উত্তর ইরাকের দুকান শহরের কাছে জাসানা নামক এক পাহাড়ি গুহায় শুক্রবার এই ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হয় বিশ্ব। কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি (PKK) এর ৩০ জন সদস্য সেখানে তাদের ব্যবহৃত অস্ত্রশস্ত্র একটি অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করে ধ্বংস করে। এই ঘটনা ছিল মূলত কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি(PKK) এর দীর্ঘদিনের কারাবন্দী নেতা আবদুল্লাহ ওজালানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সশস্ত্র সংগ্রাম থেকে সরে আসার একটি প্রতীকী পদক্ষেপ।
এই অস্ত্র ধ্বংস করার অনুষ্ঠানে কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি (PKK) এর সিনিয়র নেত্রী বেসে হোজাত একটি বিবৃতি পাঠ করেন। তিনি বলেন, "আমরা সদিচ্ছা এবং দৃঢ়তার প্রতীক হিসেবে আপনাদের উপস্থিতিতে স্বেচ্ছায় আমাদের অস্ত্র ধ্বংস করছি।" আবদুল্লাহ ওজালানও কারাগার থেকে পাঠানো এক ভিডিও বার্তায় এই পদক্ষেপকে "সশস্ত্র সংঘাতের পর্যায় থেকে গণতান্ত্রিক রাজনীতি ও আইনের পর্যায়ে একটি স্বেচ্ছামূলক উত্তরণ" এবং একটি "ঐতিহাসিক অর্জন" হিসেবে অভিহিত করেছেন। দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে চলা এই সংঘাতের অবসানে এমন একটি দৃশ্য ছিল অকল্পনীয়, যা এখন বাস্তব রূপ পেয়েছে। আগামী দিনগুলোতে তুরস্ক, ইরাক এবং ইরাকের কুর্দি আঞ্চলিক সরকারের সমন্বয়ে নির্ধারিত স্থানে আরও অস্ত্র সমর্পণ করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি (PKK) এর অস্ত্র সমর্পণের এই ঘটনাকে তুরস্কে এক নতুন যুগের সূচনা হিসেবে ঘোষণা করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান। শনিবার তার দল জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (একেপি)-এর এক সমাবেশে তিনি বলেন, "সন্ত্রাসের উপদ্রব শেষ হওয়ার প্রক্রিয়ায় প্রবেশ করেছে। কয়েক দশকের দুঃখ, কান্না এবং কষ্টের অবসান ঘটেছে। তুরস্ক গতকাল থেকে সেই পাতাটি উল্টে দিয়েছে।"
প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান আরও বলেন, "আজ একটি নতুন দিন; ইতিহাসে একটি নতুন পাতা খুলেছে। আজ এক মহান, শক্তিশালী তুরস্কের দরজা প্রশস্তভাবে খুলে দেওয়া হয়েছে।" তার এই বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে, তুরস্ক সরকার এই ঘটনাকে তাদের দীর্ঘদিনের নীতির একটি বড় বিজয় হিসেবে দেখছে। ৪০ হাজার মানুষের মৃত্যুর কারণ হওয়া এই সংঘাতের অবসান তুরস্কের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি, অর্থনীতি এবং সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য এক বিশাল ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। এরদোয়ানের এই ঘোষণায় দেশজুড়ে এক নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে।
তথ্যসূত্র:আল জাজিরা
ডিবিসি/জেআরওয়াই