অবশেষে দীর্ঘস্থায়ী ও রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসানে আশার আলো দেখলো মধ্য-আফ্রিকার দেশ গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র (ডিআরসি)। হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানি এবং লক্ষাধিক মানুষের বাস্তুচ্যুতির পর দেশটির সরকার এবং এম২৩ বিদ্রোহী গোষ্ঠী একটি শান্তি চুক্তির খসড়ায় পৌঁছাতে সম্মত হয়েছে।
শনিবার (১৫ই নভেম্বর) কাতারের রাজধানী দোহায় এই ঐতিহাসিক খসড়া চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়। পূর্ব কঙ্গোয় চলমান ভয়াবহ সংঘাত অবসানের লক্ষ্যেই এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হলো। শুধুমাত্র চলতি বছরেই এই সংঘাতে হাজার হাজার মানুষ নিহত এবং লাখ লাখ মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
উভয় পক্ষের প্রতিনিধিরা কাতারের আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। কঙ্গোর কয়েক দশক ধরে চলা এই সংঘাত নিরসনে যুক্তরাষ্ট্র ও কাতার মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করেছে। এই সংঘাত সম্প্রতি একটি পূর্ণমাত্রার আঞ্চলিক যুদ্ধে রূপ নেওয়ার হুমকি সৃষ্টি করেছিল। তবে মার্কিন ও কাতারি কর্মকর্তারা এই খসড়া চুক্তিকে শান্তির পথে একটি "গুরুত্বপূর্ণ ধাপ" হিসেবে বর্ণনা করলেও, তারা সতর্ক করে বলেছেন যে চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছাতে এখনও বহু পথ বাকি। চুক্তির অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মধ্যপ্রাচ্যে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ দূত মাসাদ বুলুস বলেছেন, খসড়া চুক্তিটি মোট আটটি প্রোটোকলে সাজানো হয়েছে। এর মধ্যে ছয়টি প্রোটোকলের বাস্তবায়ন ব্যবস্থা নিয়ে এখনও কাজ বাকি আছে।
তিনি আরও বলেন, প্রথম দুটি প্রোটোকল বন্দি বিনিময় ও যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণ বাস্তবায়নের গতি সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বেশ ধীর ছিল। তিনি বলেন, এটি একটি প্রক্রিয়া, এটি এমন কোনো সুইচ নয় যে চাইলেই অন বা অফ করে দেওয়া যাবে।
গত জানুয়ারিতে প্রতিবেশী রুয়ান্ডা-সমর্থিত এবং জাতিগত তুতসি নেতৃত্বাধীন বিদ্রোহী গোষ্ঠী এম২৩, কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলের বৃহত্তম শহর গোমার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার দাবি করে। সে সময় ব্যাপক গোলাগুলি ও সংঘর্ষে হাজার হাজার মানুষ শহর ছেড়ে পালিয়ে যায়। এই ঘটনায় কারাগারগুলোতে হামলার পর আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়, যার ফলে কয়েক হাজার কারাবন্দি পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
এম২৩-এর এই আগ্রাসন কঙ্গোর খনিজ সম্পদ সমৃদ্ধ পূর্বাঞ্চলে দশকের পর দশক ধরে চলা পুরোনো বিরোধকে একটি ভয়াবহ আঞ্চলিক যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার আশঙ্কা তৈরি করেছিল। যদিও রুয়ান্ডা প্রথম থেকেই এম২৩-কে সমর্থনের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ওয়াশিংটন ও দোহায় এই কূটনৈতিক আলোচনা চলার মাঝেও কঙ্গোর মাটিতে সহিংসতা থামেনি। স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শুক্রবারও দেশটির নর্থ কিভু প্রদেশে আইএস-সমর্থিত জঙ্গিদের অতর্কিত হামলায় অন্তত ২৮ জন নিহত হয়েছেন।
কাতার গত এপ্রিল মাস থেকে কঙ্গো সরকার ও বিদ্রোহীদের মধ্যে কয়েক ধাপে সরাসরি আলোচনার আয়োজন করেছে। তবে সেসব আলোচনা মূলত পূর্বশর্ত ও আস্থা-বৃদ্ধিমূলক পদক্ষেপের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।
গত জুলাই মাসে উভয় পক্ষ সংঘাত অবসানের একটি নীতি ঘোষণার বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছালেও, সংঘাতের বহু মূল বিষয় অমীমাংসিত থেকে যায়। এরপর অক্টোবরে তারা সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণ নিয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছায়।
কাতারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আবদুলআজিজ আল-খুলাইফি বলেছেন, শনিবারের এই চুক্তি উভয় পক্ষকে শান্তির পথে অনেকটাই এগিয়ে নিয়েছে। তিনি মন্তব্য করেন, শান্তি কখনোই বল প্রয়োগে চাপিয়ে দেওয়া যায় না; এটি গড়ে ওঠে কেবল আস্থা, পারস্পরিক সম্মান ও আন্তরিক প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে।
ডিবিসি/এএমটি