জাতীয়, অপরাধ, রাজধানী

কে এই আজিজ মোহাম্মদ ভাই?

শামীম আহমেদ

ডিবিসি নিউজ

সোমবার ২৮শে অক্টোবর ২০১৯ ১২:৩৪:০২ পূর্বাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

বিতর্কিত ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের গুলশানের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে উদ্ধার হয়েছে বিপুল পরিমান অবৈধ বিদেশী মদ, সীসার পাশপাশি ক্যাসিনো সামগ্রী। বাড়ির ভেতরেই মিলেছে মিনি বার ও ক্যাসিনো।

রবিবার সন্ধ্যা থেকে কয়েকঘন্টায় চালানো মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের এই অভিযানে বাড়ি থেকে দুই কর্মচারিকে আটক করা হয়েছে। তবে, কে এই আজিজ মোহাম্মদ ভাই?

নামের সঙ্গে ‘ভাই’ শব্দটি নিয়ে অনেকেই মনে করেন গডফাদার বলেই আজিজ মোহাম্মদকে ভাই বলা হয়। ‘ভাই’ তাদের বংশপদবী। তাদের পরিবারের সকলেরই নামের শেষে ভাই পদবী আছে। এমনকি নারীদের নামের সঙ্গেও ভাই পদবী রয়েছে। তার পিতার নাম মোহাম্মদ ভাই। মায়ের নাম খাদিজা মোহাম্মদ ভাই।

১৯৪৭ এ দেশভাগের পর তাদের পরিবার ভারতের গুজরাট থেকে বাংলাদেশে আসে। তাদের পরিবার মূলত পারস্য বংশোদ্ভুত। তারা ‘বাহাইয়ান’ সম্প্রদায়ের লোক। ‘বাহাইয়ান’ কে সংক্ষেপে ‘বাহাই’ বলা হয়। উপমহাদেশের উচ্চারণে এই ‘বাহাই’ পরবর্তীতে ‘ভাই’ হয়ে যায়।

ধনাঢ্য এই পরিবার পুরান ঢাকায় বসবাস শুরু করে। ১৯৬২ সালে আজিজ মোহম্মদ ভাইয়ের জন্ম হয় আরমানিটোলায়। পারিবারিক সূত্রে আজিজ মোহাম্মদ ভাই নিজেও শুরু করে ব্যবসা। দিনে দিনে বাড়তে থাকে তার  অর্থ সম্পদ। অলিম্পিক ব্যাটারী, অলিম্পিক বলপেন, অলিম্পিক ব্রেড ও বিস্কুট, এমবি ফার্মাসিটিউক্যাল, এমবি ফিল্ম ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের মালিক তিনি। এছাড়া মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, হংকং, সিঙ্গাপুরে রয়েছে তার হোটেল ও রিসোর্ট ব্যাবসা। আবার, মাদক ব্যাবসার সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণও পাওয়া গেছে।

এছাড়া, তিনি সার্ক চেম্বারের আজীবন সদস্য। মুম্বাই এর ডন দাউদ ইব্রাহিমের সঙ্গে রয়েছে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। ব্যবসার পাশাপাশি ৯০ এর দশকে আজিজ মোহাম্মদ ভাই এমবি ফিল্মসের ব্যানারে চলচ্চিত্র প্রযোজনায় আসেন। চলচ্চিত্রের প্রতি ভালোবাসা থেকে নাকি নায়িকাদের রূপের মোহে, নাকি কালো টাকা সাদা করতে, নাকি শুধুই ব্যবসায়িক মানসিকতায় প্রযোজনায় আসেন সেটা নিয়ে তর্ক রয়ে গেছে। তবে, এসেই নিজের আধিপত্য বিস্তার করে ফেলেন। পরিচালক, অভিনেতা, অভিনেত্রী, মিডিয়া মালিক ও সাংবাদিকরা সমীহ করে চলতো তাকে। ৫০টির মত চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেছেন আজিজ মোহাম্মদ ভাই। দেশের বিজ্ঞাপন জগতে গ্ল্যামার আনতেও তার ভূমিকা ছিলো।

এরশাদের আমলে একবার তিনি গ্রেপ্তার হন। প্রচলিত আছে এক নারী নিয়ে দ্বন্দ্বের কারনেই এরশাদ তাকে গ্রেপ্তার করিয়েছিলেন। পরে, প্রিন্স আব্দুল করিম আগা খানের সুপারিশে মুক্তি পান আজিজ মোহাম্মদ ভাই। চলচ্চিত্র নায়িকাসহ বিভিন্ন নারীর সঙ্গে আজিজ মোহাম্মদ ভাই এর সম্পর্ক নিয়ে নানা মুখরোচক গল্প ছড়াতে থাকে। একজন পত্রিকা সম্পাদককে হত্যার অভিযোগ আসে তার বিরুদ্ধে কিন্তু, সেটাকে পরে হার্ট অ্যাটাক বলে প্রচার করা হয়।

তবে, তিনি ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসেন ১৯৯৭ সালে। সে সময়ের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সালমান শাহক হত্যা করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। কিন্তু, সেটাকে আত্মহত্যা বলেই প্রচার করা হয়। যদিও সালমান শাহ এর পরিবার ও তার ভক্তদের ধারণা এটা হত্যাকাণ্ড। সালমান হত্যাকাণ্ড নিয়ে দুইবার জিজ্ঞাসাবাদও করা হয় আজিজকে। কিন্তু, কোন প্রমাণ না পাওয়া পাওয়ায় ছেড়ে দেয়া হয়। এর দুই বছর পর ঢাকা ক্লাবে খুন করা হয় আরেক চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরীকে। এ হত্যাকাণ্ডেও আজিজ মোহাম্মদ ভাই ও তার পরিবারের জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে।

আজিজ মোহাম্মদ ভাই দাবি করার সুযোগ পেয়েছেন তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন। বর্তমানে আজিজ মোহাম্মদ ভাই সপরিবারে থাইল্যান্ডে থাকেন। সেখান থেকেই ব্যবসা পরিচালনা করেন।

আরও পড়ুন