গাজায় ২১ মাস ধরে চলা সংঘাত অবসানের লক্ষ্যে এক নজিরবিহীন কূটনৈতিক পদক্ষেপে কাতার, সৌদি আরব এবং মিশরের মতো প্রভাবশালী আরব দেশগুলো হামাসকে নিরস্ত্র হয়ে গাজার নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
মঙ্গলবার (২৯শে জুলাই) আরব লীগ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং আরও ১৭টি দেশ এক যৌথ ঘোষণায় এই দাবি জানায়। ফিলিস্তিনিদের মানবিক সংকট মোকাবেলার পাশাপাশি দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে এই পদক্ষেপকে দেখা হচ্ছে।
জাতিসংঘে অনুষ্ঠিত এক সম্মেলন থেকে প্রকাশিত এই যৌথ ঘোষণায় বলা হয়, ‘গাজার যুদ্ধ শেষ করার প্রেক্ষাপটে, হামাসকে অবশ্যই গাজায় তাদের শাসনের অবসান ঘটাতে হবে এবং একটি সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তায় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের অস্ত্র হস্তান্তর করতে হবে।’
ঘোষণায় আরও বলা হয়, ‘জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের আমন্ত্রণে আমরা একটি অস্থায়ী আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা মিশন মোতায়েনের পক্ষে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদনক্রমে এই মিশন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহায়তায় কাজ করবে।’
ফ্রান্স, যারা গত সপ্তাহে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে, এই ঘোষণাকে ঐতিহাসিক বলে অভিহিত করেছে। ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ-নোয়েল বারোত বলেন, ‘এই প্রথম আরব দেশগুলো এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো একযোগে হামাসের নিন্দা জানাল,
৭ অক্টোবরের ঘটনার নিন্দা করল, হামাসের নিরস্ত্রীকরণের দাবি তুলল এবং ফিলিস্তিনি প্রশাসন থেকে তাদের বাদ দেওয়ার কথা বলল। একই সাথে তারা ভবিষ্যতে ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ইচ্ছাও স্পষ্টভাবে প্রকাশ করেছে।’
এদিকে, এই ঘোষণার পাশাপাশি ফ্রান্সের সাথে সহ-স্বাক্ষরকারী ব্রিটেন ইসরায়েলকে একটি চরমপত্র দিয়েছে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার মঙ্গলবার বলেন, ‘ইসরায়েলি সরকার যদি গাজার ভয়াবহ পরিস্থিতির অবসান ঘটাতে, যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে এবং দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের পুনরুজ্জীবিত করে একটি দীর্ঘমেয়াদী ও টেকসই শান্তিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে বাস্তবিক পদক্ষেপ না নেয়, তবে যুক্তরাজ্য জাতিসংঘের আগেই ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে।’
এই সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল অংশ নেয়নি। ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের যেকোনো সম্ভাবনাকে হামাসের জন্য ‘পুরস্কার’ হিসেবে আখ্যায়িত করে তা প্রত্যাখ্যান করেছে।
যদিও ইসরায়েল অতীতে গাজাকে অসামরিকীকরণ এবং হামাস নেতাদের নির্বাসনে পাঠানোর শর্তে চুক্তির কথা বলেছিল, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বরাবরই দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের সম্ভাবনা নাকচ করে এসেছেন। তিনি অধিকৃত পশ্চিম তীর শাসনকারী ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) গাজায় ফিরে আসার সম্ভাবনাও প্রত্যাখ্যান করেছেন।
উল্লেখ্য, ২০০৬ সালে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর হামাস গাজার ক্ষমতা দখল করে এবং পিএ নেতৃত্বকে সেখান থেকে বিতাড়িত করে। ইসরায়েল এর পরিবর্তে গাজায় অনির্দিষ্টকালের জন্য সামরিক দখলদারিত্ব বজায় রাখার প্রস্তাব দিয়েছে, যেখানে তাদের অনুমোদিত স্থানীয় নেতারা সরকার গঠন করবে।
সূত্র- নিউ ইয়র্ক পোস্ট
ডিবিসি/এনএসএফ