স্বাস্থ্য

কোলোরেক্টাল ক্যান্সার থেকে বাঁচার উপায়, যা জানা একান্ত প্রয়োজন

ডেস্ক নিউজ

ডিবিসি নিউজ

বৃহঃস্পতিবার ৬ই মার্চ ২০২৫ ০৫:১৫:১২ অপরাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

প্রতি বছর মার্চ মাসে কোলোরেক্টাল ক্যান্সার সচেতনতা মাস পালিত হয়। এর মূল উদ্দেশ্য হলো কোলন (বড় অন্ত্র) এবং রেক্টাল (মলাশয়) ক্যান্সার সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা, প্রাথমিক স্ক্রিনিংকে উৎসাহিত করা এবং এই রোগের প্রতিরোধ ও চিকিৎসার গুরুত্ব তুলে ধরা।

কোলোরেক্টাল ক্যান্সার সাধারণত ক্ষুদ্রান্তের শেষ থেকে পায়ুপথের পূর্ব পর্যন্ত অংশে হয় এটি সারা পৃথিবীব্যাপী তৃতীয় প্রধান একটি ক্যান্সার এবং মৃত্যুর কারণ হিসেবে দ্বিতীয়।  

 

বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থার ২০২২ সালের তথ্য অনুসারে সারা পৃথিবীব্যাপী ১৯ লাখ ২৬ হাজার ৪২৫ জন মানুষ কলোরেক্টাল ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে  এবং এদের মাঝে ৯ লাখ ৪ হাজার ১৯ জন মৃত্যুবরণ করেছে বাংলাদেশে ৫৭২৩ জন মানুষ আক্রান্ত হয়েছে এবং ৩৪৫৭ জন মৃত্যু বরণ করেছে।

 

কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের কারণসমূহঃ

 

বয়স এই ক্যান্সারের অন্যতম একটি কারণ। ৪০ বছর বয়সের পর থেকে এটি বাড়তে থাকে এবং ৫০ বছরের পরে এটা আরো বেড়ে যায়। এছাড়াও লাল মাংস, প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং প্রাণীজ চর্বি জাতীয় খাবার, মদ্যপান, স্থুলতা, শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা, ধুমপান করা, পারিবারিক ইতিহাস যেমন পারিবারিক অ্যাডেনোমেটাস পলিপোসিস (এফএপি) এবং বংশগত ননপলিপোসিস কোলোরেক্টাল ক্যান্সার (এইচএনপিসিসি) ৮-১০ বছর বা তার বেশি সময় ধরে আলসারেটিভ কোলাইটিসের ইতিহাস থাকা।

 

কোলন ক্যান্সারের লক্ষণ সমূহঃ

 

ক্যান্সারের অবস্থান ভেদে কোলন ক্যান্সারের লক্ষণ ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। যেমন বাম পাশের কোলন এ যদি ক্যান্সার হয় তাহলে সাধারণত;

 

১। মলত্যাগের অভ্যাসের পরিবর্তন হয়, কেউ যদি আগে স্বাভাবিক মলত্যাগ করত তাহলে এখন হয়তো তার কোষ্ঠকাঠিন্য হয় অথবা পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হয় অনেক সময় সকালের দিকে ডায়রিয়া হয় যেটাকে আমরা আর্লি মর্নিং ডায়রিয়া বলি
২। দ্বিতীয়ত পায়খানার রাস্তা দিয়ে রক্ত বের হওয়া যেটা সাধারণত ফ্রেশ ব্লাড যায় 
৩। ওজন কমে যাওয়া 
৪। ক্ষুধামন্দতা

 

অনুরূপভাবে ডানপাশের কোলন ক্যান্সারের কিছু লক্ষণ আছে। যেমনঃ

 

১। অপ্রত্যাশিত রক্তশূন্যতা বা কোন কারণ ছাড়াই রক্তশূন্যতা, অনেক সময় শরীরে রক্ত দেয়ার ইতিহাস থাকে
২। পেটের ডান পাশে ব্যথা অনুভূত হওয়, যা অনেক সময় অ্যাপেন্ডিসাইটিসের ব্যথা বলে ভুল করে থাকি 
৩। ওজন কমে যাওয়া 
৪। দুর্বল লাগা 
৫। ক্ষুধামন্দতা 
৬। বমি বমি ভাব হওয়া বা বমি হওয়া

 

এছাড়াও ক্যান্সার যদি অন্য কোথাও ছড়িয়ে যায় বা এডভান্স হয় তাহলে এর বাইরে আরও কিছু লক্ষণ দেখা যায় যেমন জন্ডিস হওয়া, শ্বাসকষ্ট হওয়া, পেটে পানি আসা ইত্যাদি।

 

রোগ নির্ণয়ঃ

 

ফিজিকাল এক্সামিনেশন 
ডিজিটাল রেকটাল এক্সামিনেশন করে আমরা প্রথমে একটি ধারনা পেতে পারি 
এছাড়াও কিছু ইনভেস্টিগেশন যেমন, 
কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট 
ফুল কলোনস্ককোপি এবং সন্দেহজনক যদি কোন কিছু থাকে তবে সেখান থেকে বায়োপসি নেয়া।

যদি কনভেনশনাল কোলোনস্ককোপি করা না যায় সে ক্ষেত্রে সিটি কোলোনোগ্রাফি করা হয় এছাড়াও স্টেজিং এর জন্য আরো কিছু পরীক্ষা-নিরিক্ষা করা যেতে পারে যেমন বুক পেট এবং তলপেটের সিটি স্ক্যান, পেলভিক বা তলপেটের এমআরআই বা পেট সিটিস্ক্যান।
 
প্রতিরোধ:

১. নিয়মিত ভিটামিন, মিনারেলযুক্ত খাবার গ্রহণ
২. খাদ্য তালিকায় আঁশযুক্ত এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার রাখা
৩. মদ্যপান না করা
৪. ধূমপান পরিহার করা
৫. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা
৬. দৈনিক অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা
৭. রোগ নির্ণয়ের জন্য নিয়মিত স্ক্রিনিং বা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো।

 

ইউনাইটেড স্টেটস মালটি সোসাইটি প্রিভেনটিভ ট্যাস্কফোর্স কোলরেক্টাল কান্সার স্ক্রিনিং এবং সার্ভিলেন্সের জন্য একটি গাইডলাইন প্রণয়ন করেছেন সেখানে যে সকল রোগীদের এভারেজ রিস্ক আছে তাদের ক্ষেত্রে স্ক্রিনিং ৫০ বছর বয়সে শুরু করা হয়। যেকোনো একটি পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় যেমন কোলোনস্কপি  প্রতি ৫ থেকে ১০ বছর অন্তর অথবা ফ্লেক্সিবল সিগময়ীডোস্কপি প্রতি ৫ বছর অন্তর অথবা সিটি ক্লোনোগ্রাফি প্রতি ৫ বছর অন্তর অথবা ফিকাল অকাল্ট ব্লাড টেস্ট প্রতি বছরে ১ করে অথবা ফীকাল ইমিনো কেমিক্যাল টেস্টিং প্রতি ১ বছর অন্তর।

এছাড়াও কিছু রোগী আছে যারা খুব উচ্চ ঝুঁকিতে থাকে বা যাদের পারিবারিক ইতিহাস আছে অথবা কলোরেক্টাল  ক্যান্সারের ব্যক্তিগত ইতিহাস অথবা লিংক সিনড্রম বা এইচএনপিসিসি আছে।

 

চিকিৎসা পদ্ধতিঃ

 

কোলোরেক্টাল ক্যান্সার এর চিকিৎসা পদ্ধতি রোগের স্টেজ, অবস্থান এবং রোগীর শারীরিক অবস্থার উপর নির্ভর করে নির্ধারিত হয়। সাধারণত, কোলন বা রেক্টাল ক্যান্সারের চিকিৎসায় নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলো ব্যবহৃত হয়—

 

১. সার্জারি (অস্ত্রোপচার): কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের জন্য এটি সবচেয়ে প্রচলিত চিকিৎসা।
২. কেমোথেরাপি: অস্ত্রোপচারের আগে বা পরে ব্যবহার করা হয়, যাতে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করা যায় বা পুনরায় ফিরে আসা ঠেকানো যায়।
৩. রেডিয়েশন থেরাপি: বিশেষ করে রেক্টাল ক্যান্সার হলে এটি প্রয়োগ করা হয় এবং অস্ত্রোপচারের আগে বা পরে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করার জন্য এটি ব্যবহার করা হয়।
৪. টার্গেটেড থেরাপি: নির্দিষ্ট ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি রোধ করতে ব্যবহার করা হয়।
৫. ইমিউনোথেরাপি: রোগীর ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করার জন্য করা হয়।
৬. প্যালিয়েটিভ কেয়ার: যেসব ক্ষেত্রে ক্যান্সার অনেক ছড়িয়ে গেছে এবং নিরাময় সম্ভব নয়, সেখানে ব্যথা ও কষ্ট কমানোর জন্য প্যালিয়েটিভ কেয়ার দেওয়া হয়।

 

উপসংহার:

 

কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের চিকিৎসা নির্ভর করে রোগীর অবস্থা ও ক্যান্সারের স্টেজের উপর। প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে চিকিৎসার সাফল্যের হার অনেক বেশি। তাই নিয়মিত স্ক্রিনিং করা গুরুত্বপূর্ণ।

 

লেখক: ডা. মো. একরামুল হক জোয়ার্দ্দার
এমবিবিএস, বিসিএস (স্বাস্থ্য)
এমএস (ক্যান্সার সার্জারি), 
এফআইসিএস (আমেরিকা)
ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ সার্জন
জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, মহাখালী, ঢাকা।

আরও পড়ুন