বিবিধ, স্বাস্থ্য

এসেক্সুয়ালিটি কী?

Faruque

ডিবিসি নিউজ

মঙ্গলবার ৭ই ডিসেম্বর ২০২১ ০৩:৫৩:৫১ অপরাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

পৃথিবীতে এমন অনেক মানুষ আছেন যারা যৌন সম্পর্ক স্থাপনে কোন আগ্রহ পান না। তারা নারী কিংবা পুরুষ কোন লিঙ্গের মানুষের প্রতিই আকর্ষণ বোধ করেন না। এ ধরণের ব্যাক্তিদের এসেক্সুয়াল বা অযৌনচিত্ত বলা হয়।

এসব এসেক্সুয়াল ব্যক্তিদের অনুভূতিগুলো কেমন হয়? যৌন সম্পর্ক স্থাপনে তাদের এই অনাগ্রহের কারণে তাদের কী ধরণের সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় কিংবা সমাজ বা পরিবার তাদের কী চোখে দেখে?

এসেক্সুয়ালিটি (Esexuality) :
 
নারী ও পুরুষের যৌন চেতনায় বিরাট একটা পার্থক্য আছে তাঁদের এসেক্সুয়ালিটি নিয়ে।
এসেক্সুয়ালিটি হলো একটি সেক্সুয়াল অরিয়েন্টেশন যা ১% এর কাছাকাছি নরনারী LGBTQ-এর মতই জন্মগত ভাবে পেয়ে থাকে।
এদের বৈশিষ্ট হলো, এঁরা কোনো জেন্ডারের প্রতিই সেক্সুয়ালি এট্রাকটেড ফীল করে না।
এরা ইম্পটেন্ট নয়, শারীরিক ভাবে যৌন মিলনে খুবই সক্ষম, এরা ব্রহ্মচারীও নন আবার, একই বা বিপরীত লিঙ্গিয় বন্ধু বান্ধবীও এদের থাকে। কিন্তু এরা তাদের কারো সাথে যৌনতা ইনক্লুসিভ কোনো রোমান্টিক সম্পর্কে জড়ান না বা জড়াতে পারেনই না।

এত কিছু বলছি কেন?
বলার কারন, সম্প্রতি জানলাম, একজন পুরুষ জন্মসুত্রে এসেক্সুয়াল না হলে তাদের জন্য আর কখনোই এসেক্সুয়াল হওয়া সম্ভব না। অথচ জন্মসুত্রে এসেক্সুয়াল নন, এমন একজন নারীর জন্য জীবনের একটি পর্যায়ে সেক্সুয়ালি একটিভ জীবন যাপন করার পরেও অন্য একটি পর্যায়ে এসেক্সুয়াল হয়ে যাওয়া মোটেও অসম্ভব না।

জন্মগত ভাবে এসেক্সুয়াল নন, এমন একজন নারী বৈধব্য বা বিচ্ছেদজনিত কারনে একা হয়ে পড়ার পর, যদি স্থায়ীভাবে একা থাকার সিদ্ধান্ত নেন, এজন্য, প্রথম প্রথম কিছুদিন হয়তো যৌনতা বিবর্জিত জীবনে কিছু সমস্যার মুখোমুখি তারা হন, কিন্তু কিছুদিন এভাবে চলবার পর তারা নিজে থেকেই এই সমস্যা কাটিয়ে ওঠেন এবং এই এসেক্সুয়ালিটিতে এতটাই অভ্যস্ত হয়ে পড়েন যে বাকিটা জীবন তাঁদের জন্য এই এসেক্সুয়াল জীবনযাপনে আর কোনো সমস্যা হয় না।

এখানেই সমস্যার সূত্রপাত টিপিকাল পুরুষ মানসিকতার কারনে।
 
আমরা পুরুষরা এরকম একটা এসেক্সুয়াল জীবনযাপন যে সম্ভব, সেটা বুঝতেই পারি না। আমাদের নিজেদের জন্য তো নয়ই, নারীদের জন্যেও সেটা বোঝার কোনো সামর্থ আমাদের থাকে না।
আর এটা থাকে না বলেই দেখা যায়, পূর্বে যৌন অভিজ্ঞতা সম্পন্ন সিঙ্গেল কোনো নারীকে দেখলেই আমরা তাঁর প্রতি যতটা না ভালবাসা বসত, তারচেয়ে অনেক বেশী করুনা বসত তাদেরকে বিয়ে করে হোক বা বিবাহ বহির্ভুত ভাবেই হোক, যৌনতায় আগ্রহী করতে উদ্যত হই।

আমরা ভেবেও দেখি না, উনি কি তাঁর অযৌন জীবনটা স্বেচ্ছায় বেছে নিয়ে তাতে থিতু হয়েছেন কিনা।
তিনি তা যদি হয়েই থাকেন, এই অনাকাঙ্খিত আমন্ত্রনগুলি তাঁর জন্য যে কতটা বিরক্তির, কতটা অনভিপ্রেত, সেটা আমরা, এরকম করা পুরুষেরা কখনোই হয়তো বুঝবো না।

তাহলে কি একা হয়ে পড়া নারীকে প্রনয় নিবেদন না হোক, অন্ততঃ পুনঃবিবাহে আগ্রহী কিনা, তা জানতে চাওয়া যাবে না?
সেটা অবশ্যই জানতে চাওয়া যাবে, ইন প্লেন এন্ড সিম্পল টার্মস, কীপিং ইন মাইন্ড যে তিনি এসেক্সুয়াল জীবনে অভ্যস্ত হয়েও থাকতে পারেন।

একাকী হয়ে পড়া একজন নারী যদি বিবাহ বা প্রনয়ের প্রাথমিক অনুসন্ধানে আগ্রহ না দেখান, তাকে এ নিয়ে পিড়াপিড়ি করাটা হবে অত্যন্ত গর্হিত একটা কাজ। এবং এটা কোনোক্রমেই উত্যক্ত করার চেয়ে কম কিছু নয় ।

বলাই বাহুল্য যে, অতি দরদি সেজে হোক বা দরদ নিয়েই হোক এদেশে সিঙ্গেল হয়ে পড়া নারীদের ক্রমাগত এরকম উত্যক্ত করার মত মানুষের কোনোই অভাব হয় না। এঁরা হতে পারে, তাঁদের আত্মীয় স্বজন থেকে শুরু করে বন্ধুবান্ধব, সহপাঠি, এমনকি সহকর্মীরাও।

আপনি যদি সত্যিকারের শুভানুধ্যায়ি হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার যেটা করনীয়, তা হলো তাঁর কোনো আগ্রহ থাকলে সেটা আপনাকে জানাতে বলে রাখা। এর বেশী কিছুই না।জানবেন, যিনি অযৌনজীবন বেছে নিয়ে তাতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন, তাঁর জন্য এরচেয়ে বেশী কিছু করাটা তাঁকে হয়রানি করার সমতুল্য কারন নারীর সেক্সুয়ালিটি ও পুরুষের সেক্সুয়ালিটির মধ্যে আকাশ পাতাল পার্থক্য রয়েছে।

নিজে সেক্সুয়ালি একটিভ নারী হয়েও যখন স্বেচ্ছায় অযৌনজীবন বেছে নেয়া কোনো নারীর যৌন চাহিদা অনুমান করাটা যেখানে ঠিক না, সেখানে নিজে পুরুষ হলে, নিজের যৌনানুভুতি দিয়ে একজন নারীর যৌনানুভুতি বা চাহিদার বিচার বা অনুমান করতে চাওয়াটা হবে মস্তো বড় ভুল ।

আসুন এবার একটি গল্প দেখে আসা যাকঃ
ধরুন একজনের নাম সাবিহা, সাবিহা খুব ভালো মেয়ে, একদম ট্রাডিশনাল ভালো মেয়ে যাকে বলে। বাবা-মা’র বাধ্য, কখনোই প্রেম করেনি, যখন থেকে তার নিজের যৌনতার ব্যাপারে তার ধারণা এসেছে, সে নিজেকে রক্ষা করে চলেছে। সে একজন বিসমকামী নারী। পড়াশোনা শেষ করে সাবিহা একটা ভালো চাকরি করছে এখন, বাবা-মা বিয়ে দিচ্ছেন। সাবিহাও বিয়ে করতে অনেকটাই উদগ্রীব।
 
 তার বয়স এখন ২৪, তার বিবাহিত বান্ধবীদের খোলামেলা বর্ণনা শুনে সে নিজের বিবাহিত জীবন নিয়ে অনেকটাই আশাবাদী। তার বিয়ে ঠিক হলো জাভেদের সাথে, জাভেদ একটা ব্যাংকে চাকরি করে, বাবা-মা তাকে বিয়ে দিতে অতি আগ্রহী। কিন্তু জাভেদের আসলে সেদিকে ইচ্ছে নেই। শেষ-মেষ তার মা এর লাস্ট স্টেজ ক্যান্সার ধরা পড়লে মৃত্যুশয্যায় তাকে ইমোশনাল ব্ল্যাক্মেইল করেই সাবিহার সাথে বিয়েতে রাজী করানো।
 
বিয়ের পর বাসররাতটা ঢাকাতে থেকেই সাবিহা আর জাভেদ রওনা দিলো ভারতে, শাশুড়ীকে ভেলোরের হাসপাতালে দেখে তারপর ভারতেই তারা হানিমুন করবে, এটাই হচ্ছে ইচ্ছে। সাতদিন পর তারা দেশে ফিরতেই, সাবিহা নিজের বাড়ীতে ফেরত এলো। যদিও কোন কথা হয়নি, কিন্তু তার মা-বাবা বুঝতে পারলেন কিছু একটা ভুল হচ্ছে।
 
কিন্তু সাবিহার মুখ থেকে কিছু বের করা গেলোনা। সাবিহা আর জাভেদ আলাদাই থাকে, জাভেদ মাঝে মাঝে এসে শ্বশুর-শাশুড়ীর সাথে দেখা করে যায়, কিন্তু সাবিহার সাথে রাত কাটাবার কোন আগ্রহ দেখা যায়না তার মধ্যে। দু’মাস পরে, জাভেদের মা মারা গেলেন, খবর এলো। তার পরেরদিনই সাবিহা বাবা-মা’কে তালাকপত্র দেখালো, দেড়মাস আগের তারিখেই সই করা।
অনেক চাপাচাপির পর সাবিহা যেটা বললো, সেটা হচ্ছে, “জাভেদ আমার প্রতি কোন আকর্ষণই বোধ করেনা, ও কারো প্রতি কখনোই কোন যৌন আকর্ষণ বোধ করেনি। এমনকি ওর কোন ছেলের প্রতিও এই ধরণের কামনা নেই। যৌন কামনা যে কি, এটাই ও জানেনা। ও আমার কাছে ওর মা বেঁচে থাকাতক সময় চেয়েছিলো। তাই আমি ওকে দিয়েছি।”
 
Asexuality হচ্ছে অকামিতা,
অর্থাৎ যা কিনা কোন ধরণের যৌন কামনাই বোধ না করা। এসেক্সুয়াল ব্যক্তিরা কিন্তু যৌন ভাবে অক্ষম নন, তাদের শুক্রাণু অথবা ডিম্বাণুর উৎপাদন থাকে স্বাভাবিক। তারা কেবল যৌন কামনা কখনোই অনুভব করেননা, সুতরাং স্বাভাবিক উপায়ে কারো সাথেই যৌন সঙ্গম করতে পারেন না।
 
এসেক্সুয়ালিটি মানুষের সংখ্যা কিন্তু আমাদের মাঝে কম নয়। জাভেদ পুরুষ দেখে এবং অপেক্ষাকৃত ভালো মানুষ হয়তো সাবিহা খুব সহজেই এইরকম একটা সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছে। একটা এসেক্সুয়াল মেয়ের জন্য কিন্তু এই ধরণের বিয়ে থেকে কখনোই বেরিয়ে আসা সাধারণত সম্ভব হয়না।
বস্তুত তাদেরকে আজীবন যৌন সঙ্গম নামের একটা নির্যাতন সহ্য করে যেতে হয়। আর যদি স্বামী এসেক্সুয়াল হয় তবে, প্রায় একই ধরণের কষ্ট মেনে জীবন চালাতে হয় তাদেরকে। আমাদের মতো পুরুষতান্ত্রিক সমাজে তাই একটা বিয়েতে যেই এসেক্সুয়াল হোকনা কেন (যদি কেউ হয়), কষ্টটা মেয়েটাকেই করতে হয়।

আরও পড়ুন