বিনোদন, ঢালিউড

চিত্রনায়ক জসীমের মৃত্যুর ২৫ বছর

বিনোদন ডেস্ক

ডিবিসি নিউজ

রবিবার ৮ই অক্টোবর ২০২৩ ০৫:৩৮:০০ অপরাহ্ন
Facebook NewsTwitter NewswhatsappInstagram NewsGoogle NewsYoutube

প্রথমে ছিলেন খলনায়ক। তারপর ঘটনাচক্রে নায়ক হন। নায়ক হিসেবেই জনপ্রিয়তা পান। তার একটি বড় পরিচয়, তিনি ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৯৮ সালে ৮ অক্টোবর হঠাৎ না ফেরার দেশে চলে যান চিত্রনায়ক জসীম।

১৯৫০ সালের ১৪ আগস্ট ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার বক্সনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন জসীম। তার আসল নাম আবদুল খায়ের জসীম উদ্দিন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধে একজন সৈনিক হিসেবে ২ নম্বর সেক্টরে মেজর হায়দারের নেতৃত্বে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেন।

জসীম ১৯৭২ সালে অভিনয় শুরু করেন ‘দেবর’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। ১৯৭৩ সালে জহিরুল হকের ‘রংবাজ’ ছবিতে খলনায়ক চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। এ ছবির অ্যাকশন দৃশ্যগুলোও ছিল তার নিজস্ব প্রযোজনা সংস্থা জ্যাম্বস ফাইটিং গ্রুপের করা। এই ছবিতে অভিনয় করে তিনি চলচ্চিত্র পরিচালকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হলেও মূল পরিচিতি পান দেওয়ান নজরুল পরিচালিত ‘দোস্ত দুশমন’ চলচ্চিত্রে খলনায়ক চরিত্রে অভিনয় করে।

‘দোস্ত দুশমন’ ছবিটি হিন্দি সাড়াজাগানো ফিল্ম ‘শোলে’ ছবির রিমেক। ছবিতে জসীম গব্বার সিংয়ের চরিত্রে অভিনয় করেন। ওই সময় চলচ্চিত্র সাংবাদিকতা করতেন—এমন একাধিক বিনোদন সাংবাদিক জানান, ‘শোলে’ ছবিতে গব্বার সিংয়ের আদলে থাকা ভারতীয় খলনায়ক আমজাদ খান পর্যন্ত ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন জসীমের। তিনি দর্শকের মাঝে এতটাই প্রভাব ফেলেছিলেন যে, ‘আসামি হাজির’ ছবির ডাকু ধর্মার সঙ্গে ওয়াসিমের লড়াই দেখতে দর্শক সিনেমা হলের প্রবেশপথ ভেঙে ভেতরে ঢুকেছে, এমন ঘটনাও ঘটেছে। ‘লাইলী মজনু’ ছবির জসীম আরও ভয়ংকর, রাজ্জাক-ববিতার প্রেমের পথে কাঁটা।

কয়েক বছর পর সুভাষ দত্তের পরিচালনায় ‘সবুজ সাথী’ সিনেমায় প্রথম নায়ক হিসেবে অভিনয় করেন জসীম। এটি জনপ্রিয়তা পাওয়ায় পর খলনায়ক হিসেবে আর অভিনয় করেননি তিনি। বরং তিনি শোষিত, নিপীড়িত ও বঞ্চিত মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছেন পর্দায়। এই চলচ্চিত্রে তিনি নায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন এবং মৃত্যুর আগপর্যন্ত নায়ক হিসেবেই অভিনয় করেছেন।

জসীমই একমাত্র নায়ক, যিনি শাবানার সঙ্গে প্রেমিক ও ভাইয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন এবং দু’টি চরিত্রই দর্শকেরা খুব সাদরে গ্রহণ করেছিলেন। উদাহরণস্বরূপ, যে শাবানা ‘সারেন্ডার’ ছবিতে জসীমের স্ত্রী হিসেবে সফল হয়েছেন, সেই শাবানা ‘অবদান’, ‘মাস্তান রাজার’ মতন ছবিতে জসীমের বড় বোন হয়ে সফল হয়েছিলেন।

অল্পদিনের চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারে খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের প্রিয় নায়ক হন তিনি। তিনিই একমাত্র নায়ক, যিনি একাধারে ধুন্ধুমার অ্যাকশন দৃশ্য করে হাততালি কুড়িয়ে নিতেন আবার নায়ক হয়ে দর্শকদের আবেগে জড়াতেন, নীরবে অশ্রুবিয়োগের জন্য তার অভিনয় দাগ কাটে ঢাকাই ছবির দর্শকের মনে।

এই মানুষটি গত শতকের সত্তর দশকে বর্তমান বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে অ্যাকশন ধারার প্রবর্তক। ঢাকাই চলচ্চিত্রে ‘ফাইটিং গ্রুপ’-এর শুরুটা কিন্তু এই জসীমের হাত ধরেই। আজকের অনেক ফাইট ডিরেক্টর ও স্টান্টম্যান ছিলেন জসীমের ছাত্র।

খলনায়ক ও নায়ক দুই চরিত্রেই উজ্জ্বল নক্ষত্র জসীম। তার আঙ্গিক, বাচিক অভিনয়ের ধার ছিল যথেষ্ট। যে বয়সে অন্য অভিনেতারা নায়ক চরিত্র করতে সাহস পেতেন না কিংবা পরিচালকেরা নিতেন না, সেই বয়সে জসীম নায়ক হিসেবে দাপিয়ে বেড়াতেন ঢালিউডে। তার অভিনীত ছবিগুলো বাণিজ্যিকভাবে সফল হয়।

আশির দশকের সব জনপ্রিয় নায়িকার বিপরীতে অভিনয় করেছেন এই অ্যাকশন অভিনেতা। তবে শাবানা ও রোজিনার সঙ্গে তার জুটিই সবচেয়ে দর্শকপ্রিয়তা অর্জন করে। বিভিন্ন চলচ্চিত্রে তাকে শোষিত-বঞ্চিত মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে দেখা যায়।

জসীম প্রায় ২০০ সিনেমায় অভিনয় করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো- ‘তুফান’, ‘জবাব’, ‘নাগ-নাগিনী’, ‘বদলা’, ‘বারুদ’, ‘সুন্দরী’, ‘কসাই’, ‘লালু মাস্তান’, ‘নবাবজাদা’, ‘অভিযান’, ‘কালিয়া’, ‘বাংলার নায়ক’, ‘গরিবের ওস্তাদ’, ‘ভাইবোন’, ‘মেয়েরাও মানুষ’, ‘পরিবার’, ‘রাজা বাবু’, ‘বুকের ধন’, ‘স্বামী কেন আসামী’ ইত্যাদি।

জসীমের প্রথম স্ত্রী ছিলেন নায়িকা সুচরিতা। পরে তিনি ঢাকার প্রথম সবাক ছবির নায়িকা পূর্ণিমা সেনগুপ্তার মেয়ে নাসরিনকে বিয়ে করেন।

ডিবিসি/আরপিকে

আরও পড়ুন