “আমরা এখন এমন একটি সময়ে আছি, যেখানে ব্র্যান্ডগুলোকে শুধু প্রতিশ্রুতিতে নয়, কাজের মাধ্যমেও নেতৃত্ব দিতে হবে। এসডিজি ব্র্যান্ড চ্যাম্পিয়ন অ্যাওয়ার্ডস সেইসব ব্র্যান্ডকে স্বীকৃতি দেয়, যারা শুধুমাত্র জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সাথে তাল মিলিয়ে চলছে না, বরং বাস্তব ও অর্থবহ পরিবর্তন আনছে।” তিনি আরও বলেন, এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সাহসী পদক্ষেপকে উৎসাহ দেওয়া এবং পরিবর্তনের শক্তিশালী ধারাগুলোকে ছড়িয়ে দেওয়াই তাদের লক্ষ্য।
এই গালা অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানের পূর্বে দিনব্যাপী ‘সাসটেইনেবিলিটি সামিট ২০২৫’ অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়িক প্রতিনিধি, নীতিনির্ধারক, জলবায়ু ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাবিদ এবং সামাজিক উদ্যোক্তারা অংশগ্রহণ করেন। তিনটি কিনোট সেশন, তিনটি প্যানেল আলোচনা, দুটি ইনসাইট সেশন এবং একটি কেস স্টাডির মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীরা টেকসই উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা করেন এবং পারস্পরিক জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন।
আর্কিভেশন গ্রুপ ও এসএমসি এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানের স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার হিসেবে ছিল ইন্টারন্যাশনাল অ্যাডভারটাইজিং অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ, এশিয়া মার্কেটিং ফেডারেশন ও মার্কেটিং সোসাইটি অব বাংলাদেশ। এছাড়া হসপিটালিটি পার্টনার হিসেবে র্যাডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেন হোটেল ঢাকা, পিআর পার্টনার হিসেবে ব্যাকপেইজ পিআর এবং অফিশিয়াল ক্যারিয়ার পার্টনার হিসেবে টার্কিশ এয়ারলাইন্স যুক্ত ছিল।
ডিবিসি/আরএসএল