ওজন বেড়ে যাওয়া আজকাল খুব স্বাভাবিক বিষয়। তবে স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত ওজন বেড়ে গেলে সেটা নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যেই চিন্তার বিষয়। বর্তমানে জীবনযাপন পদ্ধতির কারণে স্থূলতা বা অতিরিক্ত ওজনের সমস্যায় পড়তে হয়।
শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমানোর কথা চিন্তা করলে প্রথমেই যে কথাটা মাথায় আসে, সেটা হচ্ছে ডায়েট। অনেকেই দ্রুত ওজন কমানোর জন্যে ক্রাশ ডায়েট, ইন্টারমেটিং ফাস্টিং, কিটো ডায়েট ইত্যাদি নানারকম ডায়েট করে থাকেন না বুঝেই৷ ডায়েট করা মানে অনেকেই মনে করেন খাবার না খাওয়া বা খাবারের পরিমাণ অতিরিক্ত কমিয়ে দেওয়া।
পুষ্টিবিদদের মতে, ডায়েট হলো বিশেষ অবস্থায় ব্যক্তি বিশেষে নিয়ন্ত্রিত বা শারীরিক চাহিদা অনুযায়ী খাদ্য গ্রহণ। সুষম খাদ্য গ্রহণ ব্যক্তির ওজন নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। সুষম খাদ্য তৈরিতে একজন ব্যক্তির বয়স, ওজন, উচ্চতা, কাজের ধরন, লিঙ্গ ইত্যাদি বিবেচনা করে ব্যক্তির প্রয়োজনীয় ।
ওজন বৃদ্ধি শুধু খাবারের জন্যই হয়, তা নয়। শারীরিক অসুস্থতা, ঔষধ, হরমোন ইত্যাদি কারণেও হয়ে থাকে। তাই কী কারণে অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি পেয়েছে, তা জানা খুব জরুরি।
ওজন কমানোর কিছু কার্যকর উপায় হলো –
১. প্রথমেই আপনাকে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হবে। আপনার খাদ্যাভ্যাস যেন নিয়ম মেনে প্রতিদিন একই সময়ে হয়, সে বিষয়ে খেয়াল রাখুন। সকালবেলা ভারি নাস্তা, দুপুরে ভাত আর রাতে রুটি বা হালকা খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। মাঝখানের সময়ে ফলমূল খেতে পারেন। এই খাদ্যাভ্যাস আপনাকে ওজন কমাতে সাহায্য করবে।
২. খাবারে প্রোটিন জাতীয় খাবার বেশি খেয়ে ওজন কমানোর পদ্ধতি সবচেয়ে সহজ, কার্যকরী, মুখরোচক, বৈজ্ঞানিক ও কম কষ্টের। প্রোটিন জাতীয় খাবার খেলে অল্প খাবারে তাড়াতাড়ি তৃপ্তি আসে অর্থাৎ ক্ষুধার অনুভূতি তাড়াতাড়ি কমে এবং আমাদের শরীরের মেটাবলিক রেট বা শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়ার হার বাড়ে, কারণ প্রোটিন বা আমিষ জাতীয় খাবার হজম করতে ও মেটাবলিজম হতে বা খাবার ভেঙে শক্তি উৎপাদনে বা অন্যান্য কাজে অনেক বেশি শক্তি ব্যয় হয়।
৩. সোডা, ফলের রস, চকোলেট দুধ ও অন্যান্য কোমল পানীয় যেমন কোকাকোলা, ফান্টা, মিরিন্ডা, পেপসি যেখানে অতিরিক্ত চিনি বা সুগার যোগ করা হয় তা ক্ষতিকর ও বর্জনীয়, কারণ সুগার বা চিনির মাধ্যমে আমাদের শরীরে অতিরিক্ত ক্যালরি ঢোকে ও তা আমাদের ওজন বাড়ায়। প্রাকৃতিক জুস বা ফলের রস স্বাস্থ্যকর কিন্তু জুসের সঙ্গে যদি অতিরিক্ত চিনি যোগ করা হয় তবে তা ক্ষতিকর। এসব সুগারযুক্ত পানীয়ের আসলে কোনো লাভজনক দিক তো নেয়ই বরং দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিকর।প্রাকৃতিক জুস বা ফলের রস স্বাস্থ্যকর কিন্তু জুসের সঙ্গে যদি অতিরিক্ত চিনি যোগ করা হয় তবে তা ক্ষতিকর। এসব সুগারযুক্ত পানীয়ের আসলে কোনো লাভজনক দিক তো নেই ই বরং দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করে।
৪. ওজন কমানোর জন্য অন্যতম ট্রিক হচ্ছে প্রতিদিন বেশি পরিমাণ পানি পান করা। বেশি পরিমাণ পানি পান করলে শরীরের অতিরিক্ত ক্যালরি খরচ হয়। প্রতিদিন ৪ গ্লাস বা ২ লিটার পানি পান করলে ৯৬ ক্যালরি শক্তি অতিরিক্ত খরচ হয় কোনো কায়িক পরিশ্রম ছাড়াই। তাছাড়া খাবার আগে খালি পেটে পানি পান করলে তাতে পেট আংশিক ভর্তি হবে এবং ক্ষুধা কমবে ও কম পরিমাণ খাবারে পেট ভরে যাবে, তাতে অটোমেটিক্যালি কম ক্যালরি শরীরে ঢুকবে। যেসব পানীয় ক্যাফেইনযুক্ত যেমন গ্রিন টি, কফি স্বাস্থ্যক ও ওজন কমাতে সহায়ক কারণ এ পানীয়গুলো শরীরে অতিরিক্ত ক্যালরি খরচ করতে সাহায্যকারী।
৫. নিয়মিত সকালে ঘুম থেকে উঠার পর হালকা ব্যায়াম যেমন, জোরে জোরে হাঁটা বা দৌঁড়ানো, সাইকেল চালানো, সিঁড়ি দিয়ে উঠানামা করা ক্যালরি পোড়াতে এবং শরীরের বাড়তি ওজন কমাতে সাহায্য করে। যারা খাবার নিয়ন্ত্রণ করতে চান না, তাদের অবশ্যই ব্যায়ামের মাধ্যমে ক্যালরি বার্ণ করতে হবে। প্রতিদিন সকালে খাওয়ার আগে ছোট কার্ডিও ওয়ার্ক যেমন- হাটা, জগিং, দৌঁড়ানো ইত্যাদি করে ভালো ফলাফল পেতে পারেন। সকালে ব্যায়াম করলে ক্যালরি বেশি বার্ণ হবে। ফলে খাওয়ার পর কার্ডিও করার চাইতে খাওয়ার আগে কার্ডিও করলে আপনি ভালো ফল পাবেন।
৬. খাবার খাওয়া শুরু করার পর যখন সেই খাবার পেটে যায়, তখন পাকস্থলী থেকে মস্তিষ্কে সংকেত পৌঁছায়—সহজ ভাষায় পেটের সাথে ব্রেইনের কথাবার্তা হয়। পেট ভরেছে কি ভরেনি তা বুঝতে ব্রেইনের ২০ মিনিট পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। দ্রুত খাবার খেলে অতিরিক্ত খেয়ে ফেলার সম্ভাবনা থাকে, কারণ পেট ভরে যাওয়ার খবরটি পাকস্থলী থেকে হয়তো অত দ্রুত ব্রেইনে নাও পৌঁছাতে পারে। অতিরিক্ত না খেয়ে ফেলার জন্য ধীরে ধীরে খাবার খাওয়া এবং খাওয়ার সময় খাবারের প্রতি পূর্ণ মনোযোগ দিতে হবে। এই প্রক্রিয়াকে ‘মাইন্ডফুল ইটিং’ বা ‘মনোযোগ সহকারে খাওয়া’ বলা হয়।
৭. মানসিক চাপ বা স্ট্রেসের কারণেও শরীরে মেদ জমতে পারে। আমরা যখন দিনের পর দিন মানসিক চাপে ভুগি, তখন আমাদের শরীরে ‘কর্টিসল’ নামের একটি হরমোন নিঃসরণ হয়। এই হরমোন বৃদ্ধি পেলে অতিরিক্ত চিনি বা চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়ার প্রবল আকাঙ্ক্ষা জাগতে পারে। মানসিক চাপ বা স্ট্রেসের কারণেও শরীরে মেদ জমতে পারে। আমরা যখন দিনের পর দিন মানসিক চাপে ভুগি, তখন আমাদের শরীরে ‘কর্টিসল’ নামের একটি হরমোন নিঃসরণ হয়। এই হরমোন বৃদ্ধি পেলে অতিরিক্ত চিনি বা চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়ার প্রবল আকাঙ্ক্ষা জাগতে পারে।
৮. কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবের সাথে ওজন বেড়ে যাবার একটি সম্পর্ক রয়েছে। এর পেছনে বিভিন্ন কারণ রয়েছে। রাত জাগলে কিছু একটা খেতে ইচ্ছা করতে পারে। এভাবে খাওয়া অতিরিক্ত খাবারের ক্যালরি শরীরে মেদ হিসেবে জমা হয়, ঘুমিয়ে থাকলে সেই অতিরিক্ত ক্যালরি খাওয়া হতো না।