কালার মুরগির জেনেটিক উন্নয়ন ও খামারিদের জন্য লাভজনক, টেকসই ও আধুনিক প্রজনন প্রযুক্তি ছড়িয়ে দিতে ঢাকায় ‘SASSO Breeding for Value’ শীর্ষক একটি আন্তর্জাতিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেমিনারে বক্তারা বলেন, দেশি বা ট্র্যাডিশনাল মুরগির চাহিদা এখন শুধু বাংলাদেশে নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়াতেই বাড়ছে।
সোমবার (১৬ই জুন) রাজধানীর মগবাজারে একটি হোটেলে বিশ্বখ্যাত প্রাণিজ প্রজনন প্রতিষ্ঠান Hendrix Genetics-এর আয়োজনে এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।এতে বাংলাদেশ ছাড়াও স্পেন, ফ্রান্স এবং কোরিয়ার প্রতিনিধিরা অংশ নেন। পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের খামার মালিক, হ্যাচারি উদ্যোক্তা, পোলট্রি ব্যবসায়ী, গবেষক, শিক্ষক, প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, সাংবাদিক এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীরা।
সেমিনারের সঞ্চালনায় ছিলেন Hendrix Genetics-এর কান্ট্রি ম্যানেজার (বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও শ্রীলঙ্কা) মো. মাহিউদ্দিন। তিনি বলেন, “পোলট্রি শিল্প এখন শুধু খাদ্য নিরাপত্তার জন্য নয়, বরং অর্থনৈতিক উন্নয়ন, পুষ্টি নিশ্চিতকরণ ও কর্মসংস্থানের এক গুরুত্বপূর্ণ খাত হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশি স্বাদের মুরগির প্রতি মানুষের আগ্রহ থাকলেও খামারিরা উৎপাদনের দিক থেকে পিছিয়ে থাকেন। এ সমস্যা সমাধানে SASSO ব্রিড একটি আধুনিক ও পরীক্ষিত সমাধান।”
তিনি আরও বলেন, “SASSO ব্রিড দেশি স্বাদ বজায় রেখে ডিম ও মাংস উৎপাদনে সক্ষম। এটি সহজে পালনযোগ্য, রোগ প্রতিরোধে সক্ষম এবং খরচ সাশ্রয়ী। ইতোমধ্যে আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এই ব্রিড ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বাংলাদেশেও এটি গ্রামীণ অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”
সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন SASSO ব্র্যান্ডের আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিরা, যাদের মধ্যে ছিলেন Edouard Perrout (SASSO), Alba Mesas Romero (SASSO), Dr. Myeong Seob Kim (Hipra), হেনড্রিক্স জেনেটিক্সের টেকনিক্যাল ম্যানেজার, ডা.আলী হায়দার ও হেনড্রিক্স জেনেটিকক্সের টেকনিক্যাল সার্ভিস ম্যানেজার এশিয়া লেয়ার ডাক্তার মেহেদী হাসান। তাঁরা সবাই অত্যন্ত কার্যকর ও তথ্যবহুল উপস্থাপনা প্রদান করেন, যেখানে SA51A, SA31A এর ম্যানেজমেন্ট গাইড, এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা নিয়ন্ত্রণ, হ্যাচারি ব্যবস্থাপনা, ফিড কোয়ালিটি, গরমের সময় পাখির যত্ন, ভ্যাকসিন প্রয়োগ কৌশল ও পানির মান সংক্রান্ত নানা বিষয় উঠে আসে।
সেমিনারের আলোচনা পর্ব ছিল প্রাণবন্ত ও অংশগ্রহণমূলক। প্রতিটি বিষয়ের পরে প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশগ্রহণকারীরা খোলামেলা মতামত, জিজ্ঞাসা এবং বাস্তব অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। এতে অংশগ্রহণকারীদের প্রযুক্তিগত জ্ঞান যেমন গভীরভাবে প্রকাশ পায়, তেমনি এই শিল্পে উন্নতির প্রতি তাদের আগ্রহ ও প্রতিশ্রুতিও স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
সেমিনারে অংশ নেওয়া একাধিক খামারি ও উদ্যোক্তা বলেন, দেশে এখনো গবেষণালব্ধ ও টেকসই প্রজনন প্রযুক্তির বিস্তার সীমিত। ফলে খামারিরা বহুক্ষেত্রে লোকসানে পড়েন কিংবা কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন পান না। অথচ সাশ্রয়ী ও উৎপাদনক্ষম ব্রিড, যেমন SASSO, ব্যবহার করলে একই সঙ্গে দেশি মুরগির স্বাদ বজায় রাখা ও উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব।
আলোচনায় উঠে আসে, দেশি বা ট্র্যাডিশনাল মুরগির চাহিদা এখন শুধু বাংলাদেশে নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়াতেই বাড়ছে। স্থানীয় জাতগুলো স্বাদের কারণে জনপ্রিয় হলেও তাদের উৎপাদনক্ষমতা কম হওয়ায় বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ছে। এ প্রেক্ষাপটে উন্নত জেনেটিক ব্রিড, সঠিক ব্যবস্থাপনা ও সচেতনতা বৃদ্ধি জরুরি।
অনুষ্ঠানজুড়ে অংশগ্রহণকারীদের মাঝে সহযোগিতার এক শক্তিশালী আবহ লক্ষ্য করা যায়। শুধু সেশন নয়, মধ্যাহ্নভোজ ও নৈশভোজের সময়েও অংশগ্রহণকারীরা পারস্পরিক মতবিনিময় করেন, অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করেন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেন। সেমিনার শেষে আয়োজক প্রতিষ্ঠান Hendrix Genetics জানায়, দেশের পোলট্রি শিল্পে প্রযুক্তিনির্ভরতা বাড়াতে তারা নিয়মিতভাবে এ ধরনের সেমিনারের আয়োজন করতে চায়। দেশের বিভিন্ন স্থানে খামারিদের দক্ষতা ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে তারা সর্বদা কাজ করছে।
উল্লেখ্য, SASSO একটি ফ্রান্সভিত্তিক ব্রিড ব্র্যান্ড, যা বর্তমানে Hendrix Genetics-এর অধীনে পরিচালিত হয়। রঙিন পালক, দেশি স্বাদ ও উন্নত উৎপাদনক্ষমতার কারণে এই ব্রিড ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।
ডিবিসি/কেএলডি