আজ ৪ঠা আগস্ট, ভারতীয় উপমহাদেশের সংগীত ও চলচ্চিত্র জগতের এক অবিস্মরণীয় কিংবদন্তি কিশোর কুমারের জন্মদিন। ১৯২৯ সালের এই দিনে তিনি মধ্যপ্রদেশের খান্ডোয়ায় এক বাঙালি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
আভাস কুমার গাঙ্গুলী নামের সেই শিশুটিই পরবর্তীকালে কিশোর কুমার নামে পরিচিত হয়ে ওঠেন এবং নিজের প্রতিভা ও স্বকীয়তায় জয় করে নেন কোটি কোটি মানুষের হৃদয়। তিনি ছিলেন একাধারে গায়ক, অভিনেতা, সুরকার, গীতিকার, প্রযোজক এবং পরিচালক, এক কথায় এক বহুরূপী প্রতিভা।
কিংবদন্তি শিল্পী কুন্দন লাল সায়গলের ভক্ত কিশোর কুমার কোনো প্রথাগত সঙ্গীত শিক্ষা ছাড়াই সঙ্গীতে নিজের এক স্বতন্ত্র জগৎ তৈরি করেছিলেন। তার ভাই অশোক কুমার তখন বলিউডের প্রতিষ্ঠিত অভিনেতা। ভাইয়ের হাত ধরে চলচ্চিত্রে এলেও কিশোরের মন পড়ে ছিল সুরের ভুবনে।
প্রথমদিকে তিনি মূলত অভিনেতা হিসেবে পরিচিতি পান। 'আন্দোলন' (১৯৫১), 'নোকরি' (১৯৫৪) এবং 'চলতি কা নাম গাড়ি' (১৯৫৮) এর মতো চলচ্চিত্রে তার সাবলীল অভিনয় দর্শকদের মন জয় করে নেয়।
তবে তার আসল পরিচয় প্রতিষ্ঠা পায় প্লেব্যাক সিঙ্গার হিসেবে। শচীন দেববর্মণের (এস.ডি. বর্মণ) হাত ধরে তার প্লেব্যাক জীবনের স্বর্ণযুগের সূচনা হয়। রাহুল দেববর্মণ (আর.ডি. বর্মণ), লক্ষ্মীকান্ত-পেয়ারেলাল এবং বাপ্পী লাহিড়ীর মতো সুরকারদের সুরে তিনি অসংখ্য কালজয়ী গান উপহার দিয়েছেন।
কিশোর কুমারের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য ছিল তার কণ্ঠের অবিশ্বাস্য পরিসর এবং যেকোনো ধরনের গানে অনায়াসে বিচরণ করার ক্ষমতা। রোমান্টিক, বেদনাবিধুর, মজার বা শাস্ত্রীয় সব ধরনের গানেই তিনি ছিলেন সমান পারদর্শী।
ভারতীয় সঙ্গীতে 'ইয়োডলিং' (Yodeling) বা কণ্ঠকে দ্রুত ভাঙার কৌশল জনপ্রিয় করার পেছনে তার অবদান অনস্বীকার্য। 'মেরে সপনো কি রানি', 'রূপ তেরা মাস্তানা', 'এক লড়কি ভিগি ভাগি সি', 'মেরে মেহবুব কয়ামত হোগি', 'চিঙ্গারি কোয়ি ভড়কে' কিংবা 'ও মেরে দিল কে চ্যান'-এর মতো গানগুলো আজও মানুষের মুখে মুখে ফেরে।
গানের পাশাপাশি অভিনয়েও তিনি নিজস্ব এক ধারা তৈরি করেছিলেন। বিশেষ করে তার কমিক টাইমিং ছিল অসাধারণ। 'পড়োশন' (১৯৬৮), 'হাফ টিকিট' (১৯৬২) এবং 'ছোটি সি বাত' (১৯৭৬) এর মতো চলচ্চিত্রে তার অনবদ্য কমেডি অভিনয় আজও দর্শকদের হাসির খোরাক জোগায়।
শুধু গায়ক বা অভিনেতাই নন, তিনি একজন সফল চলচ্চিত্র নির্মাতা ও সুরকারও ছিলেন। 'দূর গগন কি ছাঁও মে' (১৯৬৪) এবং 'ডোর কা রাহি' (১৯৭১) এর মতো চলচ্চিত্র তিনি পরিচালনা করেন এবং সেগুলোর সঙ্গীত পরিচালনাও করেন।
১৯৮৭ সালে প্রয়াত হলেও কিশোর কুমার তার সৃষ্টির মাধ্যমে আজও সঙ্গীতপ্রেমীদের মাঝে অমর হয়ে আছেন।
ডিবিসি/এমইউএ