এক সময়ের সাড়াজাগানো অভিনেত্রী অঞ্জু ঘোষ। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সবচেয়ে ব্যবসাসফল সিনেমা ‘বেদের মেয়ে জোছনা’র নায়িকা তিনি। দুই বাংলায়ই তার জনপ্রিয়তা রয়েছে। এখন কেমন আছেন তিনি?
এক সময়ের ব্যস্ততা, এখন অফুরন্ত অবসরে সময় কীভাবে কাটে অঞ্জু ঘোষের? এ প্রশ্নের উত্তরে একটি সংবাদমাধ্যমকে অঞ্জু ঘোষ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন, ‘আমার বাড়িতে মন্দির রয়েছে, ধর্মকর্ম পূজা-পার্বণ করেই সময় কেটে যায়। আমার বাসায় যেমন দুর্গার প্রতিমা রয়েছে, তেমনি পবিত্র মক্কা, খাজা বাবার ছবিও রয়েছে। মানব ধর্মের চেয়ে বড় কোনো ধর্ম নাই।’
আর দশজন নায়িকার মতো অঞ্জুর জীবনেও প্রেম এসেছিল। তবে সে প্রেম পরিণতি পায়নি। এ নায়িকার ভাষ্য— ‘এমনও সময় গেছে আমার জন্য ঢাকায় আমার বাড়ির দরজায় সারা রাত অপেক্ষা করেছে আমাকে দেখার জন্য। প্রেমিকদের নামের তালিকা দীর্ঘ। তাদের নাম আজ আর নাই বা বললাম। সবাই এখন সংসার করছেন। চাই না তারা কেউ বিব্রত হোক, তবুও আমি এখন একা ।’
চলচ্চিত্র পরিচালক এফ কবীর চৌধুরীর সঙ্গে আপনার প্রেম-বিয়ের খবর ওই সময় গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার হয়েছিল। ওই বিষয়ে কী বলবেন? অঞ্জু বলেন, ‘আমাদের কোনো দিনই বিয়ে হয়নি। আমার প্রোডাকশন থেকে প্রথম একটি সিনেমা নির্মাণ করি। প্রচুর অর্থ লগ্নি করি। কিন্তু সিনেমাটি যখন রিলিজ দেব, তখন এফ কবীর আবদার করে বসলেন যে, এই সিনেমাটি তার ড্রিমল্যান্ড প্রোডাকশন থেকে রিলিজ করতে হবে। কিন্তু তাতে আমি বেঁকে বসলাম। দু’জনার মধ্যে লেগে গেল দ্বন্দ্ব। অদ্ভুত বিষয় হলো, চুক্তিপত্রে আমি যে স্বাক্ষর করেছিলাম, তা জাল করে বিয়ের কাবিননামা বানানো হয়েছিল। এটা সত্যি যে, এফ কবীর আমার শুভাকাঙ্ক্ষী ছিলেন।’
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ভোলানাথ অপেরার হয়ে যাত্রায় নৃত্য পরিবেশন করতেন ও গান গাইতেন অঞ্জু ঘোষ। ১৯৮২ সালে এফ কবীর চৌধুরী পরিচালিত ‘সওদাগর’ সিনেমার মাধ্যমে তার চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে। সিনেমাটি ব্যবসায়িককভাবে সফল হয়। রাতারাতি তারকা বনে যান তিনি। অঞ্জু বাণিজ্যিক সিনেমার তারকা হিসেবে যতটা সফল ছিলেন, সামাজিক সিনেমায় ঠিক ততটাই ব্যর্থ। বর্তমানে সিনেমা থেকে এখন দূরে রয়েছেন তিনি।
দীর্ঘ অভিনয় ক্যারিয়ারে ৩ শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করে খ্যাতি কুড়িয়েছেন তিনি। উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে রয়েছে- ‘সওদাগর’, ‘নরম গরম’, ‘আবে হায়াত’, ‘রাজ সিংহাসন’, ‘পদ্মাবতী’, ‘রাই বিনোদিনী’, ‘সোনাই বন্ধু’, ‘বড় ভালো লোক ছিল’, ‘আয়না বিবির পালা’, ‘আশা নিরাশা’, ‘নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা’, ‘মালাবদল’, ‘আশীর্বাদ’ প্রভৃতি।
১৯৮৭ সালে সর্বাধিক ১৪টি সিনেমায় অভিনয় করেন অঞ্জু ঘোষ। মন্দার বাজারে যেগুলো ছিল ব্যবসায়িকভাবে সফল। ১৯৮৯ সালে ইলিয়াস কাঞ্চনের সঙ্গে জুটি বেঁধে ক্যারিয়ারের সবচেয়ে হিট সিনেমা ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ উপহার দেন তিনি। সৃষ্টি হয় সবচেয়ে বেশি আয় করা সিনেমার রেকর্ড। দীর্ঘ ৩৪ বছর ধরে সে রেকর্ড আজও অক্ষত। ভাঙতে পারেনি কেউই।
অভিনয়ের পাশাপাশি গানেও বেশ পটু ছিলেন অঞ্জু ঘোষ। ১৯৯০ সালে তার গাওয়া ১২টি গান নিয়ে ‘মালিক ছাড়া চিঠি’ নামের একটি অ্যালবাম প্রকাশিত হয়। কিন্তু ১৯৯৬ সালে হঠাৎই বাংলাদেশ ছেড়ে কলকাতায় চলে যান এই নায়িকা। কাজ করতে শুরু করেন সেখানকার সিনেমায়। কিন্তু কেন তিনি বাংলাদেশ ছেড়েছিলেন, সে উত্তর আজও মেলেনি।
দীর্ঘ ২২ বছর পর সবশেষ ২০১৮ সালে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির উদ্যোগে এফডিসিতে এসেছিলেন অঞ্জু ঘোষ। কিছুদিন থাকার পর কলকাতায় ফিরে যান। সে সময় শোনা গিয়েছিল, ফের বাংলাদেশি সিনেমায় অভিনয় করবেন, কিন্তু সেই যে গেলেন আর আসেননি।
ডিবিসি/রূবিসা