ইউক্রেন যুদ্ধ আবারও মুখোমুখি এনে দাঁড় করিয়েছে চির বৈরি দুই দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়াকে। প্রতিদিনই পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে পাল্টাপাল্টি হুমকি চললেও, আজ থেকে ৬০ বছর আগে পরমাণু যুদ্ধের সবচেয়ে কাছাকাছি চলে এসেছিল পৃথিবী। শুধু কূটনৈতিক দক্ষতায় সেবার সেই সংকট থেকে রক্ষা পায় বিশ্ব।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত রাশিয়ার মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধের সময় 'কিউবা ক্ষেপণাস্ত্র' সংকটকে দেখা হয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে। ঠিক ৬০ বছর আগে এই সংকট ঘিরে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের মুখে দাঁড়িয়েছিল বিশ্ব।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পারমাণবিক শক্তি, সামরিক ও বিশ্বজুড়ে ভূরাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারের প্রতিযোগিতায় নামে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া। সেসময় কিউবায় অর্থনৈতিক সংকটের জেরে বাড়তে থাকে সমাজতান্ত্রিক ধারণার প্রভাব। ১৯৫৯ সালে ফিদেল কাস্ত্রোর মাধ্যমে বাতিস্তা সরকারের পতন পর, দেশটিতে সমাজতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় আসে।
মার্কিন সম্পর্কের অবনতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কিউবায় প্রভাব বাড়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের। এরফলে কাস্ত্রো সরকারের পতন ঘটানোসহ কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন ও কিউবা আক্রমণের পরিকল্পনাও করে মার্কিন প্রশাসন। আর কিউবার আহ্বানে সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট নিকিতা ক্রুশ্চেভ পাঠাতে থাকেন সহায়তা।
ইতালি ও তুরস্কে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র বসানোর জবাবে কিউবায় ক্ষেপণাস্ত্র পাঠায় রাশিয়া। ফ্লোরিডা উপকূল থেকে মাত্র ৯০ মাইল দূরে রুশ এই হুমকি মেনে নিতে না পেরে, ১৯৬২ সালের ২২ অক্টোবর কিউবায় নৌ অবরোধের ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি।
ক্রুশ্চেভ ও কেনেডির সতর্কতা, পাল্টা সতর্কতা, সোভিয়েত সীমানায় মার্কিন গুপ্তচর বিমান ভূপাতিত করা আর সোভিয়েত জাহাজের মার্কিন সংকেত অমান্য করার ঘটনায় উত্তেজনা চূড়ান্ত রূপ নেয়। যুদ্ধ প্রস্তুতির মধ্যেই জারি করা হয় মার্কিন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সামরিক সতর্কতা। সোভিয়েত সাবমেরিন থেকে পারমাণবিক টর্পেডো ছোঁড়ার সিদ্ধান্ত হলেও, মাত্র একজন কমান্ডার ভাসিলি আকিপভ রাজি না হওয়ায় কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে পারমাণবিক যুদ্ধ এড়ায় বিশ্ব।
আলোচনা আর কূটনীতির চালে দুই দেশ থেকে ক্ষেপণাস্ত্র সরিয়ে নেয়া ও কিউবায় যুক্তরাষ্ট্রের আক্রমণ না করার সিদ্ধান্তে ২৮ অক্টোবর কিউবা থেকে ক্ষেপণাস্ত্র প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন সোভিয়েত নেতা ক্রশ্চেভ। এরমধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটে অক্টোবর সংকটের শ্বাসরুদ্ধকর ঘটনা।