আওয়ামী লীগের সভাপতি পদ নিয়ে জল্পনা-কল্পনা না থাকলেও সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে রাজনীতির মাঠে চলছে তুমুল আলোচনা। কে হচ্ছেন আওয়ামী লীগের পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক? ওবায়দুল কাদেরই হ্যাটট্রিক করছেন, নাকি নতুন মুখ আসছে আওয়ামী লীগে?
টানা দুই মেয়াদে দলটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন ওবায়দুল কাদের। তবে আওয়ামী লীগে টানা তিন মেয়াদে কারও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের রেকর্ড নেই।
আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এক কঠিন সময়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের। এরপর ধাপে ধাপে উঠে এসেছেন জাতীয় রাজনীতির অত্যন্ত সম্মানজনক স্থানে।
ছয়দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়ার ধারাবাহিকতায় অংশ নেন মুক্তিযুদ্ধেও। চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন, পালন করছেন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। ওবায়দুল কাদেরের জন্ম নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বড় রাজাপুর গ্রামে ১৯৫২ সালের ১লা জানুয়ারি। তিনি এখন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী।
ওবায়দুল কাদেরের বাবা মোশাররফ হোসেন কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহপাঠী ছিলেন। সরকারি চাকরি ছেড়ে কাদেরের বাবা শিক্ষকতা পেশায় যোগ দিয়েছিলেন। ওবায়দুল কাদেরের মায়ের নাম ফজিলাতুন্নেসা।
বসুরহাট সরকারি এএইচসি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে এসএসসি এবং নোয়াখালী সরকারি কলেজ থেকে মেধা তালিকায় স্থান নিয়ে এইচএসসি পাস করেন ওবায়দুল কাদের। পরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক পাস করেন।
কলেজে পড়ার সময় থেকেই ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন ওবায়দুল কাদের। ১৯৬৬ সালে ছয় দফা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন তিনি। ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থান ও ছাত্রদের ১১ দফার আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি মুজিব বাহিনীর (বিএলএফ) কমান্ডার হিসেবে কম্পানীগঞ্জ থানার দায়িত্বে ছিলেন।
রাজনৈতিক জীবনে বিভিন্ন সময় একাধিকবার কারাবরণ করেছেন এই নেতা। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টের পর দীর্ঘ আড়াই বছর তিনি কারাগারে ছিলেন। কারাগারে থাকা অবস্থায় তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন। দুই মেয়াদে সংগঠনটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
১৯৯৬ সালের ১২ই জুন সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ওবায়দুল কাদের নোয়াখালী-৫ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সে বছরের ২৩শে জুন সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেন এবং একই দিনে যুব, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ২০০১ সালের ১৫ই জুলাই পর্যন্ত প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
২০০০ সালের ২৩শে জুন থেকে ২০০২ সালের ২৬শে ডিসেম্বর পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিতে সংস্কৃতি ও শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ওই বছরই আওয়ামী লীগের সম্মেলনে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০০৯ সালের ২৬শে জুলাই পর্যন্ত তিনি ওই দায়িত্বে ছিলেন। এক-এগারো পরবর্তী জরুরি অবস্থার সময় ২০০৭ সালের ৯ই মার্চ তিনি গ্রেপ্তার হয়ে ১৭ মাস ২৬ দিন কারাবরণ করেন। ২০০৮ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্ত হন তিনি।
ওবায়দুল কাদের ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত হয়েছিলেন। তাকে দিল্লির অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি করা হলে তার শরীর থেকে ৮০টি স্প্লিন্টার বের করা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে তার শরীর থেকে আরো ১৪টি স্প্লিন্টার বের করা হয়। এখনও তার শরীরে ১৮টি স্প্লিন্টার রয়েছে।
কারাগারে থাকাকালে কারাজীবনের বর্ণনা দিয়ে ‘অনুস্মৃতি : যে কথা বলা হয়নি’ নামে একটি বই লেখেন ওবায়দুল কাদের। ২০০৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বর দ্বিতীয়বারের মতো নোয়াখালী-৫ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পান। ২০০৯ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে তিনি দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য নির্বাচিত হন।
২০১১ সালের ২৮শে নভেম্বর তিনি মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। সে বছরের ৫ই ডিসেম্বর যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান তিনি। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নোয়াখালী-৫ আসন থেকে তৃতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সে বছর ১২ই জানুয়ারি দ্বিতীয়বারের মতো মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন তিনি।
দীর্ঘদিন ধরে সাংবাদিকতা ও লেখালেখিতে সম্পৃক্ত ছিলেন এই রাজনীতিক। দৈনিক বাংলার বাণীর সহকারী সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছেন তিনি দীর্ঘদিন। এর বাইরেও তিনি ৯টি বই লিখেছেন। বইগুলো হচ্ছে ‘বাংলাদেশ : এ রেভ্যুলিউশন বিট্রেয়েড (১৯৭৬)’, ‘বাংলাদেশের হৃদয় হতে’, ‘পাকিস্তানের কারাগারে বঙ্গবন্ধু’, ‘এই বিজয়ের মুকুট কোথায়’, ‘তিন সমুদ্রের দেশে’, ‘মেঘে মেঘে অনেক বেলা’, ‘রচনা সমগ্র’, ‘অনুস্মৃতি : যে কথা বলা হয়নি’ ও ‘নির্বাচিত কলাম’।