কাঁধে সবুজ ট্যাসেল লাগানো স্কুল ইউনিফর্ম পরা দশম শ্রেণির ছাত্র ফারহান হাসান। পরীক্ষা শেষ করে বন্ধুদের সাথে কথা বলতে বলতে মাত্রই ক্লাসরুম থেকে বেরিয়েছিল সে। ঠিক তখনই বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ জেট বিমান আছড়ে পড়ে তার স্কুল ক্যাম্পাসে।
রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ২৭ জন নিহত ও ১৭০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।
বিবিসি বাংলাকে ফারহান বলে, "আমার চোখের সামনেই জ্বলন্ত বিমানটি ভবনে আঘাত করছিল।"
ফারহান তার বাবা ও চাচার পাশে দাঁড়িয়ে সেই ভয়ংকর মুহূর্তের বর্ণনা দেয়, "আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু, যার সাথে আমি পরীক্ষার হলে ছিলাম, সে আমার চোখের সামনেই মারা গেল।"
"আমার চোখের সামনে... বিমানটি ঠিক তার মাথার ওপর দিয়ে চলে যায়। আর অনেক অভিভাবক ভেতরে দাঁড়িয়ে ছিলেন, কারণ ছোট বাচ্চাদের স্কুল ছুটি হওয়ায় তারা বেরিয়ে আসছিল... বিমানটি সেই অভিভাবকদেরও সঙ্গে করে নিয়ে যায়।"
সশস্ত্র বাহিনী জানিয়েছে, সোমবার স্থানীয় সময় দুপুর ১টার কিছু পরে একটি প্রশিক্ষণের জন্য উড্ডয়নের পরেই এফ-৭ মডেলের জেট বিমানটিতে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়।
স্কুলটির শিক্ষক রেজাউল ইসলাম বিবিসিকে জানান, তিনি বিমানটিকে "সরাসরি" ভবনে আঘাত করতে দেখেছেন। আরেক শিক্ষক, মাসুদ তারিক, রয়টার্সকে বলেন, তিনি একটি বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছিলেন। "পেছনে ফিরে আমি শুধু আগুন আর ধোঁয়া দেখেছি... এখানে অনেক অভিভাবক ও শিশু ছিল।"
ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকায় দুর্ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পরেও বিশাল জনসমাগম দেখা যায়। মানুষজনকে ভবনের ছাদে উঠে দুর্ঘটনাস্থল দেখার চেষ্টা করতে দেখা যায়। চারদিকে ছোটাছুটির মধ্যেই অ্যাম্বুলেন্স এবং স্বেচ্ছাসেবকরা আহত ও নিহতদের মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে বের করে আনার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছিলেন। ঘটনাস্থল থেকে অন্তত ৩০টি অ্যাম্বুলেন্সকে হতাহতদের নিয়ে যেতে দেখা গেছে।
ঘটনাস্থলে তথ্যের জন্য অপেক্ষারত একজন নারী বিবিসিকে জানান, দুর্ঘটনার পরপরই তার ছেলে তাকে ফোন করেছিল, কিন্তু তারপর থেকে তিনি ছেলের সাথে আর যোগাযোগ করতে পারেননি।
ডিবিসি/এমইউএ