শীতকালে শরীরে ব্যথা হওয়ার কথা শোনা যায়। ঘাড়েও অনেকে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এসব ঘাড়ের ব্যথা খুব গুরুতর কিছু নয় এবং তা কয়েক দিনের মধ্যে সেরেও যায়। কিন্তু অনেক সময় ঘাড়ের ব্যথা গুরুতর আঘাত বা অসুস্থতার লক্ষণও হতে পারে।
যেকোনো বয়সে যে কারোরই ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে। এক টানা বেশিক্ষণ ল্যাপটপে কাজ বা দীর্ঘক্ষণ মোবাইল দেখাও এ ব্যথার কারণ হতে পারে। ভারী জিনিস তোলার সময়ে অসাবধানতায় ঘাড়ে চোট পেলেও ব্যথা হতে পারে। প্রথম অবস্থায় অগ্রাহ্য করলে ভোগান্তির মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।
পড়ে যাওয়া, গাড়ি দুর্ঘটনা এবং খেলাধুলার বিভিন্ন আঘাতে ঘাড় অধিকতর ঝুঁকিতে থাকে। অন্যদিকে ঘাড়ের হাড় (সারভাইকাল কশেরুকা) ভেঙে গেলে মেরুদণ্ডও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। হঠাৎ মাথার ঝাঁকুনি থেকে ঘাড়ের আঘাতকে সাধারণত হুইপ্ল্যাশ বা কশাঘাত বলা হয়।
হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক হলে কিংবা রক্তচাপ অনেক বেশি বেড়ে গেলে ঘাড় ব্যথা হতে পারে, যার সাথে অন্যান্য উপসর্গগুলোও দেখা দেয় যেমন–হাঁপানি, ঘাম, বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া, বাহু বা চোয়াল ব্যথা। এ অবস্থায় অনতিবিলম্বে হাসপাতালে যেতে হবে।
রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস বা বাত রোগে ব্যথা, হাড়ের জয়েন্ট ফুলে যাওয়া এবং হাড়ের অস্বাভাবিকতা হয়। ঘাড় বা এর আশেপাশে এগুলো হলে, ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে।
যেকোনো ট্রমা বা আঘাত থেকে যখন কশেরুকার একটি ডিস্ক বেরিয়ে আসে, তাতে মেরুদণ্ডের ওপর চাপ পড়তে পারে। একে হার্নিয়েটেড সার্ভিকাল ডিস্ক বলা হয়, যা ফেটে যাওয়া বা স্লিপড ডিস্ক নামেও পরিচিত।
আপনার বয়স বাড়ার সাথে সাথে সার্ভিকাল ডিস্ক ক্ষয়ে যেতে পারে। এটি স্পন্ডিলাইটিস বা ঘাড়ের অস্টিওআর্থারাইটিস নামে পরিচিত। এটি কশেরুকাগুলোর মাঝে জায়গা কমিয়ে দেয় এবং জয়েন্টগুলোতে চাপ দেয়।
মস্তিষ্ক এবং মেরুদণ্ডকে ঘিরে থাকে এক ধরনের পাতলা টিস্যু। এই পাতলা টিস্যুতে জীবানুর সংক্রমণ বা প্রদাহকে মেনিনজাইটিস বলে। মেনিনজাইটিসের লক্ষণগুলো হলো মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব বা বমি, আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা, জ্বর। মেনিনজাইটিস জীবনঘাতি হয়ে উঠতে পারে।
স্পাইনাল স্টেনোসিস ঘটে যখন মেরুদণ্ড সরু হয়ে আসে এবং তাতে চাপ পড়ে। এটি আর্থ্রাইটিস বা অন্যান্য অসুস্থতার কারণে দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ থেকে হতে পারে।
দীর্ঘস্থায়ী ঘাড় ব্যথার ক্ষেত্রে ঘরে বসে না থেকে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। হতে পারে, আপনার ঘাড়ে ব্যথা শরীরের অন্য কোনো জটিল সমস্যার জানান দিচ্ছে।