১৯৭৯ সালে চুরি হয়ে যাওয়া যমজ মেয়েদের সঙ্গে সাড়ে চার দশক পর পুনরায় মিলিত হয়েছেন চিলির নাগরিক মারিয়া ভেরোনিকা সোতো। ৬৪ বছর বয়সী সোতো তাঁর ৪৬ বছর বয়সী মেয়ে মারিয়া বিট্রিস এবং অ্যাডেলিয়া রোজ মেরিউ চেসার সঙ্গে চিলির উপকূলীয় বিওবিও প্রদেশের কনসেপসিওন শহরে এই আবেগঘন মুহূর্তে মিলিত হন।
১৯৭৯ সালের ঘটনা। চিলির হুয়ালপেনে বসবাসকারী ১৯ বছর বয়সী মারিয়া ভেরোনিকা সোতো তাঁর আট মাস বয়সী যমজ মেয়েদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য একটি সরকারি ক্লিনিকে নিয়ে যান। ক্লিনিকে কর্তৃপক্ষ তাঁকে জানায়, বিস্তারিত পরীক্ষার জন্য মেয়েদের আরও কিছু সময় ক্লিনিকে রাখতে হবে। চিন্তিত সোতো জানতে পারেন, তাঁর মেয়েদের সঠিকভাবে খাবার না দেওয়ার অভিযোগে তাদের তাঁর কাছ থেকে নিয়ে নেওয়া হয়েছে। বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও মেয়েদের আর ফিরিয়ে দেওয়া হয়নি।
হতবাক হয়ে মারিয়া সোতো পুলিশের কাছে যান, কিন্তু তাঁকে আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। আদালতের মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন, তাঁর যমজ মেয়েদের ইতালির এক দম্পতি দত্তক নিয়েছে। এমনকি, তাদের জন্মসনদও পাল্টে ফেলা হয়েছে এবং সেখানে তাদের পিতৃমাতৃহীন হিসেবে দেখানো হয়েছে। তখন চিলিতে স্বৈরশাসক জেনারেল অগাস্তো পিনোশের শাসন চলছিল। এই অবৈধ দত্তক প্রক্রিয়া পিনোশের শাসনামলে হাজার হাজার শিশুর ক্ষেত্রে ঘটেছিল, যাদের বেশিরভাগকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল। এই শিশুরা 'দ্য চিলড্রেন অব সাইলেন্স' নামে পরিচিত।
মেয়েদের ফিরে পাওয়ার জন্য সোতোর দীর্ঘ লড়াই শুরু হয়। ২০২০ সালে তিনি একটি চিলিয়ান এনজিওর সঙ্গে যোগাযোগ করেন, যা অবৈধভাবে দত্তক নেওয়া শিশুদের তাদের আসল পরিবারের সঙ্গে পুনরায় মিলিত হতে সাহায্য করে। এনজিওর পরামর্শে সোতো দ্রুত ডিএনএ পরীক্ষা করান। তাঁর ডিএনএ নমুনা যুক্তরাষ্ট্রের একটি ডিএনএ ব্যাংকে পাঠানো হয়। পাঁচ বছর ধরে অপেক্ষার পর, চলতি বছরের মার্চে তাঁর এক মেয়ের ছেলে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে সোতোর সঙ্গে তার পারিবারিক সম্পর্ক খুঁজে বের করে।
এরপর সেই নাতি ফেসবুকের মাধ্যমে সোতোর সঙ্গে যোগাযোগ করে। মাত্র বিশ মিনিটের চেষ্টার পর তাঁরা একে অপরের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেন। সোতো জানান, তিনি কখনও মেয়েদের ফিরে পাওয়ার আশা ছাড়েননি, যদিও তিনি জানতেন না যে এর জন্য তাঁকে ৪৫ বছর অপেক্ষা করতে হবে। অবশেষে, ১০ সেপ্টেম্বর তাঁর দুই মেয়ে ইতালি থেকে চিলিতে ফিরে আসে। এক আবেগঘন মুহূর্তে মা ও দুই মেয়ের দীর্ঘদিনের বিচ্ছিন্নতার অবসান হয়। সোতো তাঁর মেয়েদের জড়িয়ে ধরে বলেন, ‘মা সবসময় তোমাদের খুঁজে বেড়িয়েছে।’
সূত্র: সিএনএন
ডিবিসি/এফএইচআর