ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর একটি সম্ভাব্য স্থল অভিযানের পরিকল্পনায় গাজা শহরের প্রায় ৯ লক্ষ ফিলিস্তিনির ভাগ্য চরম অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। একটি আসন্ন ও বড় আকারের স্থল অভিযানের প্রস্তুতির খবর আসায় এই বিশাল জনগোষ্ঠী ঘরবাড়ি হারানোর পাশাপাশি এক অকল্পনীয় মানবিক সংকটের শিকার হতে পারে বলে গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
আল জাজিরার সংবাদ অনুযায়ী, ইসরায়েল গাজা দখলের কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা না দিলেও এর দক্ষিণ সীমান্তে ব্যাপক সৈন্য সমাবেশ এবং সামরিক কার্যকলাপ বৃদ্ধি একটি স্থল অভিযানের সুস্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে। সামরিক বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, গাজা শহর থেকে প্রায় ৯ লক্ষ মানুষকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত জটিল এবং এতে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে তা হবে সাম্প্রতিক বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ মানবিক বিপর্যয়।
এই স্থানচ্যুতির হুমকির মধ্যেই গাজায় দৈনন্দিন সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে, যা পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে। কেবল ভোর থেকে চালানো ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৩৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। মর্মান্তিকভাবে, নিহতদের মধ্যে ২১ জনই ছিলেন খাদ্য ও ত্রাণ সহায়তার জন্য অপেক্ষমাণ সাধারণ মানুষ। এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, গাজায় সাধারণ নাগরিকদের জন্য কোনো স্থানই নিরাপদ নয়।
সহিংসতার শিকার হওয়ার ঝুঁকি কেবল বোমা বা ড্রোনেই সীমাবদ্ধ নেই। বিতর্কিত মার্কিন-ইসরায়েল সমর্থিত সংস্থা জিএইচএফ (GHF)-এর ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলোও মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। এই সংস্থা পরিচালিত কেন্দ্রগুলোতে এ পর্যন্ত ১,৩০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে প্রাণ হারিয়েছেন। নির্মম পরিহাস হলো, ইসরায়েল এই কুখ্যাত সংস্থার কার্যক্রম আরও ১২টি কেন্দ্রে প্রসারিত করার পরিকল্পনা করছে।
দীর্ঘমেয়াদে ইসরায়েলের লক্ষ্য হলো গাজার সম্পূর্ণ নিরাপত্তা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া এবং হামাস বা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে বাদ দিয়ে একটি নতুন বেসামরিক প্রশাসন তৈরি করা। বিশ্লেষকদের মতে, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হতে বহু বছর লেগে যেতে পারে।
আপাতত, গাজার সাধারণ মানুষ এক দ্বিমুখী হুমকির মুখে জীবনযাপন করছে। একদিকে অবিরাম হামলা ও মৃত্যুর ভয়, অন্যদিকে ঘরছাড়া হওয়ার আতঙ্ক তাদের ভবিষ্যৎকে এক গভীর অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে।
ডিবিসি/এনএসএফ