কেনিয়ায় সরকারবিরোধী বিক্ষোভে সহিংসতা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। দেশটির মানবাধিকার কমিশনের তথ্যমতে, দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়া ‘সাবা সাবা’ দিবসের পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে অন্তত ৩১ জন নিহত এবং ১০৭ জন আহত হয়েছেন। খবর কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার।
মঙ্গলবার (৮ই জুলাই) এক বিবৃতিতে কেনিয়ার জাতীয় মানবাধিকার কমিশন (KNCHR) এই তথ্য প্রকাশ করে। সোমবারের এই বিক্ষোভের পর দুটি গুমের ঘটনা ঘটেছে বলেও কমিশন জানায়। দেশজুড়ে চালানো অভিযানে অন্তত ৫৩২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে কমিশন ১০ জন নিহত ও ২৯ জন আহতের খবর দিয়েছিল।
১৯৯০ সালে একদলীয় শাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের দাবিতে হওয়া গণ-অভ্যুত্থানের স্মরণে সোমবার এই পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। এই বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে রাজধানী নাইরোবি এবং এলডোরেট শহরে বিক্ষোভকারী ও পুলিশের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ হয়। মানবাধিকার কমিশন পুলিশের বিরুদ্ধে ছোরা ও বর্শা সজ্জিত সশস্ত্র গোষ্ঠীর সাথে সহযোগিতা করে সহিংসতা সৃষ্টির অভিযোগ এনেছে। এই সময়ে সুপারমার্কেটসহ বহু সম্পত্তি ধ্বংস করা হয়।
কেনিয়ার ল সোসাইটি এবং পুলিশ রিফর্মস ওয়ার্কিং গ্রুপ জানিয়েছে, আদালত অবমাননা করে সামরিক গ্রেডের অস্ত্রসহ পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল, যারা পরিচয় গোপন রাখতে মাস্ক এবং চিহ্নবিহীন যানবাহন ব্যবহার করে। পুলিশ রিফর্মস ওয়ার্কিং গ্রুপের মতে, কেনিয়ার ৪৭টি প্রদেশের মধ্যে ২০টিতে এই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছিল।
এই ঘটনায় জাতিসংঘ মানবাধিকার দপ্তর (OHCHR) গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, নাইরোবিসহ সারা দেশে সহিংস বিক্ষোভ দমনের জন্য পুলিশ এবং নিরাপত্তা বাহিনী প্রাণঘাতী শক্তি ব্যবহার করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
২০২৪ সালের জুন মাস থেকে মূলত তরুণদের নেতৃত্বে এই বিক্ষোভ চলে আসছে। প্রস্তাবিত কর বৃদ্ধির প্রতিবাদে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভ পরবর্তীতে দেশের অর্থনৈতিক সংকট, দুর্নীতি এবং পুলিশের নৃশংসতার মতো বৃহত্তর ইস্যুতে রূপ নেয়। বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটোর পদত্যাগ দাবি করছেন।
এই নিয়ে গত এক বছরে চলা বিক্ষোভে নিহতের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়েছে। মাত্র দুই সপ্তাহ আগে, গত ২৫শে জুন পুলিশের নৃশংসতা এবং সরকারি দুর্নীতির বিরুদ্ধে দেশব্যাপী সমাবেশে কমপক্ষে ১৬ জন নিহত হয়েছিল।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কেনিয়ার স্বরাষ্ট্র সচিব কিপচুম্বা মুরকোমেন গত সপ্তাহে পুলিশকে বিক্ষোভের সময় থানা আক্রমণকারী যেকোনো ব্যক্তিকে দেখামাত্র গুলি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এই সমস্ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের তীব্র নিন্দা এবং পুলিশসহ সকল দায়ী পক্ষের জবাবদিহিতা দাবি করেছে মানবাধিকার কমিশন।
ডিবিসি/এএনটি