একই ওষুধ, কোম্পানি ভেদে দামের বিশাল ফারাক। কোনো কোনো ওষুধের দামের পার্থক্য পাঁচ গুণ। এনিয়ে রোগীদের মধ্যেও রয়েছে নানা প্রশ্ন।
অর্থোপেডিকসের সমস্যায় দেয়া হয় বনোভা নামের একটি ওষুধ। যা রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস বিক্রি করে দুই হাজার ৫শ' ৭টাকা ৫২ পয়সা করে। ওষুধটি হেলথ কেয়ার ফার্মাসিটিক্যালস বনড্রোভা নামে বাজারে বিক্রি করে ১ হাজার ৯শ' ৬০ টাকায়।
এছাড়াও ল্যাবএইড ফার্মা বনএইড নামে ১৫০০ টাকায় এবং রেনেটা ইভানা নামে ওষুধটি বিক্রি করছে ৯৯৫ টাকায়। ইনসেপ্টা বোন-গার্ড নামে ৫১০ টাকায় এবং স্কয়ার ম্যাক্সবোন নামে ৫১০ টাকায় এই ওষুধ বিক্রি করছে। অর্থাৎ প্রথম সারির কয়েকটি ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানির এ ওষুধটির দামের পার্থক্য দুই হাজার টাকা পর্যন্ত।
কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ দশ মিলিগ্রামের আরটিভি ডেল্টা ফার্মাসিটিক্যালস বিক্রি করে ৬ টাকা করে। একই ওষুধ স্কয়ার এবং বেক্সিমকো বিক্রি করে ২০ টাকা করে।
মন্টিলুকাস ১০ মিলিগ্রামের ৩০টি ওষুধের একপাতা ডেল্টা ফার্মাসিটিক্যালস বিক্রি করে ৩০০ টাকায়। অন্যান্য কোম্পানি বিক্রি করে ৪৮০ টাকা করে।
বাজারে একই জেনেরিকের এমন শত শত ওষুধ কোম্পানি ভেদে দামের পার্থক্য আকাশ পাতাল। এ নিয়ে রোগীদের মনে রয়েছে নানা প্রশ্ন। রোগীরা জানান, যেই ওষুধ ১০০ টাকায় কেনার কথা ছিল, সেটা ৫০০ টাকা দিয়ে কিনতে হয়েছে। এই বিষয়টি ডাক্তারের ওপর নির্ভর করে। তারা যদি চায় তাহলে রোগীর জন্য কম দামের ওষুধ প্রেসক্রপিশনে লিখতে পারে।
প্রশ্ন হলো, কোম্পানিভেদে একই জেনেরিকের ওষুধের দামের পার্থক্য মানের পার্থক্য নির্দেশ করে কিনা? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চিকিৎসকদের উচিত রোগীর সক্ষমতা বিবেচনা করে কম দামের ভালো ওষুধটি দেয়া।
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. রেদওয়ানুর রহমান বলেন, শুধুমাত্র দামের ওপর নির্ভর করে ওষুধের ভালো খারাপের কোনো আশঙ্কা থাকেনা। রোগীর যদি দীর্ঘস্থায়ী চিকিৎসার প্রয়োজন হয় তাহলে তার জন্য বেশি দামের ওষুধ লেখাটা উচিত নয়। কারণ, তারা সেটা কিনতে পারবেনা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার বলেন, কোম্পানি তাদের সমস্ত বিষয় বিবেচনা করে ওষুধের দাম নির্ধারণ করে। দামের মধ্যে পার্থক্যের কারণে ওষুধ যে কাজ করবেনা বিষয়টি সেরকম নয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল ফার্মেসি ও ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. এস এম আব্দুর রহমান বলেন, কেউ চীন থেকে বা ভারত থেকে ওষুধের কাচামাল নিয়ে আসল অথবা অন্য কেউ সেটা সুইজারল্যান্ড থেকে নিয়ে আসল এবং সেগুলোর দাম হয়তো দেড় গুণ। সেক্ষেত্রে দামের পার্থক্য হতে পারে দেড় গুণ। কিন্তু আমাদের এখানে কোম্পানি ভেদে ওষুধের দামের পার্থক্য দেখা যায় প্রায় ৮ থেকে ১০ গুণ।