সাতক্ষীরার কলারোয়ায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বসবাসের জন্য মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ‘বীর নিবাস’ গৃহ নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
ঈদুল ফিতরের লম্বা ছুটির ফাঁকে সরকারি কর্মকর্তাদের অনুপস্থিতিতে কৌশলে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যেনতেন করে ছাদ ঢালাই কার্যক্রম শুরু করেছেন।
শনিবার উপজেলার চন্দনপুর ইউনিয়নের বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিয়ার রহমানের পরিবারের আপত্তি থাকার পরও ঘরের ছাদ ঢালাই সম্পন্ন করা হয়েছে। আতিয়ার রহমানের স্ত্রী মাহফুজা খাতুন ও তার ছেলে শাহরিয়ার মাহমুদ গণমাধ্যমের কাছে বিষয়টি নিয়ে চরম অসন্তোস প্রকাশ করে সরকারি অর্থ কৌশলে লুটেপুটে খাওয়ার অভিযোগ করেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে।
কলারোয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার দপ্তর থেকে জানা যায়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতায় দেশব্যাপি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বসবাসের জন্য গৃহ নির্মাণের উদ্যোগ নেন সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় জেলার প্রতিটি উপজেলায় প্রথম পর্বে ১২টি করে গৃহ নির্মাণের লক্ষ্যে টেন্ডার আহবান করা হয়।
এরই অংশ হিসেবে কলারোয়া উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে ১২জন বীর মুক্তিযোদ্ধার জন্য ১২টি ‘বীর নিবাস’ নির্মিত হচ্ছে। টেন্ডারের মাধ্যমে কার্যাদেশটি পান কলারোয়ার মেসার্স জিয়া ট্রেডাস এর স্বত্তাধিকারী জিয়াউর রহমান।
সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার কর্তৃক ইতোমধ্যে উপজেলার ১০টি বীর নিবাস এর লিংটন পর্যন্ত, একটি ঘরের লিংটনের নীচে এবং শনিবার একটির ছাদ ঢালাই সম্পন্ন হয়েছে। ১২টি ঘরের নির্মাণ কাজের বর্তমান এ অবস্থায় ঈদের ছুটির ফাঁকে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার জিয়াউর রহমান কর্তৃক এই ঘরের দেখভাল এর দায়িত্বে থাকা সরকারি কোন কর্মকর্তার উপস্থিত না রেখেই অনেকটাই গোপনে এবং তড়িঘড়ি করে বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিয়ার রহমানের ঘরের ছাদ ঢালাই সম্পন্ন করলেন।
মুক্তিযোদ্ধার পরিবার বিষয়টি নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা মনে করছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম ঢাকতেই দ্রুত এই ছাদ ঢালাই সম্পন্ন করা হয়েছে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিয়ার রহমানের ছেলে শাহরিয়ার মাহমুদ টেলিফোনে জানান, যে বিল্ডিং নির্মাণ করা হয়েছে তার ছাদে কোন কার্ণিশ নাই। আমি নিজ খরজে সেটি দিতে চাইলেও তারা দেয়নি। ছাদের রডগুলো বাধা হয়েছে ফাঁকা ফাঁকা করে।
ডিজাইন অনুযায়ী ঘরের চারধারে ১৬০ ফুট বাউন্ডারি বা প্রাচীর থাকার কথা থাকলেও ঠিকাদার জানিয়েছেন সেটি তিনি জানেন না। গাথুনিতে ১০-১২টা করে বালির সাথে একটা করে সিমেন্ট দেয়া হয়েছে তবে ইটের মান সন্তোস জনক।
তিনি আরো বলেন, ঘরের ভিট পুরনের ক্ষেত্রে ভিট বালি খুবি কম রেখে বেশিরভাগ মাটি দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। উপরে কিছু ভিট বালি দেওয়া হয়। ছাদ ঢালাইয়ে ৬টা খোয়া, ২টি সিলেকশান বালি, ২টি কুষ্টিয়ার বালি ও একটি সিমেন্ট দিয়ে ঢালাই কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ছুটির দিনে ঘরের দেখভালের দায়িত্বে থাকা সরকারি কর্মকর্তাদের উপস্থিত না রেখেই তড়িঘড়ি করে ঢালাই সম্পন্ন করা হয়েছে।
এসব বিষয়ে জানতে কথা হয় সাতক্ষীরা সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ইয়ারুল হক জানান, প্রতিটি উপজেলায় এই গৃহ নির্মাণ কাজের সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সম্পাদক উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এবং প্রকৌশলীর দায়িত্বে আছেন খুলনা বিভাগের সাতক্ষীরা জেলাসহ ৩ জেলা নিয়ে বিভাগীয় উপসহকারি প্রকৌশলী খুলনার মেহেদী হাসান।
তিনি জানান, একটি বীর নিবাস তৈরিতে ১৬ হাজারের একটু বেশি ১নং ইট, ১০ মিলির এক টনের একটু কম দেশীয় ব্রান্ডিং রড ও দেশীয় ব্রান্ডিং সিমেন্ট ব্যবহার করতে হবে। এছাড়াও ছাদ ঢালাইয়ের ক্ষেত্রে এক বস্তা সিমেন্ট, ২ বস্তা বালু ও ৪ বস্তা খোয়া ব্যবহার করার নির্দেশনা রয়েছে।
এবিষয়ে কলারোয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সুলতানা জাহান জানান, কোথায় বীর নিবাস এর ছাদ ঢালাই হয়েছে আমার জানা নেই। কারণ এখন সরকারি ছুটি চলছে আমি বাসায় আছি অসুস্থ অবস্থায়। তিনি আরো বলেন, কোন বীর নিবাসের ছাদ ঢালাই হলে আমাকে অবশ্যই ঠিকাদার জানাতো যেহেতু জানাইনি সেহেতু ঢালাই হওয়ার কথা নয়।
উল্লেখ্য, বিগত ২০০২ সালের ২৬শে অক্টোবর এই বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিয়ার রহমানের স্ত্রীকে তৎকালিন জামায়াত বিএনপির সমর্থিত সন্ত্রাসীরা গণধর্ষণ করে। পরে তাকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ওই বছরের ৩০শে অক্টোবর তৎকালিন বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনা সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে দেখতে আসেন ধর্ষিতা ওই গৃহবধুকে। দেখে যশোর ফেরার পথে কলারোয়ায় বিএনপি অফিসের সামনে শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলা হয়।
সেই মামলার একাংশের বিচার সম্পন্ন হয়েছে গেল বছরের শেষের দিকে এবং বিএনপি দলীয় নেতাকর্মীরা এখন জেল হাজতে রয়েছে। সেই বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিয়ার রহমানের গৃহ নির্মাণ নিয়ে মেসার্স জিয়া ট্রেডার্স এর স্বত্তাধিকারী জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে কলারোয়ার ১২টি বীর নিবাস নির্মাণ নিয়ে লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে।
সার্বিক বিষয়ে ক্ষতিয়ে দেখে নির্যাতিত বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।