আন্তর্জাতিক, বিবিধ, আমেরিকা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

চন্দ্র বিজয়ের পর এবার শেয়ারবাজারে ফায়ারফ্লাই

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ডিবিসি নিউজ

রবিবার ১৩ই জুলাই ২০২৫ ০৪:১০:৪৭ অপরাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

মহাকাশ জয়ের সপ্ন নিয়ে এবার পাবলিক মার্কেটে প্রবেশ করতে চলেছে ফায়ারফ্লাই অ্যারোস্পেস। এই বছর ঐতিহাসিক বাণিজ্যিক চন্দ্র অবতরণসহ বেশ কয়েকটি বড় সাফল্য অর্জনকারী এই সংস্থাটি শুক্রবার নিয়ন্ত্রকদের কাছে তাদের আইপিও (Initial Public Offering) আনার পরিকল্পনা জমা দিয়েছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (SEC) কাছে জমা দেওয়া এস-১ (S-1) ডকুমেন্টটি সংস্থাটির আর্থিক অবস্থা এবং ভবিষ্যৎ পরিচালনার পরিকল্পনা সম্পর্কে একটি বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরে। যদিও সংস্থাটি কতগুলো শেয়ার বাজারে ছাড়বে বা তাদের মূল্য কত হবে, সে সম্পর্কে এখনো কিছু জানানো হয়নি। এর অর্থ হলো, সংস্থাটির চূড়ান্ত মূল্যায়ন এখনও নির্ধারিত হয়নি।

 

আইপিও-তে যাওয়ার মুহূর্তে ফায়ারফ্লাইয়ের হাতে নগদ ও সমতুল্য সম্পদ রয়েছে ১৭৬.৯ মিলিয়ন ডলার। যদিও সংস্থাটি ক্রমাগত লোকসানের মধ্যে রয়েছে, তবে তাদের অনুমান, এই নগদ অর্থ আগামী ১২ মাসের জন্য তাদের তারল্যের চাহিদা মেটাতে পর্যাপ্ত।

 

তবে সংস্থাটির ঋণের বোঝাও বিশাল: প্রায় ১৭৩.৬ মিলিয়ন ডলার, যার মধ্যে ১৩৬.১ মিলিয়ন ডলারের একটি মেয়াদী ঋণ রয়েছে যার সুদের হার ১৩.৮৭%। এস-১ ডকুমেন্ট অনুযায়ী, আইপিও থেকে প্রাপ্ত অর্থ এই বিপুল পরিমাণ ঋণ পরিশোধের কাজে ব্যবহার করা হবে।

 

৩১শে মার্চের তথ্য অনুযায়ী, ফায়ারফ্লাইয়ের রাজস্ব ছিল ৫৫.৮ মিলিয়ন ডলার, যা ২০২৪ সালের একই সময়ের ৮.৩ মিলিয়ন ডলারের তুলনায় একটি বিশাল লাফ। এই রাজস্বের সিংহভাগ—প্রায় ৫০ মিলিয়ন ডলার—এসেছে "স্পেসক্রাফট সলিউশন" বা তাদের ব্লু ঘোস্ট ল্যান্ডার মিশন থেকে, এবং মাত্র ৫ মিলিয়ন ডলার এসেছে রকেট উৎক্ষেপণ থেকে। কিন্তু মহাকাশযান নির্মাণ একটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল উদ্যোগ, এবং ফায়ারফ্লাই এখনও প্রচুর অর্থ ব্যয় করছে: তাদের বিক্রয়ের খরচ বা ব্যয়িত অর্থের পরিমাণ ছিল রাজস্বের প্রায় সমান—প্রায় ৫৩ মিলিয়ন ডলার, যা মোট লাভ হিসেবে মাত্র ২.২ মিলিয়ন ডলার অবশিষ্ট রাখে।

 

২০২৪ অর্থ বছরে সংস্থাটির মোট লোকসান ছিল ২৩১.১ মিলিয়ন ডলার, যা ২০২৩ সালের ১৩৫.৫ মিলিয়ন ডলারের চেয়ে অনেক বেশি। এই বছরের প্রথম প্রান্তিকে তাদের মোট লোকসান ছিল ৬০.১ মিলিয়ন ডলার।

 

এত লোকসান সত্ত্বেও, সংস্থাটি সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের জানাচ্ছে যে তারা ভবিষ্যতে কেবল প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা দেখছে। তাদের হাতে বেশ কিছু বড় প্রকল্প রয়েছে যা এই দাবিকে সত্যি প্রমাণ করতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে প্রতিরক্ষা জায়ান্ট নর্থরপ গ্রুম্যানের সাথে একটি নতুন, পুনঃব্যবহারযোগ্য উৎক্ষেপণ যান 'এক্লিপ্স' (Eclipse) তৈরির জন্য বড় অংশীদারিত্ব, লকহিড মার্টিনের সাথে ২৫টি পর্যন্ত উৎক্ষেপণের চুক্তি এবং মহাকাশে পরিবহন পরিষেবার জন্য ডিজাইন করা 'ইলাইট্রা' (Elytra) নামক একটি নতুন মহাকাশযান লাইনের আসন্ন বাণিজ্যিক আত্মপ্রকাশ।

 

সংস্থাটি গ্রাহকদের শক্তিশালী চাহিদার কথাও উল্লেখ করেছে। ৩১শে মার্চ পর্যন্ত তাদের কাছে প্রায় ১.১ বিলিয়ন ডলার মূল্যের উৎক্ষেপণ অর্ডার এবং মহাকাশযান চুক্তি জমা রয়েছে, যা এক বছর আগের ৫৬০ মিলিয়ন ডলারের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। এই বৃদ্ধি এসেছে তাদের ছোট 'আলফা' রকেটের জন্য তিনটি মাল্টি-লঞ্চ চুক্তি এবং তাদের 'ব্লু ঘোস্ট' ল্যান্ডারের জন্য একটি অতিরিক্ত চন্দ্র ডেলিভারি চুক্তি থেকে।

 

নথিটিতে আরও বলা হয়েছে যে ফায়ারফ্লাই একটি "নিয়ন্ত্রিত সংস্থা" হিসেবে থাকতে চায়। এর অর্থ হলো, ২০২২ সালে ফায়ারফ্লাইয়ের বেশিরভাগ শেয়ার কিনে নেওয়া প্রাইভেট ইক্যুইটি ফার্ম 'এই ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্টনার্স' (AE Industrial Partners), শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পরেও সংস্থাটির উপর তাদের উল্লেখযোগ্য নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখবে। তথ্যসূত্র: টেকক্রাঞ্চ

 

ডিবিসি/জেআরওয়াই

আরও পড়ুন