আন্তর্জাতিক, আরব

গাজার হাসপাতালে আর্তনাদ, নিহত একাধিক শিশু

হ্যাপী মাহমুদ

ডিবিসি নিউজ

বৃহঃস্পতিবার ১০ই জুলাই ২০২৫ ০৯:৩২:২৮ অপরাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

বিশ্বাস করা কঠিন, কিন্তু একটি শিশুর স্বপ্ন ছিল শুধু পেটপুরে রুটি খাওয়ার। যুদ্ধের পর স্কুলে ফিরে যাওয়ার স্বপ্ন দেখা সেই শিশুটি আজ চিরতরে ঘুমিয়ে পড়েছে। তার মায়ের বুকফাটা আর্তনাদে এখন গাজার বাতাস ভারী।

বৃহস্পতিবার, ১০ই জুলাই, ২০২৫। গাজার দেইর আল-বালাহ এলাকাটি আরও একবার রক্তাক্ত হলো ইসরায়েলি হামলায়। হতাহতদের ভিড়ে ভরে উঠল আল-আকসা শহীদ হাসপাতাল। হাসপাতালের মেঝেতে রক্তের দাগ, আহত শিশুদের আর্তনাদ এবং স্বজনহারাদের কান্নায় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। এই হামলায় বেশ কয়েকজন নিহত ও আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

হাসপাতালের করিডোর ও ওয়ার্ডগুলোতে আহতদের উপচে পড়া ভিড়। সীমিত সম্পদে চিকিৎসক ও নার্সরা আপ্রাণ চেষ্টা করছেন প্রত্যেককে বাঁচানোর। শিশুদের ছোট ছোট শরীর ক্ষতবিক্ষত, তাদের চোখেমুখে আতঙ্ক আর যন্ত্রণার ছাপ। হাসপাতালের মেঝেতেই শুইয়ে রাখা হয়েছে অনেককে, সেখানেই চলছে তাদের চিকিৎসা। অন্যদিকে, মর্গের বাইরে সাদা কাফনে মোড়ানো সারি সারি লাশ, যার মধ্যে রয়েছে নিষ্পাপ শিশুরাও। স্বজনেরা তাদের প্রিয়জনের নিথর দেহের পাশে বসে বিলাপ করছেন, তাদের কান্নায় মিশে আছে অসহায়ত্ব আর তীব্র ক্ষোভ।

 

এই হামলায় নিহত এক শিশুর মা, সামাহ আল-নূরি, কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, "আমার মেয়েটা গলায় চিকিৎসার জন্য একটি মেডিকেল ক্লিনিকে গিয়েছিল। সেখানে তো শুধু শিশুরাই ছিল। ওরা সেখানে গোলা মারল। ওর ভাই দেখতে গিয়ে জানাল, সবাই মারা গেছে। কী দোষ ছিল ওদের? আমার মেয়েটার কী দোষ? ও তো শুধু একটা নিরাপদ জায়গায় চিকিৎসা নিতে গিয়েছিল। কেন ওরা আমার মেয়েকে কেড়ে নিল?"

 

তিনি আরও বলেন, "ঈশ্বরের কসম, এটা একটা গণহত্যা। আল্লাহ যেন এর বিচার করেন। আমার মেয়েটা নিষ্পাপ ছিল। ওর একমাত্র স্বপ্ন ছিল কবে যুদ্ধ শেষ হবে আর ও স্কুলে ফিরে যাবে। ও আমাকে বলত, 'মা, আমি দিনে চারটা-পাঁচটা রুটি খাব'। ওর স্বপ্নই ছিল শুধু পেটপুরে খাওয়া। হে আল্লাহ, একটা শিশুর স্বপ্ন এটুকুই ছিল! আমার সোনা, তোমার সব স্বপ্ন তো শেষ হয়ে গেল।"

 

এই হামলার বিষয়ে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা দেইর আল-বালাহ এলাকায় হামাসের একজন 'নুখবা সন্ত্রাসীকে' লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে, যিনি ২০২৩ সালের ৭ই অক্টোবর ইসরায়েলে হামলায় অংশ নিয়েছিলেন। এক বিবৃতিতে তারা জানায়, "ওই এলাকায় বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার বিষয়ে আইডিএফ অবগত আছে... এই ঘটনায় নিরীহ ব্যক্তিদের ক্ষতির জন্য আইডিএফ দুঃখিত এবং এ ধরনের ক্ষতি যথাসম্ভব কমানোর জন্য কাজ করে যাচ্ছে।" ঘটনাটি পর্যালোচনা করা হচ্ছে বলেও তারা উল্লেখ করে।

 

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাসের হামলার পর থেকে ইসরায়েলের প্রতিশোধমূলক হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা ৫৭,০০০ ছাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। যুদ্ধের কারণে গাজার অধিকাংশ মানুষ বাস্তুচ্যুত এবং জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, প্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষ দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি।

তথ্য:রয়টার্স

 

ডিবিসি/জেআরওয়াই

 

আরও পড়ুন