গত ২০২২ সালে ৯ জনকে হত্যার অভিযোগের পর আবার ৫ জনকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে এমভি ফারহান-৬ লঞ্চটির বিরুদ্ধে। এর বাইরেও আরও ছোট-বড় দুর্ঘটনার অভিযোগ রয়েছে লঞ্চটির বিরুদ্ধে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) লঞ্চটির অসতর্কতার কারণে ৫ জনের প্রাণ ঝরল। বেপরোয়া এ লঞ্চটির লাগাম যেন কেউ ধরতে পারছে না।
লঞ্চ মালিক সমিতি সূত্র জানায়, এমভি ফারহান-৬ লঞ্চের মালিক বরিশাল-৩ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপু। দীর্ঘদিন ধরে তিনি লঞ্চের ব্যবসা করে আসছেন। এ সংসদ সদস্যের মালিকানায় মোট ১৮টি লঞ্চ রয়েছে। এর মধ্যে ১২টি বর্তমানে চলাচল করছে। লঞ্চ ব্যবসা পরিচালনায় সাংসদ গোলাম কিবরিয়া টিপুর বিরুদ্ধে সিন্ডিকেটসহ নানা অভিযোগও রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বারবার অপরাধ করার পরও পার পেয়ে যাওয়ায় লঞ্চটির কর্তৃপক্ষ বেপরোয়া হয়ে গেছে। এরফলে তাদের মধ্যে আইন মেনে চলার প্রবণতা কমে গেছে। এ কারণে লঞ্চটির আঘাতে বারবার মানুষের মৃত্যু হলেও টনক নড়ছে না তাদের। এ নিয়ে বড় তিনটি দুর্ঘটনা ঘটালো এমভি ফারহান-৬।
ভোলা-চরফ্যাশন রুটে লঞ্চে যাতায়াত করা একাধিক যাত্রী জানান, একজন সংসদ সদস্যের মালিকানায় লঞ্চ এভাবে মানুষের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে এটা খুবই ভয়ানক ব্যাপার। হয়তোবা উনি সংসদ সদস্য বলে ক্ষমতার জোরে এভাবে বারবার অপরাধ করে যাচ্ছেন। এতে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা হুমকিতে পরে যাচ্ছে। এ বিষয়ে ঊর্ধতনদের অবশ্যই পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
আজকের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) বিকেলে এমভি তাশরিফ-৪ ও এমভি পূবালী-১ নামে দুটি লঞ্চ রশি দিয়ে পল্টুন বাঁধা ছিল। এ দুটি লঞ্চের মাঝখান দিয়ে ফারহান-৬ নামের আরেকটি লঞ্চ ঢুকানোর সময় এমভি তাশরিফ-৪ লঞ্চের রশি ছিঁড়ে যায়। এতে পাঁচজন যাত্রী লঞ্চে ওঠার সময় লঞ্চটির ছিঁড়ে যাওয়া রশির আঘাতে গুরুতর আহত হন। এরপর সদরঘাট ফায়ার স্টেশনের অ্যাম্বুলেন্সযোগে তাদের মিটফোর্ড হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে তারা সবাই মারা যান।
এর আগে গত ২০২২ সালে ফারহান-৬ লঞ্চের খামখেয়ালির কারণে নয়জনের মৃত্যুর অভিযোগ রয়েছে। সূত্র জানায়, গত ২০২২ সালের ৪ জানুয়ারি বিকেলে এমভি ফারহান-৬ যাত্রীবাহী লঞ্চ ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার বেতুয়া ঘাট থেকে প্রায় ২০০ যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসে। পথিমধ্যে এটির একটি ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। ঘন কুয়াশার মধ্যে এক ইঞ্জিন চালু রেখেই লঞ্চটি ঢাকার দিকে আসতে থাকে। ৫ জানুয়ারি সকালে ধলেশ্বরী ও বুড়িগঙ্গার মোহনা পার হওয়ার সময় ধর্মগঞ্জ খেয়াঘাট এলাকায় একটি যাত্রীবোঝাই ট্রলারের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় লঞ্চটির। এতে ট্রলারটি ডুবে যায়। দুর্ঘটনায় ৯ যাত্রীকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
ওই ঘটনার অভিযোগে আরও বলা হয়, এমভি ফারহান-৬ লঞ্চে দায়িত্ব পালনকালীন মাস্টার, ড্রাইভার ও ট্রলারটির চালক সংঘর্ষ এড়ানোর বিধান অনুসরণ না করায় এবং তাঁদের অদক্ষতা ও অবহেলায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। নৌপরিবহন অধিদপ্তর গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর যাত্রীদের মৃত্যুর দায়জনিত সম্পূরক মামলা করা হবে।
আজকের (বৃহস্পািতবারের) দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে রয়েছেন, পিরোজপুরের রিপন হাওলাদর, পটুয়াখালির মুক্তা ও তার মেয়ে মাইশা, পিরোজপুরের বিল্লাল ও ঠাকুরগাঁও এর এর রবিউল। পরে লঞ্চটি ও দুইজন মাস্টারকে আটক করে বিআইডব্লিউটিএ। এছাড়া এ ঘটনায় তাশরিফ-৪ এবং ফারহান-৬ লঞ্চের রুট পারমিট বাতিল করা হয়।
ডিবিসি/কেএলডি